Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

হটলাইনে অভিযোগের স্তুূপ আমলে নিতে গড়িমসি দুদকের

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর হটলাইনে জমা পড়েছে প্রায় দুই লক্ষাধিক (অভিযোগ) ফোন কল। আমলে নেয়া সংখ্যা মাত্র চার শ মতো। বাকি অভিযোগের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দুদক। এসব অভিযোগ দুদকের আওতায় মধ্যে পড়ে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। হটলাইনটি চালু হওয়ার পর প্রতিদিনই অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু নিষ্পতির হার তুলনামুলক খুবই কম। এতে করে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিযোগকারীরা। তাদের মতে, হট লাইন চালু হওয়ার আগে অনেক প্রত্যাশা ছিল। এখন যেন এটি চালু করার উদ্দেশ্য ফিকে বসছে। এই জন্য আইন সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব ড .শামসুল আরোফিন ইনকিলাবকে বলেন, সব অভিযোগ আমাদের আওতাধীন না থাকায় আমরা অভিযোগ গুলোর আমলে নিতে পারছিনা। তবে আামরা চেস্টা করছি যে সব অভিযোগ আমাদের আওতার মধ্যে নেই; সেগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ওই অভিযোগ জানিয়ে দিতে। তিনি আরো বলেন, প্রকৃতপক্ষে অনেক জানেন না কোন কোন কি বিষয়ে অভিযোগ করা যায়। অভিযোগগুলো বিশ্লেষনে দেখা যায়, অধিকাংশ অভিযোগ নিজেদের (ভাই ও বোনের বিরুদ্ধে) মধ্যে তথা জমি দখল, পারিবারিক বিরোধ নিয়ে। তিনি আরো বলেন, সরকারি সম্পদ ও অর্থ সংক্রান্ত বিষয় নিয় কাজ করছে। ফৌজদারি অপরাধ তো আমরা নিতে পারছিনা। তিনি আরো বলেন, প্রকতপক্ষে অনেকেই হয়তো জানেন না কোন বিষয়ে দুদকে অভিযোগ করা যায়। এজন্য ব্যানার ফেস্টুন এবং টিভিতে প্রচারের ব্যবস্থা করছি।
যখনই দুর্নীতির ঘটনা, তখনই অভিযোগ’ কিংবা দুর্নীতির অভিযোগ জানাতে ফ্রি কল করুন এমন ¯েøাগানে গত ২৭ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে হটলাইনটি। এসময় সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছিলেন, হললাইন জনগণের সঙ্গে দুদকের সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে। এ পর্যন্ত ১লক্ষ ৭১ হাজার (অভিযোগ) কল এসেছে। এর মধ্যে আমলযোগ্য অভিযোগের সংখ্যা চার শ’র মতো। এর মধ্যে থেকে হাতেগোনা কয়েকটি অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। উদ্বোধনের দিনই ফোন আসে ৪ হাজার ৯৫১টি। ১২ দিনের মাথায় হটলাইনে ফোন কলের সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজারে পৌঁছায়। এতে করে দেখা যায়, ১০ কর্মদিবসে গড়ে ১০ হাজারের মতো ফোন এসেছে। যেটি সরকারী কোন প্রতিষ্ঠানে সব চেয়ে বেশি কলের রের্কড। এইভাবে প্রতিদিনই কলের সংখ্যা বাড়ছে।
সরে জমিন ঘুরে দেখা যায়, দুনীতি দমন কমিশনের তৃতীয় তলায় একটি রুমে হট লাইনের কার্যক্রম চলছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল ৫ জন নিযুক্ত কর্মী দেশের যে কোন প্রান্ত হতে দুর্নীতি সংক্রান্ত যে কোন কল গ্রহণ করার পর তাৎক্ষণিকভাবে সফটওয়্যার ডেটাবেইজে তথ্য লিপিবদ্ধ করছেন। অন্তত প্রতি মিনিটে একটি কল আসছে। অনেক ক্ষেত্রে কম কল গ্রহনকারীর থাকায় গ্রহণ করতে পারছে না। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তারা সেবাগ্রহণকারীদের কল রিসিভ করে তাদের অভিযোগ শুনছেন। এরপর অভিযোগকারীর নানা তথ্য একটি ফরমে লিখে রাখছেন। একজন এইসব তদারকি করছেন। বিরতীহীনভাবে তারা কল রিসিভ করছেন। প্রতিদিন ৯ টা থেকে বিকাল ৫টায় পর্যন্ত চলে এই কার্যক্রম। কলসেন্টার কর্মীর জন্য ডেস্কটপ কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক প্রিন্টার, ভয়েস রেকর্ডার, নয়েজ রিডাকশন হেডসেট, সার্ভারের সাথে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক কানেকশন রয়েছে। অভিযোগকারীর যে সব অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান দেয়া সম্ভব হবে না সেক্ষেত্রে কলসেন্টার কর্মী সরাসরি ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তার (এক বা একাধিক) সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। আর ওই ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হচ্ছে উপপরিচালক কিংবা পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা। অভিযোগ কেন্দ্র থেকে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সেগুলো দুদকের সেলে পাঠানো হয়। সেখানে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বর্তমানে ১ লক্ষ ৭১ হাজার নানা বিষয়ে অভিযোগ করছেন বলে জানা যায়। এর মধ্যে আমলযোগ্য অভিযোগের সংখ্যা চার শ’র মতো বলে জানা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এজন অভিযোগকারী বলেন, মনে করছিলাম হটলাইনে অভিযোগ দিয়ে উপকার পাব। কিন্তু ফলাফল শুন্য। তিনি আরো বলেন, সরকারি সেবা পেতে প্রতিটি পদে পদে দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, একাধিক ব্যক্তি একই সঙ্গে অভিযোগ জানাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হয়। অভিযোগকারী চাইলে তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করা হয়। হটলাইনে ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিযোগ জানাতে কল বেশি এসেছে। এর মধ্যে দুদকের আওতাবহির্ভূত অভিযোগের সংখ্যাই বেশি। এসব ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনে তাঁকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেয়া হয়। ক্ষেত্রবিশেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ওই প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির অভিযোগটি জানিয়ে দিচ্ছে দুদক। বেশি অভিযোগ: আভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসছে ভূমি ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের বিষয়ে। এছাড়াও ভূমি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ, কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা),পল্লী বিদ্যুৎ, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, মাদকদ্রব্য, নারী নির্যাতন, পাসপোর্ট অফিস, রেলওয়ে, ঘুষ লেনদেন, মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত টাকা কেটে নেয়া, হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলা ও অনুপস্থিতি, নির্বাচন কমিশন প্রভৃতি। সবগুলো গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছে দুদক। তবে সবগুলো আমলে নিতে পারছে না কমিশন। অভিযোগে যে সব বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত: কোনো অভিযোগকারী যদি হটলাইন-১০৬ এ বা লিখিতভাবে অভিযোগ করতে চান তাহলে দুদকের তফসিলভুক্ত কি না সেটা আগে বুঝতে হবে। এরপর তফসিলভুক্ত হলে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য ও প্রমাণসহ অভিযোগ দিতে হবে। আর যদি লিখিত অভযোগ করতে চান তাহলে আবেদনে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর লিখতে হয়। অভিযোগকারীর পরিচয়, নাম-ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর যথার্থ কি না, সেটা যাচাইয়ের পাশাপাশি অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট ও বস্তুনিষ্ঠ কি না। তফসিলবহির্ভূত অপরাধ বিষয়ে ঢালাও অভিযোগ আসার কারণে দুদককেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ