পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন অভিযানের অবসান দেখতে চাই। রোহিঙ্গা মুসলমান ভাই-বোনদের এই দুর্দশার অবসান চাই। এই সঙ্কটের সূচনা হয়েছে মিয়ানমারে এবং সেখানেই এর সমাধান হতে হবে।
মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) কনট্যাক্ট গ্রুপের বৈঠকে মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের সামনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় নির্যাতন বন্ধ করে 'সেইফ জোন' তৈরিসহ ছয়টি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ারও প্রস্তাব দিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবগুলো হল-
১. রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সব ধরনের নিপীড়ন এ মুহূর্তে বন্ধ করতে হবে।
২. নিরপরাধ বেসামরিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী-শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য মিয়ানমারের ভেতরে নিরাপদ এলাকা (সেইফ জোন) তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে তাদের সুরক্ষা দেয়া হবে।
৩. বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বাস্তুচ্যুত সব রোহিঙ্গা যেন নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে কফি আনান কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে চিহ্নিত করার যে রাষ্ট্রীয় প্রোপাগান্ডা মিয়ানমার চালাচ্ছে, তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
৬. রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে না ফেরা পর্যন্ত তাদের জরুরি মানবিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে হবে ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশগুলোকে।
ওআইসি কনট্যাক্ট গ্রুপের বৈঠকে বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারে আজ মুসলমান ভাইবোনেরা জাতিগত নির্মূল অভিযানের মুখোমুখি হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের চালানো সামরিক অভিযান বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। ফলে গত ২৫ আগস্ট থেকে চার লাখের বেশি মানুষ মিয়ানমার থেকে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে এবং শরণার্থীদের ৬০ শতাংশই শিশু।
শেখ হাসিনা বলেন, এটি এক অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয়। আমি নিজে তাদের কাছে গেছি, তাদের মুখ থেকে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ভয়াবহ দুর্ভোগের বিবরণ শুনেছি। আমি বলব, আপনারা সবাই আসুন- এই শরণার্থীদের মুখ থেকে শুনে যান, মিয়ানমারে কী রকম নির্মমতা চলছে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানান, গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশে চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রিত রয়েছে। এবার নতুন করে শরণার্থীর ঢল নামায় মোট শরণার্থীর সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তবে ভূমি স্বল্পতা আর সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশ শরণার্থীদের আশ্রয়, খাবার ও জরুরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
রোহিঙ্গাদের ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী’ বলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যে দাবি করছে তা তাকে অপপ্রচার আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঐতিহাসিক নথিপত্র বলছে- রোহিঙ্গারা শত শত বছর ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসছে।
রোহিঙ্গাদের পদ্ধতিগত নির্যাতন করার বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার পরিকল্পিত ও সংগঠিত উপায়ে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বের করে দিচ্ছে। প্রথমত তারা নিবন্ধিত জাতিগোষ্ঠীর তালিকা থেকে রোহিঙ্গাদের বাদ দিয়েছে। তারপর ১৯৮২ সালের আইনে তাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশেই আইডিপি ক্যাম্পে পাঠিয়েছে তারা।
রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে গেলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দিচ্ছে না বলে মুসলিম দেশের নেতাদের জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আপনারা হয়তো মিডিয়ায় দেখেছেন- রোহিঙ্গারা যাতে তাদের নিজের দেশে ফিরতে না পারে সে জন্য সীমান্ত জুড়ে ভূমি মাইন পেতে রাখছে মিয়ানমার।
রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলায় ওআইসির সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ বিষয়ে ওআইসির যে কোনো উদ্যোগে অংশ নিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে। তারা বেসামরিক রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি করছে এবং তাদের গ্রামগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতাকে জাতিগত নিধন অভিযান বলে আখ্যা দিয়ে বলছে- এ পর্যন্ত তিন হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে এবং প্রায় চার লাখ ২৬ হাজার মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।