পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতিসংঘ মিয়ানমারের শরণার্থী সনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ও ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ডি ওয়াটকিনস গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে বিদায়ী সাক্ষাত করতে গেলে এ প্রস্তাব দেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন যে, মিয়ানমারের নাগরিকদের দ্রুত ফিরিয়ে নিতে জাতিসংঘকে দেশটির উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহীদের পৃষ্ঠপোষক, অর্থদাতা ও অস্ত্র সরবরাহকারীদের খুঁজে বের করার জন্যও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বর্ডার গার্ডকে শরণার্থী এবং তাদের মধ্যে অধিক নির্যাতিত নারী, বয়স্ক মানুষ ও দুর্ভোগের শিকার শিশুদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। সরকার শরণার্থীদের আশ্রয়ের জন্য ভাষানচর দ্বীপকে নির্ধারণ করেছে। আবাসিক প্রতিনিধি মিয়ানমারের শরণার্থীদের ব্যাপারে বাংলাদেশের মানবিক নীতির ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যা যা করণীয় বাংলাদেশ তা যথাযথভাবে পালন করছে’।
ওয়াটকিনস বলেন, চলমান দফায় বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মিয়ানমারের নাগরিক পালিয়ে এসেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান যে, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ব্যক্তিগতভাবে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং এ নিয়ে তিনি কয়েকটি বিবৃতিও দিয়েছেন। ‘তিনি এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাবও দিয়েছেন’। বৈঠকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যা নিয়ে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের নিত্যসঙ্গী এবং আমরা এটা মোকাবেলায় সবসময় প্রস্তুত থাকি। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক বাংলাদেশের মানুষের অভিযোজন ক্ষমতার প্রশংসা করে বলেন, এদেশের মানুষের প্রাণবন্ততার ইতিহাস রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খুবই ইতিবাচক ধারায় এগিয়ে চলছে।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৮ সালের মহাপ্লাবনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ওই সময় দেশের ৭০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হওয়ার পর ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে, ২ কোটি মানুষ মারা যাবে। কিন্তু আমাদের সরকার দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সবকিছুই করছে। তিনি তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়নে তার সরকারের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। ওয়াটকিনস বাংলাদেশে তার দায়িত্বপালনকালে চমৎকার সমর্থনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত থাকার আহ্বান
এদিকে গতকাল তার কার্যালয়ে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের সভায় ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, দুর্যোগকালীন প্রস্তুতি ভাল থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম রাখা সম্ভব হয়। তিনি বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ একটি দুর্যোগ প্রবণ দেশ। আমাদের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গেই বসবাস করতে হবে। কাজেই সঠিক পরিকল্পনা থাকলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখা সম্ভব। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সচিববৃন্দ, তিনবাহিনী প্রধানগণ এবং সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় তার সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। যখনই কোন দুর্যোগের খবর পাওয়া গেছে তখনই তারা সেখানে ছুটে গেছেন এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ’৯১’র ঘূর্ণিঝড়ের উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি সে সময় দুর্যোগের খবর পর্যন্ত রাখার প্রয়োজন মনে করেনি। এ বারের বন্যায় সরকারের দুর্যোগকালীন প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল বলেই কেউ না খেয়ে মরেনি। সরকারের সকল দপ্তরের পাশাপাশি তার দলের নেতা-কর্মীরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে বলেই দুর্গত মানুষের কাছে খাদ্য, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ত্রাণসামগ্রী যথাসময়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ অব্যাহত রেখে জনগণের ভোগান্তি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সম্ভাব্য সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সরকার খাদ্য আমদানি করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। দেশের পার্বত্য অঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী, দমকলবাহিনী, পুলিশ এবং অন্যান্য সংস্থা সেখান থেকে দুর্গত জনগণকে উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে। বন্যার পানি নেমে যাবার সঙ্গে সঙ্গে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সদস্য এবং তার দলের নেতা-কর্মীরা দিনরাত মাঠে রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এ সময় সকলকে একযোগে কাজ করে যাবারও আহবান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বন্যা ঘর-বাড়ি ও ফসলের ক্ষতি কওে কৃষকের জন্য দুর্ভোগ বয়ে আনলেও এটি সঙ্গে করে অনেক পলি মাটিও বয়ে আনে যা জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। উপকূলীয় জলোচ্ছাসও বন্যা প্রতিরোধে বঙ্গবন্ধুর মুজিব কেল্লা তৈরির কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু এক হাজার সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যার ধারবাহিকতায় বর্তমান সরকার বন্যা ও জলোচ্ছাস প্রতিরোধে বহুমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে। তিনি বলেন, তার সরকার ১৯৯৮ সালে এক দীর্ঘমেয়াদী বন্যা প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছিল। যেখানে দেশের ৭০ শতাংশ ভূখন্ড পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল এবং অন্তত ২ কোটি মানুষ মারা যাবার আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তা অত্যন্ত সফলভাবেই মোবাবেলা করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশ এখন যে কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করেছে। জাতির পিতা বন্যা মোবাবেলায় ৪৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন আর এই সরকার ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক গড়ে তুলছে। সূত্র : বাসস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।