Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা সঙ্কট আড়াল করতেই সম্পদ পাচারের মিথ্যা অভিযোগ -রিজভী

| প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রোহিঙ্গা সঙ্কট আড়াল করতেই প্রধানমন্ত্রী জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে সম্পদ পাচারের মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা প্রতিদিন মরছে ক্ষুধায়, চিকিৎসার অভাবে, আশ্রয়ের অভাবে; কোনো ছায়া নেই। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি যাতে আন্তর্জাতিকভাবে কেউ জানতে না পারে, দেশের মানুষ জানতে না পারে, সেটাকে আড়াল করার জন্য হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী বলে বসলেন যে, ১২শ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। গতকাল (শুক্রবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, জনদৃষ্টিকে ভিন্নদিকে সরানো জন্য মাঝে-মধ্যে ছু‘-মন্থর দেন শেখ হাসিনা; যাতে এটা নিয়ে মানুষ ব্যস্ত থাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক বলে আখ্যায়িত করে রিজভী বলেন, পদ্মাসেতুতে সুনির্দিষ্টভাবে একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি বিদেশি আর্থিক সংস্থা অভিযোগ তুলল এবং সেই সংস্থা এখন পর্যন্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করেননি। আর আপনি (প্রধানমন্ত্রী) তাকে বললেন দেশপ্রেমিক। আপনি দুর্নীতির চাষ-বাস থেকে শুরু করে, দুর্নীতির উৎপাদন থেকে শুরু করে দুর্নীতির এত বড় পৃষ্ঠপোষক পৃথিবীতে আর কেউ নেই। পদ্মা সেতু নির্মাণের পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ২০১১ সালে অর্থায়ন থেকে সরে যায় বিশ্বব্যাংক। তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে নেমে কোনো প্রমাণ পায়নি বলে জানায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। একই ঘটনায় কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের বিরুদ্ধেও সেদেশে একটি মামলা করে বিশ্বব্যাংক। কিছুদিন আগে দুর্নীতির প্রমাণ না পাওয়ায় সে মামলাও খারিজ করে দেয় কানাডার আদালত। বাংলাদেশ নাগরিক সংসদ আয়োজিত এ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনরা দেশ থেকে ৮৬ হাজার কোটি টাকার পাচার করেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা রিজভী। তিনি বলেন, আপনি আজকে জোর করে ক্ষমতায় আছেন, এই জোর করে ক্ষমতায় থাকার কারণই তো হচ্ছে ১ টাকার কাজকে আপনি ১০০ টাকা করেছেন বিভিন্ন প্রজেক্টে, মেগা প্রজেক্টের নামে। সেই সব প্রকল্পের টাকা কোথায়? সেটা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন তারা হিসাব-নিকাশ করে প্রায় বলেছে যে, ৮৬ হাজার কোটি টাকা শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্টজনরা এখান (বাংলাদেশ) থেকে পাচার করেছে। এবিষয়ে বাংলাদেশে কেউ কথা বলতে পারছেন না অভিযোগ এনে রিজভী বলেন, যারা এসবের গবেষণা করেন, তারা ভয়ে সেটা তুলতে পারছেন না। কিন্তু বাইরের গণমাধ্যম বা বাইরের গবেষকরা তো চুপ করে বসে নেই, তারা সেটা অবলোকন করছে, তারা দেখছেন। ক্ষমতাসীন দলের অন্যদের বাদ দিলাম, শুধু আপনার ঘনিষ্টজনরা যত টাকা নিয়ে গেছে সেই টাকার একদিন জনগনের কাছে হিসাব দিতে হবে। হঠাৎ করে ফের গুম ও ক্রসফায়ার বেড়েছে দাবি করে এর পেছনে সরকারের অশুভ পরিকল্পনা রয়েছে বলছেন এই বিএনপি নেতা।
বরিশালের সাবেক সাংসদ জহিরউদ্দির স্বপনের গ্রামের বাড়িতে হামলা-ভাংচুরের ঘটনাসহ নওগাঁও, মুন্সিগঞ্জ, ফেনী, পটুয়াখালী, রংপুর, রাজশাহী, যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে দলের নেতাকর্মীকে ‘গুম-হত্যাকাÐ’ ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানান রিজভী। রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ দিতে বিএনপি প্রতিনিধি দলকে উখিয়াতে যেতে না দেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, দেখুন কত নির্দয়, কত নির্মম এই সরকার। ত্রাণ দিতে দিচ্ছে না ওখানে, রোহিঙ্গা শিশুরা না খেয়ে আছে। অর্থাৎ মিয়ানমারের সূ চির কর্মকাÐের সাথে শেখ হাসিনার কর্মকাÐের কোনো গরমিল নাই, একই কর্মকাÐ। বাংলাদেশ নাগরিক ফোরামের সভানেত্রী খালেদা ইয়াসমীনের সভাপতিত্বে ও এনডিপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসার পরিচালনায় আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম, বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক নেওয়াজ হালিমা আরলি, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, নিপুন রায় চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

 

রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে Ñড. শাহদীন মালিক
স্টাফ রিপোর্টার : রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনায় সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজন। রোহিঙ্গারা যেন নিরাপত্তা হুমকিতে না পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে। গতকাল রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘আমরাও রোহিঙ্গা’ শীর্ষক এক সংহতি সভায় এসব কথা বলা হয়। রোহিঙ্গা শরণার্থী রক্ষণাবেক্ষণে নাগরিক সমাজের এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়ে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) এ সভার আয়োজন করে।
সভায় আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, যেখানে সহিংসতা হচ্ছে, সেখানে আন্তর্জাতিক আইন, যুদ্ধ আইন, কার কী ভূমিকা, সেগুলো কতটা গ্রহণযোগ্য বা অগ্রহণযোগ্য সেসব নাগরিক সমাজের চর্চার বিষয় হতে পারে।’ এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন নিয়ে তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতির সঙ্গে এ সমস্যার পার্থক্য হচ্ছে, বন্যার্ত মানুষেরা আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারে। কিন্তু রোহিঙ্গারা তা সহজে পারবে না। এখানে পরিকল্পনা করে এগোতে হবে।
সভায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ত্রাণ, সেবা ও প্রত্যাবর্তন নিয়ে রামরু একটি প্রস্তাবনা তুলে ধরে। রামরুর চেয়ারপারসন তাসনিম সিদ্দিকী এটি তুলে ধরেন। সেখানে বলা হয়, ত্রাণ ও পুনর্বাসনে নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে দ্রæত একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার। নাগরিক সমাজের জ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত করে সমন্বয় কমিটি করতে হবে। আরও লোকবল নিয়োগ দেওয়াসহ শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি কাউন্সেলিং করাতে হবে। নারী ও শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। রামরুর আবেদন, রোহিঙ্গাদের যেন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা না হয়। তাঁরা হুমকি নয়, নিজেরাই নিরাপত্তাহীন।
প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথাও বলা হয়। এ ছাড়া জাতিসংঘ শরণার্থী-সংক্রান্ত হাইকমিশনের নির্বাহী পরিষদ ও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় রোহিঙ্গাদের বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার, আন্তর্জাতিক প্রচারণার পাশাপাশি শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা এবং ভারত ও চীনের বর্তমান অবস্থান পরিবর্তনের জন্য তাদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলা হয়।
জাতিসংঘ শরণার্থী-সংক্রান্ত হাইকমিশনের সাবেক কর্মকর্তা মো. মহিউস সুন্নাহ বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু কোনো একটি দেশের না, এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। আমরা চাই, সারা বিশ্ব তাদের সভ্যতার দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসুক।’এ ছাড়া নিরাপত্তা ইস্যুতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, সত্যিকার অর্থে নিরাপত্তা ইস্যু আছে কি না, বা এটা বিভ্রান্ত করার জন্য কারও সৃষ্ট কিছু কি না, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। রামরুর সিনিয়র গবেষক জালালউদ্দিন শিকদার বলেন, ভূমি মাইন ব্যবহারের বিপক্ষে যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করে, তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মিয়ানমারের মাইন ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করছে। আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকেও এগিয়ে আসতে হবে। এই নিগৃহীত জাতিগোষ্ঠী যাতে মর্যাদার সঙ্গে ফিরে যেতে পারে, সে ব্যবস্থাও করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ