Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সংসদে আলোচনায় গুরুত্ব পাবে আদালতের রায় ও রোহিঙ্গা ইস্যু

আজ বিকেলে অধিবেশন শুরু

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আজ বিকালে বসছে দশম জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশন। সাংবিধানিক বাধ্য-বাধকতার কারণে আহ্বান করা এই অধিবেশনে আলোচনায় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া আদালতের রায় নিয়ে উত্তপ্ত হতে পারে সংসদ। এছাড়া মিয়ানমারের চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুও আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। ষোড়শ সংশোধনী আদালতের রায় বাতিলের ঘোষনার পর থেকে আওয়ামীলীগের নেতারা বলে আসছেন আদালত যতবারই বাতিল করবে তা সংসদে ততবারই পাস করা হবে।
আজ রোববার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেল ৫টায় সংসদ অধিবেশন শুরু হবে। এর আগে বিকেল ৪টায় সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে চলতি অধিবেশনের মেয়াদ ও কার্যসূচী চ‚ড়ান্ত হবে। তবে এই অধিবেশন সংক্ষিপ্ত হবে। যা সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ চলতে পারে। সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এই অধিবেশন আহ্বান করেন। অধিবেশন শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন বসার বাধ্য-বাধকতা রয়েছে সংবিধানে। এর আগে গত ১৩ জুলাই সংসদের ১৬ তম অধিবেশন শেষ হয়। ওই অধিবেশন সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে ২৪ কার্যদিবস চলে। অধিবেশনে নতুন অর্থ বছরের বাজেট পাশের পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায় নিয়ে আবারো উত্তপ্ত হতে পারে সংসদ অধিবেশন। গত অধিবেশনেও বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হয়। কিন্তু অধিবেশনের পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ায় উত্তেজনা আরো বেড়েছে। ফলে সংসদের বাইরের এই উত্তেজনা অধিবেশন পর্যন্ত পৌছাতে পারে। আর চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুও আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১শে আগস্ট উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের বক্তব্যেও এমন ইঙ্গিত মিলেছে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীতে আপিল বিভাগের সব জজ স্বাধীনভাবে সব মতামত দিতে পেরেছে কিনা আমি জানি না। সেই সুযোগটা বোধহয় প্রধান বিচারপতি তাদেরকে দেন নাই। রায়টা পড়লে অনেক কিছু বোঝা যায়। রায়টা পড়ছি। আরও কিছু বাকি আছে। সেটাও পড়বো। তারপর এটা নিয়ে আমরা অবশ্যই পার্লামেন্টে আলোচনা করবো। এমপিরা বলেন, রায়ের কোন বিষয়গুলো নিয়ে আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছি তা জনগণকে জানানো প্রয়োজন। পাশাপাশি যেসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে তার কিছু অংশ সংবিধান বিরোধী। তাছাড়া প্রধান বিচারপতি শপথ ভঙ্গের মতো অনেক ঘটনাও ঘটিয়েছেন। সংসদ সচিবালয়ের নোটিশ শাখায় সূত্রে জানা গেছে, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল পর্যন্ত কোন এমপি নোটিশ জমা পড়েনি।
গত ৪ আগষ্ট সিলেটের এক জনসভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আদালত যতবারই বাতিল করবে তা সংসদে ততবারই পাস করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিচারপতিদের চাকরি সংসদই দেয়, সুতরাং তাদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই থাকা উচিত। তিনি বলেন, এটা আমরা আবারো এসেমবিøতে পাশ করবো। এই কনস্টিটিউশনাল এমেন্ডমেন্ড আবারো পাশ করবো এবং অনবরত করতেই থাকবো, দেখি জুডিশিয়ারি কতদূর যায়। বিকজ জুডিশিয়ারি পজিশন আমার মতে আনটেরিবল। মানুষের প্রতিনিধির উপর তারা খোদগারি করবে তাদের আমরা চাকরি দেই।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ আগের অধিবেশনে সংসদে বলেন, যাঁরা দাবি করেন সংবিধান প্রণেতা, বাহাত্তরের সংবিধানকে শ্রেষ্ঠ সংবিধান বলেন, তাঁরা কিভাবে সেই বাহাত্তরের সংবিধানের বিরুদ্ধে কথা বলেন? আমি আদালতের রায় নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। কিন্তু এমিকাস কিউরি হিসেবে যাঁরা বক্তব্য দিয়েছেন তাঁরা অসত্য কথা বলেছেন, জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন। তাঁদের নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।আজ সংসদ অধিবেশন শুরু হচ্ছে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে আগে বলা যাবে না। এ সংসদে সমং না থাকায় আইনটি নিয়ে আলোচনা হলো না আগামী অধিবেশন (আজ) হবে।
জাতীয় সংসদের প্রধান চীফহুইপ আ স ম ফিরোজ ইনকিলাবকে বলেন, রায়ের বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা হতেই পারে। এটা দেশবাসী আসা করে। আমরা মনে করি এমপিদের কথা মানে জনগনের দাবি। সংসদ স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি প্রতিষ্ঠান। সংবিধান সংশোধন নিয়ে যেসব এমপি সংসদে সহযোগিতা করেছিল তারা রায় বাতিলের বিষয়টি কিভাবে রি-আ্যাক্ট করবে, কিভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে তা সময়ই বলে দেবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বেশকিছু এমপি বক্তব্য রাখতে পারেন। তার পর কার্য উপদেষ্টার বৈঠকে বোঝা যাবে কি কি বিষয় গুরুত্ব পাবে। রোহিঙ্গা ছাড়া জঙ্গি ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি ইনকিলাবকে বলেন, এ ইস্যুতে আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা বলেই দিয়েছি, রায়ের পর্যবেক্ষণে যেসব অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তার কারণে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা বাদ দিতে হবে। এজন্য রিভিউ চেয়ে আবেদন করা হবে। ওই রিভিউয়ে সেসব বাদ দিলে জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা থেমে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের বিতর্কিত বিষয় নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সংসদ নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে-এ বিষয়গুলো রায় না পড়লে তো তারা বুঝতে পারবেন না। তাদের বোঝানোর জন্যই আমরা কথা বলছি। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই সংসদে আলোচনা করা হবে। সরকারি দলের সিনিয়র এমপি আবদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, দুই বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা হতেই পারে। মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি ও আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরতে তারা সংসদে আলোচনা করবেন। রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। প্রতবেশী দেশ মিয়ানমার এ ইস্যুতে যে ধরনের ভূমিকা পালন করছে তা সঠিক নয়। আমরা আমাদের সংসদ থেকে তাদের ভূমিকার সমালোচনা করবো।



 

Show all comments
  • মাহমুদুললাহ চৌধুরী ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:০৩ পিএম says : 0
    মায়ানমারের সরকার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে । এই মুহূর্তে সরকার কে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Jamal Ali ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ২:০৬ পিএম says : 0
    Honorable Muslim Brothers and Sisters Assalamu Alaikum I want to tell you something about Rohingya Muslims today. Honorable Muslim brothers and sisters, have you forgotten the message of our beloved Prophet Muhammad? He said that a Muslim is the brother of another Muslim. So why do not we give any response to the Rohingya persecuted Muslims today?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ