পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভবদহ যশোর-খুলনার বিরাট এলাকার অভিশাপ। ১৯৬০ সালে সবুজ বিপ্লবের নামে যশোরের সদর, মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর, খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার মধ্যবর্তী ভবদহ নামকস্থানে শ্রীনদীর উপর নির্মাণ করা হয় একটি বড় ¯øুইস গেট। একপর্যায়ে যশোর ও খুলনার প্রায় ২শ’ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৮ লক্ষাধিক মানুষের মরণ ফাঁদে পরিণত হয় ওই ¯øুইস গেটটি। গেট সংলগ্ন শ্রীনদী, টেকা ও মুক্তেশ্বরী এই ৩টি নদী রয়েছে। ¯øুইস গেট দিয়ে বিল কেদারিয়া, বিল বকর ও বিল আড়পাড়াসহ যশোর ও খুলনা এলাকার মোট ২৭টি বিলের পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিটি বর্ষা মৌসুমে বিল তীরবর্তী আশেপাশের শত শত গ্রামে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হতে থাকে। পরবর্তীতে রূপ নেয় ভয়াবহতায়। ভবদহের কারণে বছরের পর বছর ধরে বহু কৃষক মৎসজীবি হয়েছেন। অগণিত গাছপালা মরে গেছে। বাড়ী-ঘর, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ, মন্দির, হাট-বাজার ও আবাদী জমির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে নেমে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়। ঘটে জীব-বৈচিত্রের পরিবর্তন। ক্ষতিগ্রস্তদের কথা আমাদের সমস্যা দেখে সরকার অর্থ বরাদ্দ দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টরা লুটপাট করে। সর্বনাশ হয় আমাদের। এর অবসান হওয়া দরকার।
অভিযোগ, যুগ যুগ ধরে প্রকল্পের পর প্রকল্প গ্রহণ করে অর্থ লোপাটের কারখানা বানানো হয়। সমস্যা জিইয়ে রেখে ভেড়িবাঁধ নির্মাণ, নদী খনন, ড্রেজিং ও টিআরএমসহ নানামুখী পরিকল্পনা নেওয়া হয়। আর সরকারী অর্থ ব্যয় দেখানো হয়। যার জন্য করা হয় না স্থায়ী সমাধানের কোন মাস্টারপ্লান। নামকাওয়াস্তে সিংহভাগ প্রকল্প বাস্তবায়নে হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের আশীর্বাদ। ১৯৮২ সালে ২ কোটি টাকার একটি ছোট প্রকল্প থেকে শুরু করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৭টি প্রকল্পে ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। অথচ সমস্যা তিমিরেই রয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার জানান, সর্বশেষ চলতি বছর সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকার টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সমীক্ষা চলছে প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পাসের জন্য পেশ করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সমস্যার সমাধান হবে। এতদিনের যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে তাতে কেন সমস্যার সমাধান হয়নি-এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি। বলেছেন এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে কোন সময় কি হয়েছে তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ইকবাল কবীর জাহিদ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ভবদহ সমস্যা জিইয়ে রেখে কায়েমী স্বার্থবাদী মহল ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পের পর প্রকল্প গ্রহণ করে অর্থ লোপাটের কারখানায় পরিণত করেছে। তার মতে,¯øুইস গেটটি তুলে দিতে হবে। ভবদহের ২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝখান দিয়ে নদী সংযোগ, বিল কপালিয়াসহ পর্যায়ক্রমে সব বিলে টিআরএম চালু ও উজানে নদী সংযোগ বিশেষ করে ভৈরবের সাথে মুক্তেশ্বরীর সংযোগ স্থাপন করলে ভবদহের স্থায়ী সমাধান হবে। তার মতে, এখনই বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু করা না গেলে ভবদহ ¯øুইস গেটের মুখ থেকে শ্রীনদীর ৬০ কিলোমিটারে পলি ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশন সম্পুর্ণ বন্ধ হয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে। তখন নদী কেটেও শিবসা নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পানি নিষ্কাশনের কোন উপায় থাকবে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে দফায় দফায় যোগাযোগ করে ভবদহের সব প্রকল্পের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তারা বলেছেন, আমার আগের সব তথ্য দিতে পারবো না। অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন সুত্রে যতটুকু জানা গেছে তা হলো, ১৯৮২ সালে টেকা নদী খননে ২ কোটি টাকা, ১৯৮৭সালে শ্রীনদী খননে ৫ কোটি টাকা, ১৯৯০সালে ড্রেজিংএ ১৬ কোটি, ১৯৯৪ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় যশোর-খুলনা পানি নিষ্কাশন প্রকল্প (কেজিডিআরপি) সবচেয়ে বড় ব্যয় ২শ’৫৭ কোটি টাকা, ২০০০ সালে মুক্তেশ্বরী নদীর নেবুগাতি থেকে টেকা নদীর বয়ারঘাটা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার ভেড়ি বাঁধ নির্মাণে ৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, ২০০৫ সালে টেকা নদীর ৫শ’৮০ ফুট চওড়া ভাগ করে মাঝখান দিয়ে ১শ’৩০ ফুটের নদী খনন প্রকল্পে ৮ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়। ২০০৭ সালে নদী খনন, টিআরএম ও ডেজিংএ প্রকল্পে ১শ’১৫ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ হয়। যার মধ্যে সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মোট ৬৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এই একটিবার প্রকল্পের বাকি টাকা ফেরত যায়। বাকি প্রকল্পের টাকা ফেরতের নজীর নেই, বরং অনেক প্রকল্পের ব্যয় বর্ধিত হয়। ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে অল্পদিনের মধ্যে ভবদহের টেকা নদীতে ড্রেজিংএর মাধ্যমে পানিবদ্ধতার নিরসন হয়। পানিবদ্ধ এলাকায় কৃষকরা আবার চাষাবাদ করার সুযোগ পায়। কিন্তু পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করেনি। যার জন্য ভবদহের পরিস্থিতি আবার পুর্ববস্থানে পৌছে।
ভবদহের সমস্যার শুরু থেকে বছরের পর বছর ধরে প্রকৃতঅর্থে কত টাকা ব্যয় কিংবা কিভাবে কত ব্যয় দেখানো হয়েছে। তা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টীম মাধ্যমে খুঁজে বের করে জনসমক্ষে রিপোর্ট প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।