Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পথে পথে ভোগান্তি

বেহাল সড়ক-মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট : ফেরি পারাপারে অচলাবস্থা : ট্রেনে উপচেপড়া ভিড়

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 ঈদের ছুটি শেষে দলে দলে মানুষ ঢাকা ফিরছে। বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে অস্বাভাবিক ভিড়। ফেরী পারাপারে এবং সড়কপথে ভয়াবহ যানজট। ভুক্তভোগিদের মতে, অতীতে কখনওই এরকম ভোগান্তি পোহাতে হয়নি।
গত শুক্রবার রাত থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট লেগে আছে। গতকাল শনিবার দুপুরে এ যানজট ৮০ কিলোমিটারও ছাড়িয়ে যায়। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও ৬০ কিলোমিটার যানজটে আটকে ছিল শত শত গাড়ি। এর বাইরে বগুড়া থেকে গাইবান্ধা ও রংপুর পর্যন্ত অন্ত:ত ৫০ কিলোমিটার যানজটে আটকে ছিল কয়েকশ’ গাড়ি। অন্যদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও যানজট ছিল। তবে পুলিশের দাবি, এ যানজট খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না। এদিকে, শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌরুটে নাব্যতা সংকটে গত কয়েকদিন ধরেই ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ কারনে দক্ষিণাঞ্চলের গাড়িগুলোর চাপ পড়েছে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। সেখানেও গত কয়েকদিন যাবত ৭/৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকছে শত শত গাড়ি। অপরদিকে, ঢাকামুখি ট্রেনগুলোতে গতকাল ছিল উপচে পরা ভিড়। অতিরিক্ত যাত্রীর ভিড়ে উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলো চলছে বিলম্বে। ঢাকাগামী রংপুর এক্সপ্রেস গতকাল ঢাকায় এসেছে প্রায় ৮ ঘণ্টা বিলম্বে। শুক্রবার রাতে রংপুর স্টেশন ছাড়ার আগে স্টান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হবে না বলে মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়। তবে এর আগেই কাউনিয়া স্টেশন থেকে শত শত অতিরিক্ত যাত্রী ট্রেনটিতে উঠে পড়ে।
ঈদের ছুটি শেষে গতকাল শনিবার ঢাকামুখি মানুষের চাপ ছিল বেশি। তবে সেই চাপ সহনীয় পর্যায়ে থাকতো যদি মহাসড়কের অবস্থা ভালো থাকতো। ঈদের আগে চলাচলের অযোগ্য মহাসড়ক মেরামত করা হয় জোড়াতালি দিয়ে। ঈদ শেষ হতে না হতেই সেগুলো আবার ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। এ কারনে মহসাড়কে ঈদের আগের মতো আবার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে শুক্রবার রাত থেকে ঢাকামুখি গাড়ির ভিড়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে হাজার হাজার মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ও গোমতী সেতুর উভয় প্রান্তে থেমে থেমে চলেছে গাড়ি। মূলত টোল প্লাজার কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-গাজীপুর ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও যানজট লেগে ছিল সারাদিনই।
জানা গেছে, গতকাল সকালের পর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের করাতিপাড়া থেকে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার রাত ১০টা থেকে শুরু হওয়া এ যানজট দুপুরের দিকে ৮০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময় তা ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ ছিল। স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল থেকে মহাসড়কে আটকে থাকে শত শত যানবাহন। এতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। রংপুর থেকে আসা বাসযাত্রী সুরুজ আলী বলেন, ৫ ঘণ্টা ধরে একই জায়গায় আটকা পড়ে ছিলাম। গরমে বাসে বসেও থাকা যাচ্ছিলো না। রাস্তায় নেমে হাঁটাহাঁটি করেছি। ঢাকামুখি রোজিনা পরিবহনের চালক সোহরাব জানান, শুক্রবার রাত ১০টা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টায় করাতিপাড়া বাইপাস এলাকায় এসে আটকে আছি। তিনি জানান, বাসের অনেক যাত্রীর গতকাল শনিবার সকালে অফিস করার কথা ছিল। কিন্তু যানজটের যে অবস্থা তাতে কেউই বিকালের আগে ঢাকা পৌঁছতে পারবে না। ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের দিকে গাড়ির চাকা কিছুটা ঘুরলেও ঢাকার দিকে বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত যানজটে আটকে পরা গাড়িগুলো একেবারে নড়ছিল না। এতে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বেশি দুর্ভোগে পরেছেন নারী ও শিশুরা। প্রচন্ড গরমের কারণে যাত্রীদের গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশে হেঁটে, দাঁড়িয়ে এবং মাটিতে কাপড় বিছিয়ে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে হঠাৎ কিছু সময় বৃষ্টি হয়। এতে বাসের ছাদ ও ট্রাকে থাকা যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। ভোরে ঢাকার গাবতলি থেকে যাওয়া একজন যাত্রী জানান, গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় সকালে যানজটে আটকা পড়েন। চন্দ্রা থেকে মির্জাপুরের নয়াপাড়া পর্যন্ত যেতে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা সময় লেগেছে। ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামগামী এসএন পরিবহনের বাসচালক কার্তিক কাজল জানান, রাত আড়াইটা থেকে তিনি মির্জাপুরের সীমানাতেই ছিলেন।
মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন বলেন, মহাসড়কে চার লেনের কাজ চলছে। এজন্য প্রচুর ধুলার সৃষ্টি হয়েছে। ধুলায় তিনিসহ অধিকাংশ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। যান চলাচল স্বাভাবিক হতে কিছু সময় লাগবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অন্যদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ও গোমতী সেতুর উভয় প্রান্তে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মেঘনা সেতুর টোলপ্লজায় টোল দেয়ার সময় গাড়িগুলো কয়েক মিনিট থামার কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। চালকরা জানান, টোল প্লাজার সবগুলো কাউন্টার খোলা থাকলে এতো সমস্যা হতো না। সব সময় ২/৩টি কাউন্টার বন্ধই থাকে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা নামক স্থানে সকাল থেকে যানজটের সৃষ্টি হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে পুলিশের দাবি থেমে থেমে যানজট হলেও তা স্থায়ী হচ্ছে না।
এদিকে, ভুক্তভোগিদের বর্ণনায় ওঠে এসেছে ভোগান্তির চিত্র। ৫ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে ১৩-১৮ ঘণ্টা। রাস্তায় যথেষ্ট পুলিশ থাকলেও উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকামুখী সব রাস্তার বেহাল দশা ও ব্যবস্থাপনার অভাবকেই দায়ী করেছেন ভুক্তভোগি যাত্রীরা। তাদের মতে, বরাবরই ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় এই ভোগান্তি হয়। কিন্তু ফেরার পথে এরকম এর আগে কখনও হয়নি। শনিবার সকালে গাবতলীতে নামা রাইসুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী থেকে ১৮ ঘণ্টা জার্নি শেষে ঢাকায় ঢুকতে পারলাম। সাধারণত রাজশাহী থেকে আসতে সাড়ে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। কোন জায়গায় বেশি যানজট ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন,বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর থেকেই চন্দ্রা পর্যন্ত পুরো রাস্তা জ্যামের মধ্যেই কেটেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। বিভিন্ন মোড়গুলোতে পুলিশের দেখা মিললেও তাদের সংখ্যা খুব কম। রংপুর থেকে আসা রেজওয়ান বলেন, এত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ঈদের আগে দেখা যেত। কারণ লক্করঝক্কর গাড়িগুলোও ঘরমুখী মানুষকে নিয়ে হাইওয়েতে নেমে পড়তো। ঈদ শেষে ফেরার সময় এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমি পড়িনি। গত ১৫ বছর ঈদে যাতায়াত করছি। যাওয়ার সময় যে ভোগান্তি হয়,সবাই একসঙ্গে রওনা করে বলে এমন হয় বলে মেনে নিতাম। কিন্তু ফেরার সময়ও দেখলাম লক্করঝক্কর গাড়ি যেগুলো রাজধানীতে চলাচল করে সেগুলোও মহাসড়কে নেমে পড়েছে। আর রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ। ঈদ শেষে ঘরে ফেরার এমন ভোগান্তি আগে হয়নি উল্লেখ করে লতিফ নামে আরেক ব্যবসায়ি বলেন, কুস্টিয়া থেকে শুক্রবার রাত ১০টায় ছেড়ে আসা গাড়ি দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পৌঁছায় রাত ১২টায়। ৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করে ঘাট পার হতে পারি। এরপর সকাল আটটার দিকে ধামরাইয়ে এসে আবারও জ্যামের কারণে আটকে যায় গাড়ি। ঢাকায় এসে নামি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। শুধু উত্তরাঞ্চলের নয়, দক্ষিনাঞ্চলের যাত্রীরাও এবার চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বাগেরহাট থেকে আসা রাজন জানান, তিনি মাওয়া হয়ে এসেছেন। সেখানেও তাকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। ফেরিতে উঠতেই সময় লেগেছে চার ঘণ্টা। এরপর নদী পার হতে লেগেছে আরও দুই ঘণ্টা। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ