Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাহায্যের আশায় বানভাসিদের আহাজারি

| প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বানের পানি নামলেও খাবার নেই ওষুধ নেই : নদ-নদীর পানি ৮০ পয়েন্টে হ্রাস : এখনও ১২ নদীর ১৪ স্থানে বিপদসীমার উপরে : দেশের বিভিন্ন স্থানে অল্প সল্প ত্রান বিতরণ
ইনকিলাব ডেস্ক : দেশ জুড়ে বানের ভয়াবহতা কমেছে। নদ-নদীর পানি কমছে, আর দৃশ্যমান হচ্ছে বানের ক্ষতচিহ্ন। বানবাসিদের অসহায় আর্তনাদ দানশীল ধনবান হৃদয়বান মানুষের কানে পৌঁছেনি হয়তো। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো বন্যার্ত অসহায় লাখ লাখ মানুষের দুঃখ কষ্টের তথ্যের আলোকে ডেস্ক রিপোর্ট-
বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, মানবিক সাহায্য-সহযোগিতার আশায় তাকিয়ে আছে লাখ লাখ বন্যার্ত অসহায় মানুষ। দেশের রংপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চল, টাঙ্গাইলসহ মধ্যাঞ্চল, নেত্রকোনাসহ উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও বৃহত্তর সিলেটসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জুলাই-আগস্টের সর্বনাশা বন্যা কেড়ে নিয়েছে ফসল, ক্ষেত-খামার, হাজার হাজার বাড়িঘর। এর আগে পাহাড়ি ঢল, পাহাড় ধস ও বন্যায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম, পার্বত্য রাঙামাটি, বান্দরবান অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত এপ্রিল-মে মাসে হাওরের ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় সর্বস্ব হারায় অগণিত হাওরবাসী। লাখো বাসভাসি মানুষ হারিয়ে ফেলেছে বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বনটুকুও। সামনেই আগামী শনিবার পবিত্র ঈদুল আযহা। আর ঈদের আনন্দে সামিল হওয়ার মতো সামান্যতমও আর্থিক সামর্থ্য এমনকি নিজেদের বাড়িঘরে পরিবার-পরিজনবর্গ মিলিত হওয়ার অবস্থা এ মুহূর্তে অধিকাংশ বানভাসি মানুষের নেই। তারা এখন সরকার, সামর্থ্যবান ও উদার ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন দাতা প্রতিষ্ঠান, সংগঠনের দিকে চেয়ে আছে হয়তোবা কেউ এগিয়ে আসবেন মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলো থেকে বানের পানি নামছে। তবে বানভাসি মানুষের খাবার নেই, ওষুধ নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামত করে তারা ফের নতুন জীবনের গতি শুরু করতে চায়। কিন্তু কে তৈরি করে দেবে তাদের বিধ্বস্ত ঘরবাড়িগুলো!
এদিকে গতকাল (বুধবার) পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে, দেশে নদ-নদীর ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে পানি হ্রাস পাচ্ছে ৮০টি পয়েন্টে। ১২টি নদী ১৪টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধি পায় মাত্র ১০টি পয়েন্টে। পূর্বাভাসে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মার নদ-নদীসমূহের পানি হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও তা বজায় থাকতে পারে। আর সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও হ্রাস পেতে পারে।
উল্লেখযোগ্য নদ-নদীসমূহের প্রবাহের সর্বশেষ অবস্থান ছিল, উত্তরের জনপদের চক-রহিমপুরে করতোয়ার পানি হ্রাস-বৃদ্ধিতে বিপদসীমার ৬ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সিংরায় গুর নদীর পানি আরো হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৫১ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। আত্রাই নদীর পানি আরও হ্রাস পেয়ে গতকাল বাঘাবাড়িতে বিপদসীমার ২ সেমি নিচে নামে। ধলেশ্বরী নদীর পানির সমতল আরো হ্রাস পেয়ে টাঙ্গাইলের এলাসিনে মাত্র ৭ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। উত্তরাঞ্চলের মহানন্দা নদীর পানি আরো হ্রাস পেয়ে রোহনপুরে বিপদসীমার ১৩ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
অন্যদিকে মেঘনা অববাহিকায় সিলেটের সুরমা নদীর পানির সমতল গতকাল কিছুটা হ্রাস পেয়ে কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৬ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল ৩টি পয়েন্টে আরও হ্রাস পেয়েছে। এতে করে অমলশীদে বিপদসীমার ৬৫ সেমি, শেওলায় ৬৬ সেমি এবং শেরপুর-সিলেটে ১৬ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। দিরাইয়ে পুরাতন-সুরমা নদীর পানি অপরিবর্তিত থাকায় বিপদসীমার ১৩ সেমি উপরে, নেত্রকোণা জেলায় কংস নদীর পানি আরো হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ২৫ সেমি উপরে এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় তিতাস নদীর পানি কিছুটা ফের বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৭ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
গোপালপুরে বন্যার্তদের মাঝে বিএনপির ত্রাণ বিতরণ
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, বিএনপি চেয়ারপার্স বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় টাঙ্গাইলের গোপালপুরে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি। গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের সোনামুই গ্রামে এ ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপি’র সভাপতি শামছুল আলম তোফা। ঝাওয়াইল ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপি সহ-সভাপতি ও গোপালপুর উপজেলা বিএনপি আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম রুবেল, জেলা বিএনপি প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মনিরুল হক, উপজেলা বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক আমিনুল ইসলামসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। পরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ তিন শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
নওগাঁয় বন্যার্তদের বিএনপির ত্রাণ বিতরণ
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা জানান, নওগাঁয় বন্যা দূর্গতদের মাঝে বিএনপি’র উদ্যোগে ত্রানসামগ্রী বিতরন করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশব্যাপী বন্যার্তদের মধ্যে ত্রান বিতরন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই ত্রানসামগ্রী বিতরন করা হয়।
গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় তিলকপুর ইউনিয়নের ফতেপুর ইচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঐ ইউনিয়নের দূর্গতদের মধ্যে ত্রান বিতরন করে কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এবং রাজশাহী বিভঅগের ত্রান বিতরন কার্যক্রমের সমন্বয়ক এ্যাড. রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। পরে তিনি পর্যায়ক্রমে সদর উপজেলার বোয়ালিয়া এবং চন্ডিপুর ইউনিয়নে ত্রান বিতরন করেন। এই তিনটি পৃথক স্থানে মোট ২ হাজার ২শত পরিবারের মধ্যে ত্রান বিতরন করা হয়।এ সময় নওগাঁ জেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন ও শফিউল আজম রানা, জেলা যুবদলের সভাপতি বায়েজিৎ হোসেন পলাশসহ জেলা বিএনপি, ছাত্রদল, যবদল, মহিলা দল, শ্রমিকদল, তাঁতীদলসহ বিভিন্ন অংগ সংগঠন সমূহের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
একশত ৫০ জন বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ
পীরগাছা (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, রংপুরের পীরগাছায় গতকাল বুধবার দুপুরে ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকার উদ্যোগে বন্যাদূর্গতদের মাঝে নগদ অর্থ ও গৃহসামগ্রী হিসাবে ঢেউ টিন বিতরণ করা হয়। উপজেলা পরিষদ হলরুমে ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা ও এসটিএস গ্রæপের উদ্যোগে একশত ৫০ জন বন্যাদূর্গতদের মাঝে এক বান্ডিল ঢেউ টিন ও নগদ এক হাজার করে টাকা বিতরণ করা হয়। বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুন্সি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ