পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাফিংটন পোস্ট : আফগানিস্তানে আমেরিকান উপস্থিতি যত বৃদ্ধি পেয়েছে আফগানদের আশাবাদও তত বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় নেতারা আমেরিকানদের ডাকা তথ্যমূলক সভায় যোগ দেন। তারা ইসলামী মানদন্ডে নাপাক আগ্রাসী সামরিক কুকুরদের ব্যাপারে কখনো অভিযোগ করেননি যারা তাদের বাড়িঘরে তল্লাশি চালিয়েছে ও কুকুর দিয়ে গা শুঁকিয়েছে। তারা তাদের দেশে আেেমরিকানদের সর্বোাত্তম রাজনৈতিক ব্যবস্থা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা শুনেছে। সেখানে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান, বিনিয়োগ, সমৃদ্ধি, শান্তি ও সর্বোপরি উন্নতি নিয়ে কথা হয়েছে।
দ্বিতীয় বছরের শেষের দিকে এ রকম একটি সভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। এক আফগান উঠে দাঁড়াল ও দু’টি বিব্রতকর প্রশ্ন করলঃ আপনারা আমাদের যে অর্থের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন তা কোথায়? উন্নতিই বা কোথায়? মার্কিন রাষ্ট্রদূতের তৈরি জবাব ছিলঃ প্রতিশ্রæত তহবিল আমেরিকার অফিস প্রতিষ্ঠায় (তাপসঞ্চার ব্যবস্থা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, ইন্টারনেট, পূর্ত কর্ম) এবং যারা চূড়ান্ত ভাবে প্রতিশ্রæত উন্নয়নের ব্যবস্থা করবেন সেই আমেরিকান বিশেষজ্ঞের বেতন, মানবাধিকার ও নারী উন্নয়ন বাবদ ব্যয় করা হচ্ছে।
নারীদের কথা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ২০০৫ সালে মার্কিন ফার্স্ট লেডি লরা বুশ কাবুল বিশ^বিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য পুনঃসজ্জিত একটি ডরমিটরি হস্তান্তর উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত সফরে আসেন। এটা ঠিক যে বুশ প্রশাসন আফগান নারীদের মুক্ত করেছে। সে সময় নিরাপত্তার জন্য ¯œাইফার কুকুর পাঠানো হয় ও মেয়েরা অশ্রæভরা চোখে তাদের নাপাক কাপড় পুড়িয়ে ফেলে।
২০১১ সাল নাগাদ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর আফগানিস্তানে তাদের লক্ষ্য অর্জনের তালিকা থেকে নারী অধিকারের বিষয় বাদ দেয়, মানবাধিকারও কিভাবে যেন সে তালিকা থেকে অদৃশ্য হয়। তারপর থেকে আমেরিকান রাষ্ট্রদূতরা আফগান নেতাদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে অনেক সময় পেরিয়েছে। তারা আর ধৈর্য ধরতে পারছেন না।
বিশেষজ্ঞের কথা
তখন থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রায় প্রতি বছরই আমি আফগান নারী ও বালিকাদের সংঠনগুলোর সহযোগিতার জন্য আফগানিস্তানে গেছি। আজ দু’বছর আমি সেখানে যাই না। তা এ কারণে নয় যে আমি একজন আমেরিকান, বরং এ জন্য যে আমি আমার আফগান সহকর্মী ও তাদের পরিবারদের জন্য এক ঝামেলা।
বছরের পর বছর কুকুরগুলোর মত আফগানদের সাথে অপমানজনক ব্যবহার বৃদ্ধি, মার্কিন সৈন্যদের শূকরের মাংস খাওয়া ও আফগান সৈন্যদের তা খেতে বলা,অথবা গ্রাম, হাসপাতাল, বরযাত্রী দল এবং আফগান জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বিরামহীন বোমাবর্ষণ আমেরিকানদের অজনপ্রিয় ও তাদের আফগান বন্ধুদের লক্ষ্যবস্তু করে তুলেছে।
আফগানিস্তানে মার্কিন সংশ্লিষ্টতার ইতিহাস দীর্ঘ। যেমনঃ ২০০১ সালে তালিবান সরকারকে আত্মসমর্পণ করার কোনো সময় না দিয়ে কিংবা তাদের সমস্যা সৃষ্টিকারী বিদেশী অতিথি ওসামা বিন লাদেনের আত্মসমর্পণ বিষয়ে কোনো আলোচনা না করে বোমাবর্ষণ শুরু করে। তারপর বুশ প্রশাসন উগ্র রক্ষণশীল ইসলামী মুজাহিদিন যুদ্ধবাজ নেতাদের কাছে ক্ষমতা প্রদান করে যারা প্রথমে সিআইএ পরিচালক বিল কেসির অধীনে নিযুক্ত হয়েছিল ’৮০-র দশকে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। ২০০১ সালে আফগানরা এসব যুদ্ধবাজ নেতা ও যুদ্ধাপরাধীদের চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দেয়। যাহোক, ওয়াশিংটন বিপুল অর্থের বিনিময়ে মনোনীত নেতাদের নিয়ে কাবুলে একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করে যারা আফগানিস্তানকে একটি প্রশাসনিক রাষ্ট্রে পরিণত করে। কিন্তু আফগানিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বদলে বিকাশ লাভ করেছে দুর্নীতি। এই হচ্ছে আফগানিস্তানকে মুক্ত করা।
আফগানিস্তানে গত ১৫ বছরের ইতিহাস হচ্ছে এ ধরনের বিতর্কিত ও স্ব-পরাজয়মূলক কর্মকান্ড। এ সময় আেেমরিকার কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে তাদের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে অপদস্থ করে। তারা কাবুলে একটি কেন্দ্রীভূত সরকার প্রতিষ্ঠা করে। তারপর তারা মার্কিন সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত প্রাদেশিক পুনর্গঠন টিমের মাধ্যমে সরকারের শত্রæ এক দল প্রাদেশিক যুদ্ধবাজকে সমর্থন করে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালাতে সৈন্যবাহিনী পাঠায় অন্যদিকে কখনো আত্মসমর্পণের সুযোগ না দেয়া তালিবান পুনর্গঠিত হয়ে যুদ্ধ শুরু করে। ২০০৭ সালে তারা তালিবানের সাথে শান্তি আলোচনার আফগান প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করে। পরিবর্তে আফগানিস্তানে সৈন্যবৃদ্ধি করে। ২০০৮ সালে মার্কিন সৈন্য সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়। তারা মার্কিন করদাতাদের উপর ব্যয়ের বোঝা (৬৫ বিলিয়ন ডলার) চাপিয়ে দেয় যা দিয়ে লাখ লাখ আফগান সৈন্য ও পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
২০০৬ সালে ‘কাবুল ইন উইন্টার’ নামে আমি একটি বই প্রকাশ করি যাতে আংশিক ভাবে আমার দেখা মার্কিন সামরিক বাহিনীর দ্বারা বা তাদের নামে সংঘটিত দুনীতি, বেসরকারী মার্কিন কন্ট্রাক্টরদের নির্বাচিত ক্রুদের আফগানিস্তান ছেয়ে ফেলা ও মার্কিন উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএইড) বিচ্ছিন্ন প্রায় বিশেষজ্ঞদের সম্পর্কে লিখেছি। এর অল্পদিন পর এক এক বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা এক চিকিৎসক আফগান মহিলা ও দেশের এক পার্লামেন্ট সদস্যকে, সে সাথে আনন্দ গোপাল ও আমাকে ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণ জানান। পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়নে ভূমিকা আছে ওয়াশিংটনের এমন বিভিন্ন প্রভাবশালী থিংক ট্যাংকের সামনে আমাদেরকে আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে হয়।
আমরা আালোচনার জন্য তৈরি হয়েই এসেছিলাম , কিন্তু ওয়াশিংটনের এ বিশেষজ্ঞরা আমাদের কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। বরং তারা যে দেশটি আমরা ছেড়ে এসেছি সে দেশ সম্পর্কে কি করা যায় তা নিয়ে আমাদের সাথে কথা বললেন। আমার মনে আছে আমরা একটি প্রগতিবাদী নেতৃস্থানীয় থিংকট্যাংকে নতুন আইভি লীগ বিশেষজ্ঞ ৪ তরুণ আমেরিকানের সাথে সাক্ষাত করি। তারা আফগানিস্তানে ২০ বছর মেয়াদী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনার বিশদ বর্ণনা করেন। তারা একদিন দেশটি সফরের আশা ব্যক্ত করেন। আফান ডাক্তার মহিলা শেষ পর্যন্ত হেসে ওঠেন, তবে তিনি মুগ্ধ হননি। তিনি বলেন, আপনারা আমাদের দেশ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ভবিষ্যত পরিকল্পনা করছেন। এটা কি আপনাদের কাজ? এটা ছিল দু’টি মার্কিন প্রশাসনের কাজ এবং এখন তা তৃতীয় প্রশাসনে গড়িয়েছে। (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)
*নিবন্ধকার অ্যান জোনস হাফিংটন পোস্টের প্রদায়ক ও ‘দে ওয়্যার সোলজার্স : হাউ দি উন্ডেড রিটার্ন ফ্রম আমেরিকা’স ওয়ারসÑ দি আনটোল্ড স্টোরি’ গ্রন্থের লেখিকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।