Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাগর্নো-কারাবাখ বিরোধ নিরসনে ধর্মীয় নেতাদের ক‚টনীতি

ট্রেন্ড নিউজ এজেন্সি | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মস্কোতে নাগর্নো-কারাবাখ বিরোধ নিয়ে নতুন দফা আলোচনা হতে যাচ্ছে আজ শুক্রবার। এবারের আলোচনার বিশেষত্ব হচ্ছে, এতে প্রেসিডেন্ট-পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের কেউ অংশ নিচ্ছেন না, এমনকি ওএসসিই-র (অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ) মিনস্ক গ্রæপের কো-চেয়াররাও নন।
এবার এ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার ধর্মীয় নেতারা। ককেশাসের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ-উল-ইসলাম আল্লাহশুকুর পাশাজাদেহ এবং আর্মেনিয়ান অ্যাপস্টোলিক চার্চের সর্বোচ্চ প্রধান
ক্যাথোলিকোস কেয়ারকিন দ্বিতীয় এ বৈঠকে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আর এ আলোচনায় বসার জন্য মধ্যস্থতা করেছেন মস্কো ও অল রাশিয়া কিরিলের প্যাট্রিয়ার্ক।
কোনো সমস্যা সমাধানে বেসরকারী কূটনীতি গত দশকে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার কর্মীদের সাথে ধর্মীয় নেতাদের মত বেসরকারী পর্যায় থেকে উঠে আসা এ উদ্যোগকে সমঝোতা প্রক্রিয়ায় মূল্যবান সম্পদ বলে বিবেচনা করছেন। তবে আজারবাইজানি-আর্মেনীয় ধর্মীয় কূটনীতির প্রেক্ষাপটে প্রত্যাশার যৌক্তিকতা কতটা তা এখনো দেখার অপেক্ষা। সম্প্রতি নাগর্নো-কারাবাখ বিরোধের কূটনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ জোরদার হয়েছে। ওএসসিই মিনস্ক গ্রæপের বিদায়ী কো-চেয়ার রিচার্ড হগল্যান্ডের শেষ ভাষণে এ বিরোধ সমাধানের লক্ষ্যে একটি রূপরেখা প্রদান করার পর বিষয়টি নিয়ে আবার নড়াচড়া শুরু হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে একটি বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। চলমান ঘটনার প্রেক্ষিতে শেখ-উল-ইসলাম ও ক্যাথোলিকোসের মধ্যে প্রত্যাশিত বৈঠকটিকে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া বেগবান করার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য যে ঐতিহাসিক ভাবে ককেশাসে বিরোধ নিরসনে ধর্মীয় কূটনীতি তাপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বেশিদিনের কথা নয়। রাশিয়া ও জর্জিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের অনুপস্থিতিতে দুই অর্থোডক্স চার্চের মধ্যে সংলাপ ক্ষতিপূরণ মূলক পন্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। জর্জিয়ান অর্থোডক্স চার্চের ক্যাথোলিকোস প্যাট্রিয়ার্ক ইলিয়া দ্বিতীয় প্রয়ই মস্কো সফর করতেন। তিনি শুধু মস্কো প্যাট্রিয়ার্কেটের সাথেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখেননি, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের সাথেও বন্ধুত্ব রজায় রাখেন। তার উচ্চ সামাজিক মর্যাদা বিবেচনায় তার এ সংযোগ ছিল অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি আজো।
মস্কো প্যাট্রিয়ার্কি আজো সরকারী ভাবে আবখাজিয়া ও দক্ষিণ ওসেটিয়ার ধর্মীয় কাঠামো স্বীকার করে না, বরং সেগুলোকে জর্জিয়ান চার্চের ক্যানুনিক্যাল এলাকা হিসেবে দেখে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে জর্জিয়ান অর্থোডক্স চার্চ ইউক্রেনের কিয়িভ প্যাটিয়ার্ককে সমর্থন করে না, মস্কো কর্তৃক সাস্প্রদায়িক বলে বিবেচিত হয়। আরো কথা, যখন ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চের ভিন্ন ঘরানার প্যাট্রিয়ার্ক বার্থোলোমিইউ প্রথম-এর সাথে সম্পর্কের কথা আসে তখন উভয় চার্চই অভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে।
এ প্রেক্ষাপটে শেখ-উল-ইসলাম ও কেয়ারকিন দ্বিতীয়-এর কূটনৈতিক কার্যক্রম সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আজারবাইজানের ধর্মীয় নেতা আল্লাহশুকুর পাশাজাদেহ তার দেশের ইসলামী সহযোগিতাা সংস্থার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ‘প্রথাবিরোধী’ ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারণা অভিযানে তিনি একজন সক্রিয় কর্মী। প্রথাবিরোধী ইসলামে জিহাদি আন্দোলনে মুসলমানদের অংশগ্রহণের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
অন্যদিকে কেয়ারকিন দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যপ্রাপ্ত। আর্মেনীয় বিদেশপ্রবাসী ও ভ্যাটিক্যানের সাথে ইন্টারঅ্যাকশনের ক্ষেত্রে তিনি এক অতিরিক্ত কূটনৈতিক চ্যানেলের ভূমিকা পালন করেন। আর্মেনিয়া-ইসরাইল সম্পর্ক রচনায় তিনি ছিলেন প্রধান ব্যক্তি। ২০০৩ সালে ইসরাইলের প্রধান আশকেনজাই রাব্বি জোনা মেটজোরের সাথে তার সাক্ষাত ছিল ২০০৫-এ একটি ইসরাইল প্রতিনিধিদলের ইয়েরেভান সফরের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল।
প্রত্যাশিত মস্কো বৈঠক শেখ-উল-ইসলাম ও ক্যাথোলিকোসের মধ্যে সংলাপের প্রথম অভিজ্ঞতা হবে না। ১৯৮৮ সালে শেখ-উল-ইসলাম ও ক্যাথোলিকোস ভ্যাজেনের মধ্যে প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় রোস্তভ-অন-ডনে ধর্মীয় নেতাদের কংগ্রেসের এক ফাঁকে। দ্বিতীয়বার তাদের মধ্যে সাক্ষাত হয় সোভিয়েত ভাঙ্গনের পর ১৯৯৩ সালে। তৎকালীন প্যাট্রিয়ার্ক আলেক্সি দ্বিতীয়-এর মধ্যস্থতায় শেখ-উল-ইসলাম ১৯৯৫ সালে কেয়ারকিন প্রথম এবং ২০০১ ও ২০০২ সালে তার উত্তরসুরি কেয়ারকিন দ্বিতীয়-এর সাথে বৈঠকে মিলিত হন।
২০১০ সালে অনুষ্ঠিত বিশ^ ধর্মীয় নেতাদের সম্মেলনে আর্মেনীয় চার্চের দূত প্রথমবারের মত বাকু সফর করেন। কেয়ারকিন দ্বিতীয় শুধু এ শীর্ষ ১ৈবঠকে অংশগ্রহণই করেন নি, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সাথেও সাক্ষাত করেন। দু’দেশের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা অবস্থায় তার এ সফর কৌতূহলের সৃষ্টি করে।
এর জবাবে শেখ-উল-ইসলাম ২০১১ সালে ইয়েরেভান সফর করেন্ এবং সিআইএস দেশগুলোর আন্তঃধর্মীয় কাউন্সিল ফোরামে অংশ নেন। রাশিয়ার প্যাট্রিয়ার্কি এ দু’টি ঘটনায় প্রধান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে প্রমান করে যে নাগর্নো-কারাবাখ সমস্যা বিষয়ে তাদের উল্লেখযোগ্য রকম অভিজ্ঞতা আছে।
উল্লেখিত সকল বৈঠকের বাইরে ধর্মীয় নেতারা সাধারণত সহিংসতার বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রদান করে থাকেন। নাগর্নো-কারাবাখ বিরোধ জাতীয়তাবাদের মোড়ক জড়ানো যেখানে ধর্ম প্রধান ভূমিকায় নয়, অতিরিক্ত হিসেবে উপস্থিত। তার উপর শেখ-উল-ইসলাম ও কেয়ারকিন দ্বিতীয় একবারে নাগরিক ও মানবাধিকার কর্মীদের মত বিরোধ কবলিত সমাজের অংশ হিসেবে উভয়েই শান্তির বৃহত্তর প্রত্যাশী। একই সাথে তারা বিরোধীদের সাথে সমঝোতা করা ও তাদের কোনো ছাড় না দেয়ার মনোভাবও পোষণ করেন। এ অবস্থায়, এটা আশ্চর্য নয় যে ধর্মীয় নেতাদের শান্তির আহবানের সাথে তাদের কথাবার্তায় একটু সামরিক টানও পাওয়া যায়। এতে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের কাছে যেখানে ধর্মের স্থান গৌণ, সেখানে ধর্মীয় নেতারা শেষেরটির দাবির দ্বারা সীমাবদ্ধ।
এ অবস্থায় এটা বিশ^াস করার জোরালো কারণ নেই যে শেখ-উল-ইসলাম ও কেয়ারকিন দ্বিতীয়-এর মধ্যকার বৈঠকে বিরোধ সমাধানে কোনো সাফল্য আসবে। তারপরও তাদের মধ্যকার এ সাক্ষাত চলমান বিরোধের উত্তেজনা হ্রাসে প্রভাব ফেলবে এবং বিরোধ-নিরসন উত্তর সময়ে সমঝোতা প্রক্রিয়ার সম্ভাব্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ