Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

২১ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার হয়নি রাঙ্গামাটির ৩৫ কাঠুরিয়া হত্যাকান্ডের

সাখাওয়াত হোসেন : | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

২১ বছর আগে নির্মমভাবে ৩৫ জন কাঠুরিয়া হত্যাকান্ডের স্মরণে এখনো কেঁদে উঠে পার্বত্যাঞ্চলের মানুষ। দীর্ঘ সময়ে এ হত্যাকান্ডের বিচার না পেয়ে ক্ষুদ্ধ নিহতদের পরিবার। ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন বিচ্ছিন্নতাবাদি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ শান্তিবাহিনীর হাতে খুন হয় রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার পাকুয়াখালী এলাকার ৩৫ কাঠুরিয়া। দিনটি উপলক্ষে গতকাল নানাভাবে নিহতদের স্মরন করেছেন পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালীরা। রাঙামাটি জেলার দুর্গম লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা পাকুয়াখালীতে ৩৫ জন নিরীহ কাঠুরিয়াকে তৎকালীন শান্তিবাহিনী নামে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ আলোচনার নামে জঙ্গলে ডেকে নিয়ে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় নৃশংসভাবে হত্যা করে। সে দিন কাঠুরিয়াদের মধ্যে একজন কোন রকমে পালিয়ে এসে এ হত্যাকান্ডের খবর সেনাবাহিনীকে দিলে এ ঘটনা প্রকাশ পায়। সেনা সদস্যরা গভীর জঙ্গলের পাহাড়ি খাদ থেকে ২৮ কাঠুরিয়ার খন্ডলাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তবে বাকি ৭ জনের লাশ পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে ২৮ জনকে লংগদু উপজেলা সদরে গণকবর দেয়া হয়। আজ সেই গণকবর কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে।
এ ঘটনার পর পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সংসদীয় টিম লংগদু সফর করে। সেসময় এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পুনর্বাসনের আশ্বাসও প্রদান করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সরকারগুলোও একই আশ্বাসের বানী শুনালেও এখনো পর্যন্ত এ হত্যাকান্ডের বিচারও হয়নি। এমনকি পুনর্বাসন করা হয়নি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলনের নেতা মো. জাহাঙ্গীর কামাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত কোন বাঙালী হত্যার বিচার হয়নি। আদৌ এ হত্যাকান্ডের বিচার হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে সরকার চাইলে এসব খুনীদের বিচার করতে পরে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারে। এদিকে দিবসটি পালন উপলক্ষে গতকাল শনিবার পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে রাঙামাটি পৌর চত্বর থেকে শোক র‌্যালী ও মহা সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এছাড়া স্থানীয়দের উদ্যোগে লংগদু উপজেলায় কাঠুরিয়াদের গণকবর জিয়ারত, স্মরণ সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শান্তি বাহিনী সেদিন এতগুলো মানুষকে হত্যা করতে একটি বুলেটও ব্যবহার করেনি। ৩৫টি মাথা একটি বস্তায় করে আনা হয়েছিল লংগদু থানা সদরে। প্রতিটি লাশের পুরুষাঙ্গ কেটে মাথাগুলোর মুখে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। একটি লাশেরও হাত সাথে ছিল না। হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, দা-দিয়ে কুপিয়ে এবং বেয়নেট ও অন্যান্য দেশি অস্ত্র দিয়ে খোঁচিয়ে খোঁচিয়ে নানা ভাবে কষ্ট দিয়ে হত্যা করেছিল এই অসহায় মানুষ গুলোকে। প্রতিটি লাশকেই বিকৃত করে সেদিন চরম অমানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল তারা। এই ভীবৎস লাশের করুন চিত্র, এখনো বাঙালীদের হৃদয়কে নাড়া দেয়। ঐ ঘটনার নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসা ইউনুছ আলীর চোখে এখনো ভেসে ওঠে খুনীদের বিভৎস চেহেরা আর মৃত্যুপথ যাত্রি কাঠুরিয়াদের বিদায়ী মরণ আর্তনাদ । সেদিন পাকুয়াখালীর পাহাড়ি ছড়া দিয়ে পানির পরিবর্তে প্রবাহিত হয়েছিল বাঙালী ভাইদের রক্ত। রঙ্গিন হয়েছিল কাচালং আর মাইনীর খাল। লংগদুর আকাশ বাতাস ভারি হয়েছিল অসহায় বাঙালিদের করুণ কান্নার আহাযারিতে। খুব কাছ থেকেই অনুভব করেছিলাম সেদিনের মর্মস্পশী মূহুর্তগুলো। স্বচক্ষে দেখেছিলাম বাঙালী ভাইদের ছিন্নবিচ্ছিন্ন, ক্ষত বিক্ষত নিষ্প্রাণ দেহগুলো। নিজের কানে শুনেছিলাম স্বামিহারা বোনের আর ছেলেহারা মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ। সে কথা আজো মনে হলে ক্ষোভে আর ঘৃনায় মনটা বিষিয়ে ওঠে। স্হানিয় বাঙালীরা নিহতদের জন্য চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি সেদিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ