Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কেড়ে নিতে চান প্রধান বিচারপতি -প্রধানমন্ত্রী

সংসদ ও এমপিদের বৈধতার প্রশ্ন আনার আগে প্রধান বিচারপতির সরে যাওয়া উচিত ছিল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান বিচারপতির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, উচ্চ আদালতে থেকে নানা ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট যাকে নিয়োগ দিলেন তিনিই তার ক্ষমতা কেড়ে নিতে চাচ্ছেন। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করা ও পক্ষ নেয়া প্রধান বিচারপতির কাজ নয়। প্রধান বিচারপতি তার পর্যবেক্ষণে সংসদ সদস্যদের নিয়ে যে বৈধতা ও অবৈধতার প্রশ্ন এনেছেন এ ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে না। কথাগুলো পর্যবেক্ষণে লেখার আগে এ পদ থেকে ওনার সরে যাওয়া উচিত ছিল।
গতকাল রবিবার বিকালে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের স্মরণে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় দেয়া বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
বাংলাদেশে আর কাউকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে দেয়া হবে না, যদি কেউ সে অপচেষ্টা চালায় তাকে সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারের সম্মুখীন হতে হবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উচ্চ আদালতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে তুলনার তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, কেউ অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টা চালালে তার বিচার করা হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে তুলনা করায় জনতার আদালতে তার বিচার চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কেন বাংলাদেশকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তুলনা করা হবে? আমাকে এ ধরনের হুমকি দিয়ে কোন লাভ হবে না। আমি বলব, সবকিছুই সহ্য করা যেতে পারে কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে তুলনা করা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। পাকিস্তান রায় দিল বলে (প্রধানমন্ত্রী পদে নওয়াজ শরীফের ক্ষমতায় থাকা অবৈধ ঘোষণা) কেউ আমাকে ধমক দিল, আমি জনগণের কাছে এর বিচার চাই। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ওই হুমকি আমাকে দিয়ে লাভ নাই, আমরা আইয়ুব খান দেখেছি, ইয়াহিয়া খান দেখেছি, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়াকে দেখেছি। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন করছি, জনগণের কাছেই আমরা দায়বদ্ধ।
আলোচনার শুরুতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সামনে অস্থায়ী স্মৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে ২১ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সিনিয়র নেতা এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হতাহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৫ আগস্টের অন্যান্য শহীদ, চার জাতীয় নেতা এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আলোচনা সভার শুরুতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর যাই হোক পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন তুলনা সহ্য করা হবে না। সুতরাং পাকিস্তানে কী হয়েছে না হয়েছে সে বিষয়ে কোন হুমকি দেবেন না। এটা সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, অবৈধভাবে আর কেউ ক্ষমতা দখল করতে পারবে না। যদি কেউ সে চেষ্টা করে সংবিধান অনুযায়ী তার বিচার হবে।
প্রধান বিচারপতির বক্তব্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে অপমানজনক আজকে পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা। যে পাকিস্তানকে আমরা যুদ্ধে হারিয়েছি, যুদ্ধে হারিয়ে বিজয় অর্জন করেছি। অনেকেই পাকিস্তানের দালালি করেছে। জনগণের আদালত বড় আদালত, জনগণের আদালতকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না মন্তব্য করে জনগণের কাছে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের জন্য বিচার দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পাকিস্তান রায় দিল দেখে কেউ ধমক দেবে, আমি জনগণের কাছে বিচার চাই। জনগণের কাছে বিচার চাই, পাকিস্তানের সাথে কেন তুলনা করবে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কেন তুলনা করবে। আমাকে ওই হুমকি দিয়ে লাভ নেই।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ ও সমমনাদের বর্জনের মুখে বিএনপির জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোট চুরি করে যারা সংসদ সদস্য হয়েছিল তাদের মধ্যে একজন তো এখনও বিচারক। খালেদা জিয়া তাকে বিচারক বানিয়েছে। কই চিফ জাস্টিস তো তাকে বের করে দেয় নাই।
তিনি বলেন, আমি শুধু দেশবাসীর কাছে এই বিচারটা চাই যে পাকিস্তানকে আমরা যুদ্ধ করে হারিয়েছি, যে পাকিস্তান ব্যর্থ রাষ্ট্র, আজকে সেই পাকিস্তানের সাথে আমাদের তুলনা করবে? আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি, আজকে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছি। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান যেন স্বাধীনতভাবে চলতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তবে স্বাধীনতা ভাল, তবে তা বালকের জন্য নয় বলে একটা কথা আছে। কাজেই বালকসুলভ আচরণ আমরা আশা করি না। তিনি বলেন, আমার বাবা এ দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, আমরা এর ফল ভোগ করছি। এদেশ পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিই থাকবে। কোনো রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটির মেম্বার নয়।
তিনি বলেন, সংসদ হলো জনগণের প্রতিনিধি। জনগণ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এদেশে অবৈধভাবে আর কেউ ক্ষমতা দখল করতে পারবে না, যদি কেউ সে চেষ্টা করে তাহলে সংবিধান অনুযায়ী তার বিচার হবে।
প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাও হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা চলছে। উচ্চ আদালতে থেকে নানা ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট যাকে নিয়োগ দিলেন তিনিই আবার প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কেড়ে নিতে চাচ্ছেন।
গ্রেনেড হামলার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির কাছে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ২১ আগস্টের হামলার বিষয়ে যে বিচারপতি ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছিলেন, সেই বিচারপতির জয়নুল আবেদীনের পক্ষ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তিনি দুর্নীতিবাজকে রক্ষা করতে কাজ করছেন, এটা তো তার কাজ নয়।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একের পর এক ১৩টি গ্রেনেড মারা হয়েছিল আমাদের জনসভায়। এরপর কারাগারেও একটি গ্রেনেড পাওয়া যায়। সেদিন কারাগারে আরও অনেক গ্রেনেড ঢোকানো হয়েছিল। কারাগার থেকে হাসপাতালে নেয়ার কথা বলে কিছু দুর্র্ধ্র্ষ কয়েদীকেও অ্যাম্বুলেন্সে করে বাইরে আনা হয়েছিল। তাদের ষড়যন্ত্র ছিল- আমাকে হত্যা করার পর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কারাগার থেকে বের করে আনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ঘটনার রাতেই খালেদা জিয়ার ওই প্রতিমন্ত্রী ও এসব কাজে জড়িত একজন কারারক্ষীকে বিশেষ ব্যবস্থায় বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, যুদ্ধের ময়দানে আর সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত গ্রেনেড দিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল ২১ আগস্ট। তখন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় ছিল। এর আগেও আমার ওপর অনেক হামলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রেনেড হামলার আলামত ধ্বংস করেছিল বিএনপি সরকার। প্রকৃত বিচার যেন না হয়, সেজন্য জজ মিয়া নাটকও তৈরি করেছিল। জনমতের চাপে পরে জয়নাল আবেদীন নামে একজন বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত কমিশন গড়েছিল। ওই বিচারপতি খালেদার সরকারের ফরমায়েশি তদন্ত প্রতিবেদনে বলে দিলেন যে, এ হামলা নাকি বিদেশি শক্তি করেছে! পাশের দেশের পরিকল্পনায় হয়েছে!
দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বালাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বসর মাইজভান্ডারী, জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, জাসদের একাংশের কার্যকরী সভাপতি মঈনুদ্দিন খান বাদল ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম।



 

Show all comments
  • মোবারক ২২ আগস্ট, ২০১৭, ৬:৩৪ এএম says : 0
    প্রধান বিচার পতি সঠিক কথা কাজ কোনুটাই করতে পারবেনা- করবে কি ? তিনি জনগনের দেশের উন্নয়নের পক্ষে কোনু কাজ কথা বলতে পারবেনা কেন, পাকিস্তান কি বাংলার চেয়ে খারাপ,পাকিস্তান থেকে শিক্ষা নেন, ‌তার পরে রাষ্ট চালান, লাভ ছারা ক্ষতি হবেনা, ভিতরে হিংসার পাহার কেন
    Total Reply(0) Reply
  • সালাহউদ্দিন সুলতান ২২ আগস্ট, ২০১৭, ১০:৩৭ এএম says : 0
    পাকিস্তানের বিচার ব্যবস্থার সাথে তুলনা করেছেন।পাকিস্তানের সাথে নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Miah Muhammad Adel ২২ আগস্ট, ২০১৭, ১১:৪৭ এএম says : 0
    Who can deny the fact "Had there been no Pakistan, there would be no Bangladesh"? The notable columnist, writer, researcher Professor Dr. Ibne Golam Samad from Rajshahi University (might be retired now) stated this undear fact in one of the national dailies. No gains are made by going to the extreme.
    Total Reply(0) Reply
  • আসিফ ২২ আগস্ট, ২০১৭, ১:৩৪ পিএম says : 0
    ২১ আগস্টের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • আলমগীর ২২ আগস্ট, ২০১৭, ১:৩৬ পিএম says : 0
    দেশে যে কী শুরু হলো, আমরা সাধারণ মানুষ তা কিছুই বুঝতে পারছি না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ