পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শিশুদের পারিবারিক শৃঙ্খলা, স্নেহ-মমতা এবং ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা হলে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকতে পারে না
দেশে আত্মহত্যার প্রবনতা বাড়ছে। সামাজিক ও পারিবারিক অস্থিরতার কারনে বেড়ে যাচ্ছে আত্মহত্যার ঘটনা। সামাজিক সংগঠনগুলোর সচেতনতা মূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি পারিবারিক কাউনসিলিং এর মাধ্যমে আত্মহত্যার হার কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মনোবিদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক চাপ কমানোর জন্য যেসব সামাজিক উপকরণ থাকা দরকার, সেগুলো না থাকায় আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। তাদের মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় সামাজিক বৈষম্য আরও প্রবল হয়ে সামনে হাজির হওয়ায় হতাশার জায়গা বাড়ছে। মাদক সেবন ও নানা ধরনের অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েও অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেচে নেন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও পুলিশ সদর দফতরের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন আত্মহত্যা করেন। সে হিসাবে প্রতিবছর দেশে ১০ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, আসল সংখ্যা এর চেয়ে বেশি। সরকারি হাসপাতালে আত্মহত্যা চেষ্টার কেস লিপিবদ্ধ করা হলেও ক্লিনিকে এসব কেস ধামাচাপা দেয়া হয়। অনেক সময় যথাযথ মানসিক চিকিৎসার অভাবে এই বেঁচে যাওয়া মানুষটিই আবারও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যান এডভোকেট সিগমা হুদা বলেন, আত্মহত্যাও একটি সামাজিক ব্যাধি। অবিলম্বে এ ব্যাধির প্রতিকার করতে হবে। আমাদের দেশে নারী আত্মহত্যার প্রধার একটি কারন এখনো পারিবারিক নির্যাতন। নির্যাতনের মাত্রা কমে গেলে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবনতাও কমে যাবে। আত্মহত্যা প্ররোচনাকারীর কঠিন শাস্তি নিশ্চিত হলে আত্মহত্যা কমে যাবে। পরিবারের সঙ্গে শিশুদের বন্ধন বৃদ্ধির প্রতি নজর দিতে হবে। বর্তমান সময়ে আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে নগরায়ণের পরিবর্তন, মানসিক রোগের প্রাদুর্ভাব, অর্থনৈতিক বৈষম্য এমনকি নারী ক্ষমতায়নের কারণে নারীরা সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে নিজেকে মিলাতে পারছেন না। মনোচিকিৎসকদের মতে, আত্মহত্যার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ডিপ্রেশন। দীর্ঘদিনের মানসিক চাপে থাকা নারীরা সবকিছুকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখতে শুরু করেন। পুলিশের একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ব্যতিক্রম বাদ দিলে, সামাজিক অবক্ষয়, প্রেমঘটিত প্রতারণা, হতাশা, অভিমান ও অপ্রাপ্তির বঞ্চনার কারণে কম বয়েসী ছেলে-মেয়েদের অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। বয়েস ভেদে, দেশে দেশে এবং অর্থনৈতিকভাবে শ্রেণী বিভক্ত সমাজে আত্মহত্যার কারণ ও প্রেক্ষাপটে ভিন্নতা দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রধানত: নারী ও কমবয়েসী ছেলে-মেয়েরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে বেড়ে উঠলে আত্মহত্যার প্রবনতা কম থাকে বলে ওই কর্মকর্তা মনে করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যা প্রবনতা প্রতিরোধে আমাদের করনীয় সমূহের মধ্যে প্রথমেই আমাদের পারিবারিক মূলবোধ ও স¤প্রীতি বজায় রাখা একান্ত অপরিহার্য। কেননা বিশ্বসংসারের তাবৎ কিছুর একক পরিবার। এবং পরিবারই সকল নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধের কেন্দ্রস্থল। শিশুদেরও পারিবারিক শৃঙ্খলা, স্নেহ-মমতা এবং ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা হলে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকতে পারে না। সামাজিক ন্যায়বিচার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অশ্লীলতা ও অনৈতিক সম্পর্ক বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী ভিনদেশি অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ রোধ করার মাধ্যমে আত্মহত্যার প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব। দেশের তরুণ প্রজন্মকে, মাদকাসক্তি, অপরাধপ্রবণতা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে রক্ষা করতে দেশের সামগ্রিক সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। আত্মহত্যা যে কোন সমস্যার সমাধান নয়, এটা সংশ্লিষ্ট সকলকে বুঝতে হবে, বোঝাতে হবে। ফেসবুক বা ডিজিটাল ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রিত করার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ত করার অনুসঙ্গ খুজে নিতে হবে। সমাজের অপরাপর মতানৈক্য, সম্পদায়িক বৈষম্য উগ্রবাদীকরণ ইত্যাদি যা মানুষের আতহত্মার অনুঘটক হিসেবে কাজ করে তা দূরীকরনের জন্য বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কুতিক কর্মকান্ড নিবিড়ভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। যে যে সামাজিক ও পারিবারিক কারসমূহ আত্মহত্যায় অনুসঙ্গ হিসেবে কাজ করে তা প্রতিহত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।