ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
চামড়া শিল্প দেশের রফতানি আয়ের একটি বিরাট বড় উৎস। বিভিন্ন সমস্যার কারণে এ শিল্প এখনও স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে পারছে না। অতিদ্রুত যদি সমস্যার সমাধান করা যায় তাহলে হয়তো শিল্পটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আর ক’দিন পরই ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। দেশের ট্যানারি শিল্পের প্রধান উপাদান কাঁচা চামড়ার প্রায় ৬০-৭০ শতাংশই আসে এ সময়। গরু, খাসি, মহিষসহ এক কোটির ওপরে চামড়া সংগ্রহ করা হয় কোরবানির ঈদে। কিন্তু একদিকে হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে অপ্রস্তুত সাভারের ট্যানারি পল্লী- এ কারণে ঈদে কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে সঙ্কট দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই রকম সঙ্কট দেখা দিয়েছিল গত কোরবানির ঈদেও। সে কারণে ভারতে পাচার হওয়ার পাশাপাশি সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়েছিল প্রায় ২৫ শতাংশ চামড়া। আগে থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এবার চামড়া পাচার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কাঁচা চামড়া নষ্টের হারও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। যদিও গত বছরের চেয়ে এবার সাভার ট্যানারি পল্লীর সার্বিক অবস্থা বেশ ভালো, তবুও আমরা জোর দিয়ে বলতে পারছি না, ঈদের সব চামড়া সেখানে ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যাবে। ১৫৫টি ট্যানারি কারখানার মধ্যে মাত্র ৬০টির মতো কারখানা কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করার অবস্থায় পৌঁছেছে। বাকিগুলো এখনও প্রস্তুত হয়নি। হাজারীবাগে এবার এক পিস কাঁচা চামড়াও নেওয়া যাবে না। সে কারণে সেখানকার সব কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এজন্য আশঙ্কায় আছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা, আসন্ন কোরবানির ঈদে কাঁচা চামড়া নিয়ে সঙ্কট দেখা দেবে। তবে এখনও বেশ কিছু দিন বাকি রয়েছে, আশা করা যায়, এ সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
কোরবানির ঈদের চামড়া সংরক্ষণে সাভারের চামড়া শিল্পপল্লীর সক্ষমতায় এখনও অনেক ঘাটতি রয়েছে। ধীরগতিতে চলছে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। এতে কোরবানির ঈদের প্রায় এক কোটি চামড়ার মধ্যে ৩৫-৪০ লাখ পিস কাঁচা চামড়ার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেখানে পানি ও বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ৬০টি প্রতিষ্ঠান চামড়া উৎপাদন শুরু করেছে। ট্যানিং ড্রাম স্থাপন করেছে ৭৭টি প্রতিষ্ঠান। আর কারখানা চালুর জন্য ৭২টি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুতের জন্য আবেদন করেছে। তিতাস গ্যাস সংযোগ দিয়েছে মাত্র ২০টি প্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়া পানির সংযোগ নিয়েছে ৫৫টি প্রতিষ্ঠান। সুতরাং দেখাই যাচ্ছে, এখনও অনেক কারখানার প্রস্তুতি সম্পন্ন হতে অনেক বাকি। জানা গেছে, হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোর এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া চলছে ধীরগতিতে। শিল্প মালিকদের মতে, ব্যবসায়ই তো বন্ধ রাখা হয়েছে। এই অবস্থায় এবারের কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে কোনো প্রস্তুতি নেই মালিকদের। কোরবানির ঈদের আগে যাতে অন্তত ১০০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি চালু করা যায় সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। আবার চামড়া সংরক্ষণ ও মজুদে প্রয়োজন হয় লবণের। সেই লবণের দাম এখন প্রতি কেজি ২৫-৪০ টাকা পর্যন্ত। কোরবানির ঈদের আগে লবণের দাম না কমলে চামড়া সংরক্ষণ বাধাগ্রস্ত হবে। চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি কাঁচা চামড়ার বাজারে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। ইতোমধ্যে লবণ আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন পোস্তার কাঁচা চামড়ার আড়ত মালিক ও ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট তথ্য মতে, সাভার চামড়া শিল্পপল্লীর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ধীরগতিতে হওয়ার কারণেই চামড়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চালুকৃত দুটি সিইটিপি দিয়ে আপাতত বর্জ্য পরিশোধনের কাজ চলছে। হাজারীবাগ থেকে সব ধরনের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হওয়ার পরই কেবল উদ্যোক্তারা দ্রæত সাভারে স্থানান্তরের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তারপরও কাজ চলছে ধীরগতিতে। সাভারে পানি ও বিদ্যুৎ নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে চামড়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যে গ্যাসের তা কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। সংযোগ চাইলেও দেওয়া হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, গত ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) চামড়া শিল্প নগরী প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০০৫ সালে। প্রথম দফায় প্রকল্পটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১০ সাল পর্যন্ত। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকায়। তাতেও কাজ শেষ হয়নি। আবারও ২০১২ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন হয় একনেকে। এ সময় ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকায়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিসিক। শিল্পনগরে ২০৫টি প্লটে ১৫৫টি কারখানা স্থাপন করার কথা রয়েছে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।