পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পঞ্চায়েত হাবিব : ঈদ ধর্মীয় উৎসব ও নানা সময় অতিদরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রæপ ফিডিং) কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে ২০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হলেও এবার সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে অতিদরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য দেয়া ভিজিএফ কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণা করায় আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন জনপ্রতিনিধিরা।
মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, প্রতি বছর স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির কবরস্থানসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাÐে অতিদরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ‘ভিজিএফ’ (ভালনারেবল গ্রæপ ফিডিং) কর্মসূচির আওতায় প্রতি ঈদের আগে দুস্থদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়। এবার খাদ্য সঙ্কটের কারণে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সরকার দলীয় এমপি, সিটি মেয়র, জেলা-উপজেলা-পৌরসভা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এতে দুস্থদের ঈদের আনন্দ অনেকটাই মøøান হবে বলে তারা মনে করেন। দুর্যোগ মোকাবেলার স্বার্থে ঈদের ভিজিএফ কর্মসূচি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গত বছর ঈদুল ফিতরে ৬৪ জেলার ৪৮৯ উপজেলায় ৮৮ লাখ দুস্থ পরিবারকে বিনামূল্যে ২০ কেজি করে চাল সরবরাহ করে সরকার। এ জন্য এক লাখ ৯৮ হাজার ৩৬৫ টন চাল বরাদ্দ হয়। এর আগে গত ২২ ফেব্রæয়ারি খাদ্য অধিদফতর চালের মজুদ সঙ্কটের যুক্তিতে ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ খাতে ২০ কেজির পরিবর্তে ১০ কেজি করে চাল দেয়ার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু এখন পুরো কর্মসূচিই বাতিল হলো।
বর্তমানে কার্ডধারী প্রায় এক কোটি পরিবার ভিজিএফের সুবিধাভোগী। এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রধান ধর্মীয় উৎসব ও নানা সময় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হতো। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর সূত্র জানায়, গত বছর ঈদুল আজহায় ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ৬৪ জেলার ৪৮৯ উপজেলায় ৮৮ লাখ দুস্থ পরিবারকে বিনামূল্যে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার মাধ্যমে তা বিতরণ করা হয়। এই ভিজিএফ বিতরণের ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যদেরও একটি নির্দেশনা থাকে। কিন্তু আগামী ঈদে বরাদ্দের বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি। দেশের প্রায় এক কোটি অতিদরিদ্র পরিবার ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পেয়ে আসছিল। প্রতি ঈদের আগে ভিজিএফ কার্ডধারীদের ২০ কেজি করে চাল দেয়া হতো। গত ঈদেও তা ১০ কেজি করে দেয়া হয়েছে। ঈদুল আজহায় ওই চাল না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ৬ আগস্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের পরিচালক (ভিজিডি) গিয়াসউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে ঈদুল আজহায় ভিজিএফ বরাদ্দ স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর আগে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে ঈদুল আজহায় ভিজিএফ বরাদ্দ বাতিল করে ওই চাল বন্যার্তদের মাঝে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেই ভিজিএফ কর্মসূচি বন্ধ করার প্রস্তাব করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে সাধারণ ভিজিএফ নামে একটি খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম প্রচলিত আছে। এ ছাড়া দুর্যোগ উপলক্ষে সরাসরি খাদ্য বিতরণে খাদ্য মন্ত্রণালয় দুর্যোগ মন্ত্রণালয়কে যথেষ্ট বরাদ্দ দিয়ে থাকে। আমার মনে হয়, এখন ভিজিএফ কার্যক্রম পরিচালনা করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সরকারি মজুদে কোনো ঘাটতি নেই। হাওর এলাকায় যথাযথ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। মূলত উৎসবের সময় আমরা যে ভিজিএফ চাল দিতাম, তা বন্ধ করা হয়ছে। কিন্তু দুর্যোগের সময় দুর্গত ও গরিব মানুষদের যে ভিজিএফ দেয়া হয়, তা চলবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ত্রাণ শাখার অতিরিক্ত সচিব মো: জাকির হোসেন আকন্দ ইনকিলাবকে বলেন, বন্যা মোকাবেলার লক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে আগামী ঈদে ভিজিএফ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত উত্তরাঞ্চল ও হাওর এলাকায় চাল বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিতদের মাঝে চাল বিতরণের কাজ শুরু হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রতি ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত ৩ আগস্ট থেকে জিআর ৭ হাজার মেট্রিক টন চাল দেয়া হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে বন্যাকবলিতদের মাঝে এ পর্যন্ত গত ২৮ আগস্ট ৩৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল এবং ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। দেশে ৬৪ জেলায় ভিজিএফ বন্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকার দলীয় বেশির ভাগ সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সংসদ সদস্য ইনকিলাবকে বলেন, দুস্থ ও অসহায় পরিবারগুলো ঈদের আগে ভিজিএফের অপেক্ষায় থাকে। অথচ পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এই বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়া হলো। এতে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নিবার্চন কমিশনে সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে এটা বন্ধ করা সঠিক হয়নি। এর প্রভাব রাজনীতিতে পড়বে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত এই বিশেষ কর্মসূচির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। আর চালের খুচরা মূল্য যেখানে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না, সেখানে এই সিদ্ধান্ত গরিব মানুষকে আরো বিপাকে ফেলবে। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ইনকিলাবকে বলেন, আগে দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে। আর গত কয়েক বছরে ভিজিএফ কর্মসূচির কারণে দরিদ্র মানুষের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ফলে একটি ঈদে বরাদ্দ স্থগিত থাকলে খুব বেশি সঙ্কট হবে না। বন্যা মোকাবেলা শেষে আবারো কর্মসূচি চালু হবে।
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হায়দার আলী মিঞা ইনকিলাবকে বলেন, সরকার আগে থেকে খাদ্য সংগ্রহ করতে না পারায় কারণে এগুলো বন্ধ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত এই বিশেষ কর্মসূচির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। আমার মনে হয়, এ গুলো নিয়ে প্রতিবছর দুর্নীতি হয়; সে জন্য বন্ধ করেছে সরকার। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মশ্বিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, ঈদের আগে গরিব মানুষগুলো চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে আসে কিছু বরাদ্দ পাওয়ার আশায়। কিন্তু এবার কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে। তারপর এলাকায় পানিবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বরাদ্দ না পেলে গরিব মানুষগুলোর কষ্ট বাড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।