ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
পৃথিবীতে কেউ তো বেওয়ারিশ হয়ে জন্মায় না। তাহলে মানুষকে মৃত্যুর পর কেন বেওয়ারিশ লাশ হতে হবে? সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে প্রতিটি মানব সন্তান মা-বাবার হাত ধরে পৃথিবীতে আসে। জন্মের পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মানুষ জীবিত থাকে এবং মৃত্যুর সময় ওয়ারিশ হিসেবে কাউকে না কাউকে পৃথিবীতে রেখে যায়। এভাবে যুগ যুগ ধরে মানুষ ওয়ারিশ রেখে যাচ্ছে। একটা মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যু যেখানে মেনে নেয়া মেলা ভার সেখানে বেওয়ারিশ লাশ হওয়াটা সত্যিই বেদনাদায়ক। সারাদেশে খুন, ধর্ষণ, অপহরণের মতো বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। দেশে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নেই। তারপরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি লক্ষ করার মতো। একের পর এক লোমহর্ষক হত্যাকান্ড আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কখনো গলাকেটে, কখনো গুলি করে, কখনো গুম করে মানুষ খুন করা হচ্ছে। একটি খুনের তদন্ত শুরু না হতেই আরেকটি খুনের নির্মম কাহিনী পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশের আনাচে কানাচে বেওয়ারিশ লাশ মিলছে খাল-বিল, নদী, মহাসড়কের পাশে এমনকি ডাস্টবিনেও লাশ পাওয়া যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে এর হার আশংকাজনক হারে বেড়ে গেলেও ক্ষমতাসীনদের টনক নড়েনি। দেশের সন্তানতুল্য নাগরিকদের জীবন-ইজ্জতের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব হলেও সরকার অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ভাষ্যমতে, ২০১৬ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত বিচার বহির্ভূতভাবে ১১৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। গুমের শিকার হয়েছেন ৮৪ জন। ক্রসফায়ারে মৃত্যু হয়েছে ১৩৭ জন। আর বেওয়ারিশ লাশের বিষয়ে বলা হচ্ছে, বেশিরভাগ সময়েই লাশগুলো থাকে গলিত বা অর্ধগলিত। অনেক সময় পুরো লাশটিও পাওয়া যায় না। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর এগুলো বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম দাফন করছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিমাসে দেড়শ’র মতো লাশ দাফন হচ্ছে বেওয়ারিশ হিসেবে। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে প্রতিদিন গড়ে ৪টি লাশ যাচ্ছে বেওয়ারিশ হিসেবে।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রিপোর্টে ওঠে এসেছে যে, চলতি বছরের জুলাই মাসে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকা থেকে ১১৪টি লাশ দাফন করা হয়েছে বেওয়ারিশ হিসেবে। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ১ হাজার ৩০০ লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই মাসে ১০৯টি, আগস্ট মাসে ১১১টি, সেপ্টেম্বর মাসে ১১২টি, অক্টোবর মাসে ১২২টি, নভেম্বর মাসে ২০৯টি, ডিসেম্বর মাসে ১০৮টি, জানুয়ারি মাসে ১০১টি, ফেব্রæয়ারি মাসে ৬৮টি, মার্চ ১১১টি, এপ্রিল-১১৮টি, মে মাসে ১২৭টি, জুন মাসে ১০৪টি লাশ দাফন করা হয়। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১৩৫৭টি লাশ দাফন করা হয়। পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৬ সালে ২০৯৯টি, ২০০৭ সালে ২২৫৯টি, ২০০৮ সালে ১৮৬৭টি, ২০০৯ সালে ১৯৮১টি, ২০১০ সালে ১২০৪টি, ২০১১ সালের ১১৯২টি, ২০১২ সালে ১২৪৭টি, ২০১৩ সালে ১৪৩৭, ২০১৪ সালে ১৪৯৫টি, ২০১৫ সালে ১২৮৪টি, ২০১৬ সালে ১৪৩০টি লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয় আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের পক্ষ থেকে। শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া গতানুগতিক ও দায়সারা হওয়ার কারণে বেওয়ারিশ লাশগুলোর পরিচয় নিরূপণ করা সম্ভব হয় না। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে অনেক লাশের পরিচয় নির্ণয় করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে। রাজধানী ঢাকা শহরেই প্রতি বছর গড়ে দেড় হাজারের মতো বেওয়ারিশ লাশ উদ্ধার করা হয়। আর সেসব লাশে আঘাতের ধরন ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট মিলিয়ে ৮০ শতাংশই হত্যাকান্ড বলে প্রতীয়মান হয়। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় এসব হত্যাকান্ড কী কারণে ঘটেছে সে বিষয়টি অজানাই রয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর মতে, লাশ শনাক্তে পুলিশের যথাযথ পদক্ষেপ না থাকায় বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মানুষের মৌলিক অধিকার যখন ভূলুণ্ঠিত হয় তখনই কেবল গুম, খুন, অপহরণ, বেওয়ারিশের সংখ্যা বাড়ে। রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তম্ভে আইনের শাসন না থাকলে দুর্বৃত্তায়ন বেড়ে যায়। তখনই বেশি করে গুম, খুন হয়। উন্নয়নের বুলি প্রচার করার চেয়ে বেশি প্রয়োজন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। সরকারের সর্বাগ্রে এ দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।