পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আদালত আইন প্রণয়ন করতে পারে না, সংশোধনও করতে পারে না। সেই অধিকার কেবল সংসদের। এটাই হল মূল কথা। আমরা ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে যখন ’৭২ এর সংবিধানের মূল কাঠামোয় ফিরে গেলাম তখন হাইকোর্ট বাতিল করে দিল। এরপর আপিল বিভাগের রায়ে প্রধান বিচারপতি শত শত বছর পেছনে ফিরে নানা ধরনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেখানে নানা অসঙ্গতিও আছে। ওনার এই পর্যবেক্ষণে অনেক সাংঘর্ষিক বিষয় রয়েছে। কোথা থেকে কারা এটা তৈরি করে দিয়েছে সেটাও একটা প্রশ্ন। সবার একটা জবাবদিহিতা থাকতে হবে। আমাদের জবাবদিহিতা জনগণের কাছে। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি জাতির জনক সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন, তিনি যেন বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতা বিরোধীদের কথারই পুনরাবৃত্তি করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতির কাছে প্রশ্ন- সমস্ত জুডিশিয়ারি এক ব্যক্তির হাতে থাকবে? বিচারপতিদের চাকরি থাকবে কি থাকবে না সেটাও এক ব্যক্তির হাতেই থাকবে? প্রধান বিচারপতি যদি কারও প্রতি বিরাগ হন তাহলে তার চাকরিটাও যাবে। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি নারী আসন নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি এখানে আপত্তি দেখিয়ে বলেছেন অনুচ্ছেদ ৭(১) এর সঙ্গে নাকি অসামঞ্জস্য।
শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। সেই জনগণ সংসদ নির্বাচিত করে। সেই সংসদের সদস্যরাই নারী সদস্যদের নির্বাচিত করে। প্রেসিডেন্টেকেও নির্বাচিত করছে এই সংসদ। সেই প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দিচ্ছেন প্রধান বিচারপতিকে। কাজেই উনি যদি একথা বলেন, তার নিয়োগ কোথায় যাবে? বঙ্গবন্ধুৃ ’৭২ এর সংবিধানেই এই নারী সদস্য দিয়েছিলেন। এখন ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য। সারাবিশ্বেও এখন নারীদের মর্যাদার কথা বলা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি স্বাধীনতাযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন। একদিকে তিনি আমিত্বের বিরুদ্ধে বলছেন, আরেকদিন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে আমিত্বের ব্যবস্থা করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মার্শাল ল’ অধ্যাদেশকে ইতোমধ্যে অবৈধ বলা হয়েছে। তাহলে আবার সেই মার্শাল ল’র মাধ্যমে সৃষ্ট সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে কীভাবে বৈধতা দেয়া হচ্ছে? আপিল বিভাগ সংবিধান সংশোধন করে দিতে পারে না, সেই ক্ষমতা কেউ তাকে দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ চলে কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী। সংসদ কতদিন চলবে সেই সিদ্ধান্ত নেয় কার্যউপদেষ্টা কমিটি। সেখানে কেবিনেটের কোনো ভূমিকাই নেই। কাজেই এসব প্রশ্নের মাধ্যমে তিনি নিজেকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। সংসদই সার্বভৌম, এই সংসদই সংবিধান রচনা করে এবং এই সংসদই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। যেই সংসদ আইন তৈরি করে দেয় সেখানে সেই সংসদকে খাটো করা, প্রেসিডেন্টকে খাটো করা-সেটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই রায় কারও কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, এই রায়ে বিএনপি খুব খুশি। অথচ এই রায়েই জিয়ার ক্ষমতা দখলকে অবৈধ বলা হয়েছে। সেটা মনে হয় তারা দেখেনি। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকাতেই তারা খুশি। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা সমুন্নত রাখতে হবে। গণতন্ত্র ছাড়া দেশের উন্নয়ন হয় না। এই সংসদ জনগণ দ্বারা নির্বাচিত। জনগণের অধিকার ও সম্মান সমুন্নত রাখতে হবে। তিনি প্রস্তাব সমর্থন করেন।
প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগেই এই দেশ স্বাধীন হয়। কাজেই তাকে নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। সবাইকে মনে রাখতে হবে- প্রধান বিচারপতির আসন একটি প্রতিষ্ঠান। তাই সবার দায়িত্ব এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষা করা। সবাইকে মনে রাখতে হবে-জনগণ ক্ষমতার উৎস। সংসদকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর যখন এই সংসদে ষোড়শ সংশোধনী পাস হয় তখন এর উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। গণপরিষদ দ্বারা যেই সংবিধান বঙ্গবন্ধু আমাদের উপহার দেন সেটি ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট মার্শাল ল’ দিয়ে ক্ষমতা দখল অবৈধ ঘোষণা করে। দেশে গণতন্ত্রকে স্থায়ী রূপ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সংসদ উদ্যোগ নেয় এই ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে। ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়, ’৭২ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত সংসদ কর্তৃক কোনো বিচারপতি অপসারিত হননি।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন এই সংশোধনী পাস করি তখন আমি এই সংসদে বলেছিলাম, এর জন্য একটা আইন করা হবে। ২০১৫ সালের ৫ মার্চ সেই আইনের খসড়ার ড্রাফট প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠাই। বললাম আপনারাই বলুন-ঠিক না বেঠিক। আমি কোনো উত্তির পাইনি। পরে চিঠি দেয়ার পর বলে ‘নো কমেন্ট’। কারণ হাইকোর্টে এ নিয়ে মামলা চলছিল। তখনই বোঝা যায় এটা পূর্বপরিকল্পিত। হাইকোর্ট বাতিল করবে, আমরা আপিল করবো, আপিল খারিজ হবে- সেই পরিকল্পনা যেন ব্যাহত না হয় সেজন্যই তারা আমার আইনটি আটকে দেয়। আনিসুল হক বলেন, ষোড়শ সংশোধনীতে অভিসংশন নেই, আছে অপসারণ। ষোড়শ সংশোধনীতে বিচারপতি অপসারণের প্রক্রিয়া তুলে ধরে তিনি বলেন, সেটা তাদের পছন্দ হল না। এটা হচ্ছে তাই রে নাই রে খেলা। তারা বললেন, ষোড়শ সংশোধনী সংবিধানে মৌলিক কাঠামোতে আঘাত করে। মৌলিক কাঠামো হলো-বিচারবিভাগ স্বাধীন। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত, এই অধিকার আমাদের আছে। সংবিধান হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন। এই রায় গ্রহণযোগ্য নয়। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করার কোনো ইচ্ছা এই সংশোধনীর ছিল না, বরং স্বাধীনতা সমুন্নত রাখাই ছিল ইচ্ছা। আমি স্পষ্ট করে বলছি, এই রায় বিনা চ্যালেঞ্জে ছাড়া হবে না। প্রধান বিচারপতি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। বললেন-একক নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়নি। এই ক্ষমতা ওনাকে কে দিয়েছে? এই প্রধান বিচারপতি যত কথা বলেছেন আর কোনো প্রধান বিচারপতি এত কথা বলেননি।
আনিসুল হক বলেন, প্রধান বিচারপতি বললেন, বেতন বাড়াতে হবে। উনি মহিলা এমপিদের নিয়ে আপত্তিকর কথা বলেছেন। এই কথাগুলো বলে তিনি বিচারবিভাগের ইজ্জতই কেবল নষ্ট করেননি। প্রধান বিচারপতি একটা প্রতিষ্ঠান, সেখানে যিনিই বসেন তাকে দায়িত্বশীল হতে হয়। তার বক্তব্য যুক্তিনির্ভর নয়, বিদ্বেষপ্রসূত। তাই আমরা এর আইনি প্রতিকার চাই। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বেই এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বিভক্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এটাকে হাল্কাভাবে নেয়ার অবকাশ নেই। তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী ’৭২ এর মূল সংবিধানে ফিরে যাবার প্রয়াস। বিচারবিভাগের দায়বদ্ধতা আর বিচারবিভাগের স্বাধীনতা আলাদা বিষয়। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য বিভ্রান্তিকর, তিনি সংসদ ও মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করেছেন। এই রায় যুক্তিনির্ভর নয়, অগ্রহণযোগ্য। প্রধান বিচারপতি কোন জায়গার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা বোধগম্য নয়। প্রধান বিচারপতি যখন আজ বঙ্গবন্ধুর কথা স্বীকার করছেন তখন তাকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই এই পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, এই রায় পুরো মতলববাজির। এই মতলববাজি আমরা পাকিস্তানসহ বিভিন্ন সেনা শাসনামলে দেখেছি। এই প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের সামনে একটি মূর্তি বসিয়ে একবার ঝামেলা সৃষ্টি করাতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, সিনহা সাহেব অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে কাদের নিলেন? এই ড. কামাল হোসেনের মেয়ের জামাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতি পদে-পদে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। ড. কামালের আশ্রয়ে-প্রশয়ে এই বার্গম্যানরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করে।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশটাই প্রধান বিচারপতির পছন্দ না। এই রায়ের পরে কে খুব খুশি হলেন? ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেব। কারণ মওদুদ সাহেব মৃত মানুষের নামে এফিডেভিট করে বাড়ি নিয়েছেন। মওদুদের মতোই এস কে সিনহা উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরে ২০০৩ সালে ৩ কাঠার প্লট বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়। এরপর ১০ নম্বর সেক্টরে স্থানান্তর করে ৫ কাঠা করেন, সেখানে বাড়ি বানান। তিনি সম্পদ বিবরণীতে এই বাড়ির কথা উল্লেখ করেননি। ভাইয়ের নামেও বাড়ি নেন। কাজেই দুর্নীতিবাজ সিনহা আর দুর্নীতিবাজ মওদুদ এক সুরে কথা বলবেন-এটাই স্বাভাবিক। কৃষিমন্ত্রী বলেন, বিচার চলাকালীন যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী সিনহার সঙ্গে দেখা করেছেন। যখন রায় ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে কথা উঠল তখন সিনহা বাবু বললেন- বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন না করলে আমি প্রধান বিচারপতি হতে পারতাম না, একি শুনি আজ মন্থরার মুখে। রায়-পর্যবেক্ষণের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে তিনিও আইনমন্ত্রীর প্রতি আহŸান জানান।
#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।