Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না প্র্রান্তিক চাষিরা

বন্যায় মৎস ও প্রাণিসম্পদের ক্ষতি ৪৫ কোটি টাকা, মন্ত্রণালয়ে চিঠি

| প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : বন্যায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৩৫ জেলায় প্রাণিসম্পদের ক্ষতি হয়েছে ৪৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার। এর মধ্যে চারণ ভুমির ১৩ হাজার ৩৮৬ একর ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ৫২ কোটি টাকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে প্রানী সম্পদ অধিদপ্তর। তা গত এক মাসে সাড়া মেলেনি। মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি বরাদ্দ না হওয়ায় প্রান্তিক চাষিরা ক্ষতিপূরণের আসায় মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। অন্যদিকে মাছচাষিদের সহায়তা দিতে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪৫৯ কোটি টাকার চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে ইনকিলাবকে এ তথ্য জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (ডিজি) সৈয়দ আরিফ আজাদ।
মৎস্য ও পশুসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ইনকিলাবকে বলেন, এবারের বন্যা মৎস্য সম্পদের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। আমরা এ ক্ষতি নিরূপণ করেছি। এখন তা কীভাবে পুষিয়ে ওঠা যায় তার চেষ্টা হচ্ছে। মৎস্য সম্পদের ক্ষতি পুষিয়ে আনার জন্য চাষিদের মাঝে মাছের খাদ্য, পোনা, সার ও চুনের চাহিদা চাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ক্ষতিপূরণের বরাদ্দ পেলে তা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
দুই অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হলো হচ্ছে, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, ও জামালপুর। এ বন্যা স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রায় যেমন প্রভাব ফেলেছে, তেমনি গবাদিপশুর জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বন্যার ফলে অনেক গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বন্যার কারণে অনেক জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্য সংকটও এখনো রয়েছে। বন্যায় সারাদেশে ৪৩ লাখ প্রাণি ও পোল্ট্রি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে মারা গেছে ৮ হাজার ৩৩২টি। ক্ষতিগ্রস্ত প্রাণির মধ্যে ৭ লাখ ৭৯ হাজার ১৬৬টি গরু; ৫৩ হাজার ৬৩৭টি মহিষ, ২ লাখ ৩৭ হাজার ৩৭৬টি ছাগল, ১ লাখ ৯ হাজার ৯০২টি ভেড়া, ২৪ লাখ ৩২ হাজার ৬১৮টি মুরগি ও ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৪৯৬টি হাঁস। বন্যা কবলিত এলাকায় ইতোমধ্যে ৯৩ হাজার ১৪৯ ডোজ গবাদি পশুর ভ্যাকসিন এবং ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৫ ডোজ পোল্ট্রি ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আইনুল হক ইনকিলাবকে বলেন, সা¤প্রতিক বন্যায় শুধু বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় পশুসম্পদেরই ক্ষতি হয়নি, পশুখাদ্যেরও সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
বন্যায় আক্রান্ত মুরগী খামারে মালিক জামালপুরে কাশেম আলী (৫০) জানান, তার খামারের ১০ হাজার মুরগী বন্যার পানিতে ভেঁসেগেছে। তার ক্ষতিপুরণের তালিকা করেছে অথচ সরকারি সাহায্য এখনো পাননি। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের মৎস্য চাষী আবুল হোসেন জানান. তার চারটি পুকুরের মাছ বের হয়েছে। অনেক ক্ষতি হয়েছে সরকারি ভাবে এখনো কোন বরাদ্দ পায়নি।
বন্যায় সারাদেশে এক লাখ ৮৪ হাজার মৎস্যখামারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫৫ হাজার মেট্রিক টন মাছ ও ২০ লাখ পোনা ভানের পানিতে ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে এ বছরের বন্যায় সারাদেশে মৎস্য খাতে ৮০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ৮০০ টাকার ক্ষতি হলেও মৎস্য অধিদপ্তর এসব ব্যক্তি পর্যায়ের মাছ চাষিদের সহায়তায় কিছু করতে পারছে না। কারণ এটা তাদের এখতিয়ারের মধ্যে নেই। তারা পুকুর, হাওর বা প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দিতে পারে। কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ে তারা সহায়তা দিতে পারে না। এ কারণে মৎস্য অধিদপ্তর এই সব প্রান্তিক চাষিদের সহায়তার জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাব অনুমোদন হলে তারা দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মাছ চাষিদের সহায়তা করতে পারেব। ৪৫৯ কোটি টাকার সহায়তার মধ্যে রয়েছে- সার, চুন এবং পোনা। মৎস্য অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য রপ্তানি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো হিমায়িত খাদ্য বা মাছ। প্রতিবছর বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে মাছ রপ্তানি করে এ খাত থেকে কয়েক হাজার মার্কিন ডলার আয় করে বাংলাদেশ। তবে সা¤প্রতিক বছরগুলোতে বন্যা, জলোচ্ছ¡াস আর মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় এ খাত থেকে রপ্তানি আয় কমেছে উল্লে খযোগ্য হারে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি আয় কমছে এ খাতে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬৩ কোটি ডলারের মাছ রপ্তানি হয়। পরের দুই অর্থবছরে তা যথাক্রমে ৫৬ কোটি ডলার ও ৫৩ কোটি ৫৮ লাখ ডলারে নেমে আসে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের চেয়ে এক দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও তা দুই দশমিক ৬৯ শতাংশ কম। তবে জন্য সরকারি কিছু বিভাগের অবহেলা ও উদাসীনতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্য, মাছ রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এই খাতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এই খাতটিতে সরকার যথেষ্ট নজর দিচ্ছে না। কৃষি খাতকে যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয় সরকার। মৎস্য খাতকে সেভাবে সরকার গুরুত্ব দেয় না। যতোটুকু উন্নতি হচ্ছে মাছচাষিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু সরকার যদি বার বার এই খাতকে অবহেলা করে তাহলে একসময় এটি অনেক খারাপ অবস্থায় পতিত হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরিফ আজাদ বলেন. ব্যক্তি পর্যায়ে সহায়তা করার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো বরাদ্দ নেই। আমরা প্রতিষ্ঠান বা হাওর, পুকুরকে সহায়তা দিতে পারি। প্রান্তিক মাছচাষিদের সহায়তার জন্য আমরা নতুন করে এই প্রস্তাব দিয়েছি। ত্রাণ মন্ত্রণালয় আমাদের প্রস্তাব অনুমোদন দিলে আমরা প্রান্তিক পর্যায়ের মৎস্য চাষিদের সহায়তা করতে পারবো। মহাপরিচালক বলেন, হাওরে আগাম বন্যায় কিন্তু আমরা সহায়তা দিয়েছি। হাওর অঞ্চলে ওই বন্যায় ১৩০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আমরা ৩৫ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছি। এই টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আমরা পেয়েছিলাম। এক প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, আমাদের প্রস্তাব অনুমোদন হলে আমরা আগামী মৎস্য মৌসুমে অর্থাৎ ফেব্রæয়ারি মাসে মৎস্যচাষিদের সহায়তা করতে পারবো। তারা নতুন করে মাছ চাষে মনোযোগী হতে পারবেন। আরিফ আজাদ বলেন, মাছ থেকে আমার ৬০ শতাংশ প্রোটিন পাই। কিন্তু এই খাতকে আমরা সেভাবে যতœ করি না। এই খাতে কোনো ভর্তুকি নেই। কৃষিসহ বেশ কিছু বিভাগে সরকার ব্যাপক ভর্তুকি দেয়। কিন্তু মৎস্য খাতে কোনো ভর্তি নেই। যে কারণে আমরা চাইলেই কিছু করতে পারি না।
###

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ