Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশের সমৃদ্ধির অংশীদার হোন

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জাতি সংঘের চলতি সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্থানীয় সময় ভোরের দিকে ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। সাধারণ পরিষদের চলতি এ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী মায়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর বর্বরচিত হামলা-নির্যাতনে আত্মরক্ষার্থে লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ ও উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরার কথা। এদিকে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমেরিকার শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বিসিআইইউ) আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দল ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত দুই দেশের সম্পর্ক বিকশিত হয়ে চলেছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সর্বোত্তম সম্পর্ক উপভোগ করছে। তিনি বলেন, সরকার ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করছে এবং এ বিষয় আপনাদের কাছে তুলে ধরতে চাই। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন আমাদের ঘনিষ্ট অংশীদার।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য গত বছর মোট ৭ বিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে, এতে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক প্রতিফলিত হয়। তবে এই সম্পর্ক স¤প্রসারণের পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, তবে কিছু ক্ষেত্রে হোচট খাওয়ায় এই সম্ভাবনা প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছানো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশী পোশাকের ওপর অত্যন্ত উচ্চ শুল্ক আরোপ। তিনি আরও বলেন, এলডিসিভুক্ত বেশিরভাগ দেশ বিভিন্ন অগ্রাধিকার স্কিমের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে। উচ্চ শুল্কের কারণে শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্ত এলডিসি দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। এমনকি কিছু উন্নয়নশীল দেশ এজিওএর অধীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে। এই ক্ষেত্রে সকল প্রতিযোগীদের সমতার সুযোগ দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দোহা রাউন্ডের অঙ্গীকর অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সকল উন্নত দেশ এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশ এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিয়েছে। তিনি বলেন, দারিদ্র্য নিরসন পুষ্টি, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসিত হচ্ছে। আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্তে¡ও বাংলাদেশ গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে। গত দুই বছরে এই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মাথাপিছু আয় ৮০ শতাংশ বেড়ে ১৬০০ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৭ শতাংশে ধরে রেখেছে। রফতানি আয় বেড়ে ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ দাঁড়িয়েছে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে বর্তমানে ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ (পিপিপি ভিত্তিক) এবং এ দেশের বার্ষিক জিডিপিতে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমান ১ দশমিক ৫ শতাংশের কম। বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি বলেন, প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক এই বাংলাদেশের অভিন্ন জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশের বয়স ৪০ বছরেরও কম এবং তাদেরকে প্রতিযোগী মজুরিতে পাওয়া যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সারাদেশে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেখানে বিনিয়োগকারিরা একই স্থান থেকে সব ধরনের সেবা পাবেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারি দেশ এবং ২০০৯ সালে আমার সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির ধারায় গত বছর বিদেশী বিনিয়োগ ২০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে। এরমাধ্যমে বিদেশীদের বিনিয়োগকারিদের আস্থা প্রতিভাত হয়েছে। গত ৭ বছরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগও একশ’ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে।
তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ সহজতর করতে আমরা অবকাঠামো এবং বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি। বলেন, অস্ত্র ও গোলাবারুদ, পারমানবিক শক্তি, বনায়ন ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং ছাড়া অন্য সব খাত বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জন্য উন্মুক্ত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রূপকল্প-২০২১ মোতাবেক এদেশ এখন একটি শিল্পোন্নত, ডিজিটাল, মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার পথে রয়েছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এই লক্ষ্যে অর্জনে বাংলাদেশের প্রয়াসে বিনিয়োগ, বাণিজ্য, এবং সমৃদ্ধির অংশীদার হতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের পারষ্পরিক লাভজনক ব্যবসা দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরও জোরদার করে চমৎকার পর্যায়ে উন্নীত করবে।
ইউটিসি অ্যাসোসিয়েটসর সিইও আজিজ আহমেদ, ওয়ালমার্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট পল ডাইক, ওআরবিআইএসর প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা (সিডিও), গভর্নমেন্ট রিলেশনস এন্ড কমিউনিকেশনস অফিসার টেমার ইউনিস, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ভারপ্রাপ্ত বিশেষ প্রতিনিধি অ্যালিস জি ওয়েলস, স্কাইপাওয়ারের সিনিয়র পরিচালক মারিয়া বোরোবিয়েভা, পাওয়ারপ্যাকের রন সিকদার, এফইডিএকসের ডেভিড শর্ট, স্কট প্রাইস অব ওয়ালমার্ট ইন্টারন্যাশনালের জে প্রেয়র, কোকা কোলা পরিচালক মিসি ওয়েনস, শেভরন ম্যানেজার জে জে অঙ, কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের চৌধুরী নাফেজ শরাফত, ডেনহাম ক্যাপিটালের সৌরভ আনন্দ, ম্যালারটি অ্যাসোসিয়েটসের রবার্ট ও বেøক (জেআর), ইলিকট ড্রিডগেজের পিটার বোওয়ি, মটোরোলা সলিউশনের রিচার্ড ব্রেচার, এপিআর এনার্জির জন চ্যাম্পিয়ন, উবার টেকনোলজির আশহাউনি চানপরা অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ, এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ব্যবসায়ী নেতারা মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ