পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে ধর্ষণের যেন উৎসব চলছে। এ কারণে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। শিশু, কিশোরী কিংবা বয়স্ক নারী কেউ নিরাপদ নন। প্রতিদিনই শিশু থেকে বয়স্ক মহিলা বর্বরতার শিকার হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, পাশবিক নির্যাতনের পর তাদের হত্যা করা হচ্ছে। গণপরিবহনে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে, অফিসে কিংবা বাসা-বাড়িতে, রাস্তা-ঘাটে সর্বত্রই নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছেন।
তারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন বাসে, ট্রাকে, ট্রেনে, বাসা-বাড়িতে, কর্মক্ষেত্রে কোথাও নারী/শিশু নিরাপদ নয়। তিন বছরের কন্যা শিশু থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধা, প্রতিবন্ধী নারী, কেউই বাদ যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ধর্ষণের যেন উৎসব চলছে। বগুড়ায় কিশোরী ধর্ষণের আলোচিত ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই টাঙ্গাইলে বাসে গণধর্ষণের পর এক উচ্চ শিক্ষিত নারীকে হত্যা করে লাশ জঙ্গলে ফেলে দেয় দুবৃর্ত্তরা। তার নাম রুপা। গতকাল আদালতের নির্দেশে ওই নারীর লাশ কবর থেকে তোলা হয়েছে। গতকাল রাজধানীঢর রামপুরায় ঘরে ঢুকে এক কিশোরী গৃহবধূকে গণ ধর্ষণ করেছে এলাকার বখাটেরা। এর আগে বাড্ডায় তিন বছরে শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এভাবে একের পর এক ধর্ষণ, গণধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে।
বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুযায়ী গত ৬ বছরের মধ্যে প্রতিবছর গড়ে যতটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে গত ৮ মাসেই তার চেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থার’ তথ্যানুযায়ী গত জানুয়ারি-আগস্ট ২০১৭ পর্যন্ত ২৭৬ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ সময়ে ধর্ষিত হয়েছেন ৭৬২ জন নারী। শুধু জুলাই মাসে ৯৭ জন নারী ধর্ষিত হয়েছেন। আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫২ জনকে। আগস্ট মাসে ১০২ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, ৪৫ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
চলতি বছরের শুধু আগস্ট মাসেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০২ জন নারী ও শিশু। এছাড়া শিশু হত্যা ২৮ জন এবং বিভিন্ন কারনে আত্মহত্যা করেছেন ৬৬ জন। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সংগৃহিত তথ্যের ভিত্তিতে এই উপাত্ত গতকাল পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার আগষ্ট মাসের মনিটরিং পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এই বছর আগস্ট মাসে ১০২ জন ধর্ষণের শিকার এবং গণ ধর্ষণের শিকার ১৭ জন নারী। এর মধ্যে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪০ জন।
রাজধানীর ৪৯ থানায় নারী ও শিশু ধর্ষণসহ তাদের উপর সংঘটিত ঘটনার স্পর্শকাতর মামলাগুলো তদন্তের দায়িত্ব পড়ে তেজগাঁওয়ের ওম্যান সাপোর্ট ও ইনভেস্টিগেশন সেন্টারের উপর। চলতি বছরের অর্ধেকে এরই মধ্যে সেখানে সাস্প্রতিক অন্য বছরগুলোর প্রায় সমানসংখ্যক মামলা তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত সেখানে স্পর্শকাতর ৭৪টি ধর্ষণের মামলা পাঠানো হয়। এছাড়া ১৫টি শ্লীলতাহানি, ৫৫টি অপহরণ ও ১০২টি যৌতুক ও বাকি ২টি অন্যান্য মামলা স্থানান্তর হয়েছে। তার আগের বছর ১২৭টি ধর্ষণের মামলা সেখানে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল। ২০১২ সালে ৭১, ২০১৩ সালে ৭৬, ২০১৪ সালে ৮৫ ও ২০১৫ সালে ৬৬ মামলা সেখানে স্থানান্তর হয়। ওই ৬ বছরের মধ্যে রাজধানীতে ক্রমেই (২০১৫ সাল ছাড়া) নারী ও শিশু ধর্ষণের স্পর্শকাতর মামলা বেড়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ওম্যান সাপোর্ট ও ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, এখানে নারী ও শিশু ধর্ষণসহ তাদের উপর নির্মমতার স্পর্শকাতর মামলাগুলো তদন্তে জন্য আসে। অতীতের চেয়ে এখন সে ধরনের মামলা বেশি আসছে। নারী এবং শিশু ধর্ষণও বেড়েছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার (বিএমবিএস) হিসাবে দেখা গেছে ২০১২ সাল থেকে নারী ধর্ষণের হার ক্রমেই (২০১৪ ছাড়া) বাড়ছে। ২০১২ সালে ৮০ নারী ধর্ষণ, ৩০ জন ধর্ষণের পর খুন ও ২৬ নারী গণধর্ষণের শিকার হন। ২০১৩ সালে ১০৭ নারী ধর্ষণ, ১৬ নারী ধর্ষণের পর খুন এবং ৩৫ নারী গণধর্ষণের কবলে পড়েন। ২০১৪ সালে ১৫৩ নারী ধর্ষিতা, ৪৮ জন খুন ও ৮৬ জন গণধর্ষণের শিকার হন। ২০১৫ সালে ১৩৪ ধর্ষণ, ৪৮ জন ধর্ষণের পর হত্যা ও ১০৩ জন নারী গণধর্ষণের কবলে পড়েন। ২০১৬ সালে ১৪১ নারী ধর্ষিতা এবং ৩৩ জন ধর্ষণ শেষে খুন ও ৭৭ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
রাজধানীর রামপুরায় এক কিশোরী গৃহবধূকে (১৭) গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত বুধবার বিকালে দীন ইসলাম নামের এক বখাটেসহ স্থানীয় ৪/৫ জন বাসায় ঢুকে ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করে বলে জানিয়েছেন কিশোরীর স্বামী।
রাতে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গৃহবধূর স্বামী হাসপাতালে জানান, রামপুরার ওয়াপদা রোডের জাহাজ বিল্ডিং এলাকার একটি বাসায় তিনি স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। ঘটনার সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। এ সুযোগে বিকাল ৫টার দিকে স্থানীয় বখাটে দীন ইসলামসহ চার-পাঁচজন বাসায় ঢুকে তার স্ত্রীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ধর্ষণের পর পালিয়ে যায়। পরে তিনি বাসায় ফিরলে ঘটনাটি জানায় স্ত্রী। রাতে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য প্রথমে গাইনি বিভাগে পাঠানো হয়। পরে তাকে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়।
ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বলেন, মেয়েটিকে গাইনি বিভাগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরে তাকে ওসিসিতে পাঠানো হবে।’ ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘গণধর্ষণের শিকার এক গৃহবধূকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা রামপুরা থানায় বিষয়টি জানিয়েছি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন,মামলার রায়ের দীর্ঘসূত্রতা আইনের ফাঁক-ফোকরের কারণে অনেক সময় ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় না। ধর্ষিতাকেই প্রমাণ করতে হয় যে, সে ধর্ষিত হয়েছে। মেডিকেল চেকআপ, তদন্ত কমিটি কর্তৃক তদন্ত করতে গিয়ে ধর্ষিতা নারী যে সব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় এতে করে ধর্ষিতাকে এবং তার পরিবারকে সামাজিকভাবে খাটো/হেয়পতিপন্ন করা ছাড়াও এক বিভ্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়া হয়।
স¤প্রতি ‘ব্রাকে’র এক গবেষণায় দেখা গেছে ৯৯% ধর্ষণের মামলার রায় হয় না। ২০-২২ বছর ধরে চলার পরও মামলার রায় হয়না এমন রেকর্ডও আছে। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও মামলার সুরাহা না হওয়া। মামলার বাদী আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতে একসময় বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন এমন নজিরও আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।