Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সঙ্কটময় পরিস্থিতেও বিরোধীদের ওপর দমন নিপীড়ন করছে সরকার -রিজভী

পচা চাল এনে ক্ষুধা নিয়ে সরকারের তামাশা

| প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : আফ্রিকা থেকে পচা গম আমদানি করে বহু বিতর্কের পর এবার সরকার থাইল্যান্ড থেকে পচা চাল আমদানি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, দেশের সঙ্কটময় পরিস্থিতেও সরকার বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের ওপর দমন নিপীড়ন চালাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‹আফ্রিকা থেকে পচা গমের পর এবার থাইল্যান্ড থেকে পচা চাল আমদানি করা হয়েছে। এমবি ‹থাই বিন বে› নামে একটি জাহাজে ১২ হাজার টন চাল ৩১ আগস্ট এবং এমভি ‹ডায়মন্ড› নামে আরেকটি জাহাজে ১৯ হাজার ৮৫০ টন চাল চলতি মাসে আনা হয় থাইল্যান্ড থেকে। গত দুই দিন আগে এই পচা চালের গোমর ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর এখন তোলপাড় শুরু হয়েছে চট্টগ্রামজুড়ে।› এসব চাল একেবারেই খাবার অনুপযোগী ও অত্যন্ত নিম্নমানের। আমরা মনে করি, খাদ্যের অনুপযোগী চাল বা গম সরবারহ করা সংবিধান পরিপন্থি। এর মাধ্যমে সরকার শুধুমাত্র সংবিধানবিরোধী কাজই করেনি, মানবতাবিরোধী কাজ করছে, জনগণের ক্ষুধাকে নিয়ে তামাশা করছে। খাদ্য বিভাগ ওইসব পচা চাল চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস না করার কথা বললেও জাহাজ দুটি বন্দরে নোঙর থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন রিজভী। ওএমএস›র আতপ চাল সম্পর্কে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‹নিম্ন আয়ের মানুষ খোলাবাজারে ওএমএসের আতপ চাল নিচ্ছে না। তারা যাতে এ চাল নেয় সেজন্য জোরজবরদস্তি করছেন ডিলাররা। এর পেছনে আরও খী কী রহস্য রয়েছে তা দ্রæত তদন্ত করে বের করা উচিত বলে আমরা মনে করি।›
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন পীড়ণে সরকারের বেপরোয়া শক্তি প্রয়োগ এখনো অব্যাহত রয়েছে। সরকার একচোখা দৈত্যের মতো আচরণ করছে এবং অবৈধ ক্ষমতার সিংহাসনে বসে কেউ কেউ পিশাচের হাসি হাসছেন। রাষ্ট্র সমাজের এখন এক দুঃসহ মাৎস্যন্যায় চলছে। ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্রের পথে না এলে তাদের পতনের বিউগল আপনা থেকেই বাজবে। বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামকে মিথ্যা মামলায় জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নিন্দা এবং অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
বিএনপি নির্বাহী কমিটির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানার পিত্রালয়ে পুলিশী তল্লাশি ও শিরিন সুলতানা কোথায় অবস্থান করছে জানতে চেয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে এবং বাড়ীর লোকজনের সাথে দুর্ব্যবহার, বৃহস্পতিবার মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক খলিলুর রহমান, শ্রীখোল ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি জহিরুল হক ও ইউপি সদস্য আওরঙ্গকে আওয়ামী লীগ কর্তৃক বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও বাড়িতে তল্লাশি এবং পুলিশী হামলা চলছে জানিয়ে এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
তিনি বলেন, পচা গমের পর এবার পচা চাল আমদানি করেছে সরকার। এ ঘটনার পেছনে সরকারের রাঘব বোয়ালরা জড়িত। তবে বর্তমানে ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটের পাশাপাশি সীমাহীন বেকারত্ব যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে কোনোভাবে দুর্ভিক্ষ ঠেকানো যাবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। রিজভী বলেন, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। কিন্তু খাদ্যের অনুপযোগী চাল বা গম সরবরাহ করা সংবিধান পরিপন্থী। এর মাধ্যমে সরকার শুধু সংবিধান বিরোধী কাজই করেনি, মানবতাবিরোধী কাজ করছে, জনগণের ক্ষুধাকে নিয়ে তামাশা করছে। লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, থাইল্যান্ড থেকে দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করা প্রায় ৩২ হাজার ১৪০ টন চাল নিয়ে দুটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এরমধ্যে এমভি থাই বিন বে নামের একটি জাহাজ ১২ হাজার ২৯০ টন চাল নিয়ে ৩১শে আগস্ট এবং এমভি ডায়মন্ড-এ নামের অপর চালবাহী জাহাজ আসে চলতি মাসের ১ তারিখ। এতে ১৯ হাজার ৮৫০ টন চাল রয়েছে।
গত দুদিন আগে ফাঁস হয় পচা চালের গোমর। চালগুলো একবারেই খাওয়ার অনুপযোগী এবং অত্যান্ত নি¤œমানের। ব্যবসায়ীরা এ কথা বললেও খাদ্য বিভাগ বলছে অত্যন্ত নিম্নমানের। খাদ্য বিভাগ চালগুলো ফিরিয়ে নিতেও বলেছে থাইল্যান্ডের এ জাহাজ দুটিকে। কিন্তু জাহাজের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা চাল ফেরত না নিয়ে চালগুলো বেসরকারিভাবে হলেও বিক্রি করে যাবেন। গত মঙ্গলবার থেকে তারা যোগাযোগ করেন চট্টগ্রামসহ দেশের বেশ কয়েকটি চাল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এরপর থেকে পচা চাল নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় চট্টগ্রামজুড়ে। প্রায় এক মাস আগে থাইল্যান্ড থেকে পচা গমের চালান আসার পরও এখনো জাহাজ দুটি চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় থাকায় একটি জিনিস পরিস্কার যে, এর পেছনে সরকারের রাঘব বোয়ালরা জড়িত। রিজভী বলেন, গত ২০ দিন ধরে পচা চাল খালাসের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ নিয়ে যেন কোনো বুমেরাং না হয় তাই সরকারের খাদ্য বিভাগ ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অনেকটা গোপনে কাজ করে গেছেন। কোনো কারণে ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এখন তা হজম করতে পারছেনা। তাই বেসরকারিভাবে হলেও চাল বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিদেশি দুটি জাহাজের সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু প্রশ্ন হলো সরকারিভাবে আমদানি করা চাল বেসরকারিভাবে বিক্রির চেষ্টা কেন? এখানেই খটকা। হাওরে বন্যার অজুহাতে চালের সঙ্কট দেখিয়ে সরকার থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি শুরু করে। ১৩ই জুলাই থেকে এ পর্যন্ত সরকারি- বেসরকারি খাতে আমদানি করা চালবাহী ১৬টি জাহাজ বন্দরে এসেছে। এসব জাহাজে আনা হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার টন চাল। এর মধ্যে থাইল্যান্ডের পচা চালবাহী জাহাজ দুটিও রয়েছে। পচা চালের খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে পুর্বের আমদানি করা চালগুলোও নি¤œমানের কী না ?
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, গণমাধ্যমে খবর বের হচ্ছে বর্তমানে নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য খোলাবাজারে ওএমএসের আতপ চাল নিচ্ছেনা ক্রেতারা। তারা যাতে এ চাল নেয় এজন্য জোরদবরদস্তি করছেন ডিলাররা। আসলে এর পেছনে আর কি কি রহস্য রয়েছে তা দ্রæত তদন্ত করে বের করা উচিত। তিনি বলেন, ইতোপুর্বে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গম কেলেঙ্কারির কথা নিশ্চয়ই দেশবাসী ভুলে যায়নি। খাদ্য অধিদফতর ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটদের মাধ্যমে সে সময় ব্রাজিল থেকে ৪০০ কোটি টাকায় ২ লাখ ৫ হাজার ১২৮ মেট্রিক টন পচা গম আমদানি করা হয়েছিল। বিষয়টি তখন উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ালে উচ্চ আদালত পচা গম কেলেঙ্কারি তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশনা দিলেও আজো সে তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্য হাস্যকর ও র্নিলজ্জ মিথ্যাচার। সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা কিভাবে প্রধান বিচারপতিদের বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন তা মানুষ ভুলে যায়নি। রোহিঙ্গাদের ওপর মানবতাবিরোধী রক্তাক্ত উৎপীড়ণের মর্মস্পর্শী ইস্যুটির চেয়েও ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে খিস্তিখেউর প্রাধান্য পেল ক্ষমতাসীনদের কাছে। এটা যেন তাদের কাছে জাতির মরা বাঁচার ব্যাপার। অথচ চাল সঙ্কট ও খাদ্য নিরাপত্তা সংসদের আলোচনায় গুরুত্ব পেলনা, সত্যিকার অর্থে যেটা জনসাধারণের মরা বাঁচার বিষয়। আদালত কর্তৃক সময় বেঁধে দেয়ার পরও কিভাবে আপনারা মাসের পর মাস সেটিকে আটকিয়ে রাখছেন সেটাও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে। অর্থাৎ একদলীয় শাসনের যে বিষবৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে সেটির গোড়ায় পানি ঢেলে তরতাজা করার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর সরকার হামলা চালাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ভোটারবিহীন সরকারের ভয়াবহ দু:শাসন ও লুটেরা নীতির কারণে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ এখন শুন্যের কোঠায়।
এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ