পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নড়াইল জেলা সংবাদদাতা : নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রায় ৪ মাস ধরে বাড়ি ছাড়া অন্তত ৪০০ নারী, পুরুষ ও শিশু-কিশোর। শুধু বাড়িছাড়া নয়, প্রতিপক্ষের লোকজন এসব পরিবারের বসত ঘর থেকে শুরু করে রান্নাঘর, গোয়ালঘর ভেঙ্গেচুরে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে এসব পরিবারের বিছানাসহ আসবাবপত্র। ভয় ও আতঙ্কে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় যেতে পারছে না বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। বন্ধ রয়েছে লেখাপড়া। কোনো কোনো পরিবারের শিশু ও নারীরা দিনের বেলা বাড়িতে আসলেও রাতের বেলা থাকতে পারছেন না। পেড়লী গ্রামের এসব পরিবারে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার আনন্দ-উৎসব হয়নি। এছাড়া চারমাস ধরে বাড়িঘরে লুটপাট চলছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতেও পেড়লী গ্রামের মিঠু শিকদারের বাড়িতে লুটপাট হয়েছে। দুর্বৃত্তরা তালা ও গ্রিল ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে রঙিন টেলিভিশন, বঙ্খাট, কম্বল, হাড়ি-পাতিল, গ্যাসচুলা, স্বর্ণের কানের দুল, গলার হার, আংটিসহ প্রায় আড়াই লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে জানিয়েছেন তার (মিঠু) আত্মীয়-স্বজনেরা। ভয় ও আতঙ্কে মিঠু শিকদারের পরিবারের সদস্যরা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন বলে জানা গেছে। তবুও তাদের ঘরের গ্রিল কেটে মোফাজ্জেল গ্রæপের লোকজন লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া গত চার মাসে অন্তত ৭০টি বাড়িতে লুটপাট করা হয়েছে।
জানা যায়, ইউনিয়ন নির্বাচন (ইউপি) পরবর্তী সহিংসতার জের ধরে এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ২৫ মে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষে কালিয়া উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি পেড়লী গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেন (৫০) নিহত হন। এর আগে ২৩ মে পেড়লী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নিহত মোফাজ্জেল হোসেন চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী আ’লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী জারজিদ মোল্যার সমর্থক ছিলেন। এখানে আ’লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন ইকবাল পরাজিত হন। মোফাজ্জেল হত্যাকান্ডের পর পেড়লী গ্রামে প্রতিপক্ষের অন্তত ৭০টি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাঁকা দালান ঘর ও টিনের ঘরগুলো ভেঙ্গে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও বিধ্বস্ত ঘরগুলো এলোমেলো ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া ২০০ গরু, ৩০০ ছাগল ও হাজারো হাঁস-মুরগি, ধানসহ অন্যান্য ফসল এবং সংসারের বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বইখাতাসহ শিক্ষা উপকরণ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ২ কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট এবং খোয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পেড়লী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি আনিসুল ইসলাম বাবুসহ ক্ষতিগ্রস্থরা।
ঘটনার প্রায় চার মাস পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার) বিকেলে পেড়লী গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘর ও আসবাবপত্রের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। পেড়লী গ্রামের কিবরিয়া মোল্যার স্ত্রী হেলেনা বেগম বলেন, প্রতিপক্ষের ভয় ও আতঙ্কে কেউ একদন্ড বাড়িতে দাঁড়াতে পারে না। আমরা চার মাস ধরে বাড়িছাড়া। সাংবাদিকদের আগমনের বিষয়টি জানতে পেরে বাড়িতে এসেছি। আপনারা (সাংবাদিক) চলে গেলে, আবার বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র যেতে হবে। জেসমিন খানম বলেন, আমার এক ছেলে কলেজে (এইচএসসি) এবং আরেক ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু, প্রতিপক্ষের হামলা-মামলার ভয়ে চারমাস ধরে স্কুল, কলেজে যেতে পারছে না। পড়ালেখা বন্ধ রয়েছে তাদের। রেজাউল মোল্যার স্ত্রী হেমেলা জানান, তার ছেলে এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী। কিন্তু বাড়িঘরে থাকতে না পারায় পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছে না। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা সংশয় রয়েছে। প্রতিপক্ষের ভয়ে তার স্বামী ও ছেলে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এছাড়া তাদের পরিবারের ধানসহ সব লুট করে নিয়ে গেছে মোফাজ্জেল সমর্থকরা। গৃহবধূ কাকলী জানান, বাড়িঘরে নারী, পুরুষ, শিশু কেউই নিরাপদ নয়। ফাজেল আহম্মেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিমলা বলে, আমাদের এখানে দুই ঈদে কোনো আনন্দ হয়নি। প্রতিটি ঘরে হাহাকার আর শূণ্যতা। সিমলা জানায়, লুটপাটের সময় বইখাতাসহ তাদের তিন ভাইবোনের সব শিক্ষা উপকরণ ভেঙ্গে এবং ছিড়ে নষ্ট করে ফেলেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
এ পরিস্থিতিতে এলাকার সচেতনমহল বলেন, পেড়লী গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে। অশান্ত পেড়লীকে বসবাস যোগ্য করে তোলার জন্য সবার আন্তরিকতা ও সহযোগিতা প্রয়োজন। তারা বলেন, ক্ষতিগ্রস্থদের বেশির ভাগই আ’লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থক। তবুও এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় এই সংগঠনের (আ’লীগ) নেতাদের তেমন কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। এতে করে এ এলাকার সাধারণ মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
পেড়লী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জারজিদ মোল্যা দাবি করে বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পেড়লী গ্রামে দুইপক্ষের সংঘর্ষে মোফাজ্জেল হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তবে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউনিয়নের কোথাও কোনো বাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি। এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে, মোফাজ্জেল হত্যাকান্ডের দু’দিন পর ২৭ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আহত অপর আ’লীগ নেতা (ওয়ার্ড আ’লীগের সহ-সভাপতি) পেড়লী গ্রামের বদরুল ইসলাম (৫১)। বদরুল মোফাজ্জেল গ্রæপের প্রতিপক্ষের লোক ছিলেন। এলাকাবাসী জানান, মোফাজ্জেল হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রতিপক্ষের সমর্থকদের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও বদরুল সমর্থকরা মোফাজ্জেল সমর্থকদের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেননি। এমন কী তারা বাড়িঘরে আসার সুযোগ পাচ্ছেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।