পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুঁশিয়ারি
রোহিঙ্গা মুসলমান নির্যাতন বন্ধ করে তাদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য মিয়ানমার সরকারে প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হুঁশিয়ারী উচ্চারণ তিনি বলেছেন, আমরা শান্তি চাই, সৌহার্দ্য চাই। তবে কোন অন্যায় আচরণ বরদাস্ত করা হবে না। স্বদেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের সময় তিনি এ ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদেরকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি। তারা নিজ দেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের পাশে থাকবো। সাধ্যমতো তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করবো। এসময় তিনি সহিংসতা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আমাদের মানুষদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো। ওই সময় মানুষ উপায় না পেয়ে ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই আমাদের যতটুকু সামর্থ আছে তা দিয়ে সাহায্য করছি। এ বিষয়ে আমরা কমিটি করে দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও আশ্রয় দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে জনমত গড়ে তোলারও আহ্বান জানিয়েছেন। তবে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের যা করার দরকার আমরা সেটি করবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে যেভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে তাতে কি তাদের বিবেককে নাড়া দেয় না? ওই দেশের কারণে এভাবে লাখ লাখ মানুষ ঘরহারা হচ্ছে। স্বজনহারা হচ্ছে। স্বজন হারানোর বেদনা কী, সেটা আমি ভালো করে জানি, আমরা শান্তি চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১৬ কোটি মানুষের দেশ। সবার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি। সেখানে আরও দুই, পাঁচ বা সাত লাখ মানুষকেও খেতে দিতে পারবো।’
এ সময় তিনি স্থানীয়দের উদ্দেশে বলেন, ‘এখন যারা যুবক তারা হয়তো মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি। কিন্তু আমরা দেখেছি। তাই রোহিঙ্গাদের যেন কোনও কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এদের দেখভাল করতে হবে।
মিয়ানমারের নাগরিক হওয়া সত্বেও মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে নাগরিক অধিকার না দিয়ে মিয়ানমার সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের পাশাপাশি খাদ্য, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাবে বাংলাদেশ। তিনি সুষ্ঠু ত্রাণ বিতরণ ও রোহিঙ্গাদের পুঁিজ করে কেউ বা কোন গোষ্ঠী যেন নিজেদের ভাগ্য গড়ার সুযোগ না পায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী উখিয়া-টেকনাফ তথা কক্সবাজার এর জনগণকেও ধন্যবাদ জানান।
গত ২৪ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যে মিয়ানমার সেনা-পুলিশ ও তাদের সহযোগী মগদস্যুদের গণহত্যার শিকার হয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৮ লাখের মতো রোহিঙ্গা মুসলিম নারী-শিশু-পুরুষ। বাংলাদেশ এই বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ ও মিয়ানমারের উপর চাপ বাড়াতে এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের প্রতি সমবেদনা ও সহানুভূতি জানাতে গতকাল উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মিয়ানমারের সেনা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দেখতে গতকাল কক্সবাজারের উখিয়ায় আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে বিশেষ ফ্লাইটে কক্সবাজার বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। সেখান থেকে সড়ক পথে গাড়ি বহর নিয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে সাড়ে এগারটায় উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিদর্শনে যান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর আগমনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছিল বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কক্সবাজার থেকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পর্যন্ত সর্বত্র ছিল নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, ভ‚মি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ ইকবালুর রহিম, কক্সবাজার-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন নদভী, মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উখিয়ায় আসেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, কক্সবাজারের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি এবং আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক আগে থেকেই উখিয়ায় উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী ক্যাম্পে স্থাপিত হাসপাতালে আহত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের দেখতে যান। এসময় প্রধানমন্ত্রী তাদের সাথে কথা বলেন, তাদের প্রতি সহানুভ‚তি ও সমবেদনা জানান। বক্তব্য শেষ করে প্রধানমন্ত্রী কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থীর হাতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।