পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ১০ জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি একজনের যাবজ্জীবন ও তিনজনের ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড পাওয়া তিনজনকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ডও দিয়েছেন আদালত। এই মামলায় খালাস পেয়েছেন ১০ জন। গতকাল ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মমতাজ বেগম এই রায় ঘোষণা করেন।
মামলা সুত্রে জানাগেছে, এ মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে অন্য একটি মামলায়। এ কারণে তার নাম এ মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়। মুফতি হান্নান বাদে মামলার বাকি ২৪ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন ওয়াসিম আখতার ওরফে তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে রাশেদুজ্জামান ওরফে শিপন, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, আবু বক্কর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মো ইয়াহিয়া, আব্দুর রউফ ওরফে মুফতি আব্দুর রউফ ওরফে আ. রাজ্জাক ওরফে আবু ওমর এবং পলাতক ইউসুফ ওরফে মোহসাব মোড়ল, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আ. হাই।
যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি কারাবন্দি মেহেদী হাসান ওরফে আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে গাজী। এছাড়া ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামি কারাগারে থাকা আনিসুল ইসলাম আনিস ও মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান এবং পলাতক সারোয়ার হোসেন মিয়া।
এ ছাড়া অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন, কারাবন্দি আরিফ হাসান সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাক, মাওলানা সাব্বির, মাহমুদ আজহার এবং পলাতক কামাল উদ্দিন সাকের, মুন্সি ইব্রাহিম, মো. শাহনেওয়াজ ওরফে মো.আজিজুল হক, মো. লোকমান, শেখ মো. এনামুল হক, মিজানুর রহমান ও আবুল হোসেন ওরফে খোকন।
বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা
এদিকে একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় নয়জনকে ২০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল একই আদালতের বিচারক এ রায় ঘোষনা করেন।
কারাদন্ড পাওয়া নয়জন হলেন ইউসুফ ওরফে মুসা ওরফে আবু মুসা (পলাতক), আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিস, মেহেদী হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদ ওরফে মেহেদী হোসেন ওরফে গাজী খান, ওয়াসিম আখতার ওরফে তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ, মাহমুদ আজহার ওরফে মামুনুর রশীদ, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে শিমন খান, শাহনেওয়াজ ওরফে আজিজুল হক ও শেখ মো. এনামুল হক (পলাতক)। এ ছাড়া এ মামলায় চারজন খালাস পেয়েছেন।
দুই মামলার নথি সুত্রে জানাগেছে, ২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের জন্য মঞ্চ নির্মাণের সময় মাটিতে পুঁতে রাখা ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পাওয়া যায়। পরদিন ৮০ কেজি ওজনের আরও একটি বোমা উদ্ধার করা হয় কোটালীপাড়ার হেলিপ্যাড থেকে। তার এক দিন পর নিজের নির্বাচনী এলাকায় দাদার নামে প্রতিষ্ঠিত ওই কলেজ মাঠে জনসভায় শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। ওই ঘটনায় কোটালীপাড়া থানার উপপরিদর্শক নূর হোসেন বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেন। ঘটনার তদন্ত করে ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন এবং গোপালগঞ্জের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ৪১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করে। পরে ২০০৯ সালের ২৯ জুন নতুন করে ৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, মুফতি আবদুল হান্নান আফগানিস্তানে মুজাহিদ ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং সেখানে সে তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করে। দেশে ফিরে সে হুজি-বি নামক সংগঠনের সদস্য হয়। তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য গোপালগঞ্জের বিসিক এলাকায় অবৈধভাবে সোনার বাংলা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি সাবানের কারখানা স্থাপন করা হয়। সে কারখানায় আসামিদের নিয়োগ দেয় ও সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে। সাবান তৈরির কাঁচামাল আনার আড়ালে আসামি মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী আসামিরা বোমা তৈরির উপকরণ কারখানায় এনে রাখত। প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আসার কথা শুনে মুফতি হান্নানসহ আসামিরা সাবান কারখানায় শক্তিশালী বোমা তৈরি করে। এরপর ২০০০ সালের ১৯ জুলাই সাবান কারখানার গাড়িতে করে কোটালীপাড়া এলাকায় নিয়ে রাতের আঁধারে তা পুঁতে রাখে। পরে মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে মামলা দুটি ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর মুফতি হান্নান ঢাকার বাড্ডা থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে জঙ্গি নেতা কারাগারেই ছিলেন। পরে ২০০৪ সালে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যার চেষ্টায় গ্রেনেড হামলার দায়ে তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ দুই মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়া সরকারি কৌঁসুলি খন্দকার আবদুল মান্নান বলেন, এই রায়ে তাঁরা আংশিক সন্তুষ্ট। যাঁরা খালাস পেয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।