Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গাদের মুখে ভয়াবহতার বর্ণনা শুনে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালংয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরনার্থীদের দেখতে গিয়ে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে বিমানে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে প্রথমে কক্সবাজার এবং সেখান থেকে সড়কপথে উখিয়ার কুতুপালং পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। কুতুপালং ক্যাম্পে পৌঁছে শেখ হাসিনা সেখানে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নারী, পুরুষ, শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রাখেন এবং শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের ঘটনাকে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করার ও তাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আহবান জানান। মিয়ানমার সরকারের কাছে অনুরোধ করেন, তারা যেন নিরীহ মানুষের উপর নির্যাতন বন্ধ করে। তারা যেন প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে যা যা সাহায্য করা দরকার, তা করবে সরকার। মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ মিয়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দিলেও এ দেশের ভূমি ব্যবহার করে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানো হলে তা বরদাশত করা হবে না বলেও হুঁশিয়ার করে দেন।
বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, “এ ঘটনা দেখে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না। মানুষ মানুষের মতো বাঁচবে। মানুষের কেন এত কষ্ট! রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের দিকটি তুলে করে শেখ হাসিনা বলেন, নাফ নদীতে শত শত নারী শিশুর লাশ ভাসছে, এটা ‘মানবতাবিরোধী’ কাজ। “আমরা আমাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে, তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। মানবতার খাতিরে এই দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের বাংলাদেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছি। যতদিন মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে নিয়ে না যাবে, ততদিন আশ্রয়ের ব্যবস্থা করব।” রোহিঙ্গা নিবন্ধনের কাজ শুরু হয়েছে, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমারকে চাপ দিতে সংসদে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন রাখা সম্ভব নয়, তাই বিষয়টি জাতিসংঘে তোলা হবে।
রোহিঙ্গা নারীরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তারা এক বস্ত্রে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন। সঙ্গে করে কিছুই আনতে পারেননি। এ সময় নারী ও শিশুদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠলে চোখ ভিজে ওঠে শেখ হাসিনার। তার সঙ্গে থাকা ছোট বোন শেখ রেহানাকেও চোখ মুছতে দেখা যায়।
এসময় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা ছাড়াও তার পুত্রবধূ আইওএম কর্মকর্তা পেপ্পি সিদ্দিক এ সময় কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ বিতরণ করেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ ইকবালুর রহিম, কক্সবাজার-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন নদভী, মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উখিয়ায় আসেন।
এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, কক্সবাজারের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ও র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও উখিয়ায় উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৪ অগাস্ট রাতে পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে হামলার ঘটনার পর থেকে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে চালানো হচ্ছে হত্যা আর ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড। যারা প্রাণে বেঁচে গেছেন, তারা ছুটে আসছেন বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে।
গত কয়েক দশক ধরে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশে এই দফায় আরও তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বলে ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।



 

Show all comments
  • S. Anwar ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১০:৫০ পিএম says : 0
    জাতিসংঘ ও তুরস্কের ত্রাণ-সাহায্যের আশ্বাসের আগে এই রোহিঙ্গাদেরকে বড় নিষ্ঠুরভাবে পুশব্যাক করার নির্দেশটাও উনি দিয়েছিলেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ