পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতীতে যমুনার শাখা পৌলী নদীর ওপর অবস্থিত পৌলী রেল সেতুর মাটি ধসে যাওয়ায় গতকাল রোববার ভোর থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের রেলপথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক বলেছেন, মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালসহ লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে। তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অতিদ্রুতই রেল সেতুটি মেরামত করা হবে। সোমবার দুপুরের মধ্যেই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গতকাল রোববার ভোরে এ ঘটনার পর থেকে ঢাকা থেকে কোনো ট্রেন দেশের উত্তর বা দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় নি। এমনকি কোনো ট্রেনও ঢাকায় আসেনি। মাটি ধসের পর পরই চিলাহাটী থেকে ঢাকার দিকে আসছিল নীল সাগর এক্সপ্রেস। ট্রেনটি অল্পের জন্য বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেয়েছে। এছাড়া ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি সেতুর পূর্ব দিকে আটকা পড়ে। পরে এই দুই ট্রেনকে পেছনের দিকে নিয়ে যাত্রী বদল করে নীল সাগর যায় রাজশাহী আর ধুমকেতু ঢাকায় ফিরে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শী নীল সাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের একজন স্টাফ ইনকিলাবকে জানান, ভোর ৫টার দিকে বঙ্গবন্ধু পূর্ব রেল সেতু স্টেশন থেকে ঢাকার দিকে যাত্রা করে নীলসাগর এক্সপ্রেস। ট্রেনটির গতি বাড়ার কিছুক্ষণ পরেই চালক অনেক দুরে রেললাইনের উপর কিছু মানুষকে দেখতে পান। কিছুদুর এগিয়ে আসার পর চালক দেখেন লাল কাপড় উড়িয়ে লোকজন ট্রেন থামানোর সংকেত দিচ্ছে। চালক (এলএম) তখন ধারণা করেন সামনে হয়তো কোনো বিপদ ঘটেছে। তিনি সাথে সাথে ঝুঁকি নিয়ে ব্রেক কষেন। এতে করে ট্রেনটি ৯৮ নং পৌলী সেতু থেকে মাত্র ৫০ গজ দুরে থেমে যায়। এসময় লোকজন ছুটে এসে চালককে অভিনন্দন জানায়। ট্রেনের যাত্রীরাও নেমে এসে সেতুর সামনে কমপক্ষে ৩০ ফুট অংশে মাটি ধসে পড়ার দৃশ্য দেখে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। অনেকে ভয়ানক বিপদ থেকে রেহাই পাওয়ার আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
ঘটনাস্থল থেকেই পশ্চিমাঞ্চল বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়। এক পর্যায়ে যাত্রীসহ ট্রেনটি পেছনের দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশনে চলে যায়। এরই মধ্যে ধসে পরা সেতুর পূর্ব দিকে আটকা পরে রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস।
রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, বন্যার কারণে প্রবল স্রোতে সেতুর পাশের মাটি সরে গিয়ে প্রায় ৩০ ফুট গর্তের সৃষ্টি হয়। এ কারণে সেতুর কাছে ¯øীপার খুলে গিয়ে রেললাইন কোনোমতে ঝুলে ছিল। রাতে ওই সেতুর উপর দিয়েই চলে গেছে ঢাকা থেকে লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস। ধারনা করা হচ্ছে লালমনি এক্সপ্রেস সেতুটি অতিক্রম করার পর পরই রেললাইনের নীচ থেকে ¯øীপার সরে গিয়ে রেললাইন ঝুলে যায়। ভোরে ফজরের নামজ পড়তে বেরিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক বাসিন্দা রেললাইনের নীচ থেকে মাটি ধসে পরার খবর অন্যন্যদের জানান। তখন গ্রামবাসী তাড়াতাড়ি করে লাল কাপড় জোগাড় করে ধসে যাওয়া সেতু থেকে খানিক দুরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সহকারী চালক তুষার জানান, বঙ্গবন্ধু পূর্ব সেতু রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে ট্রেনটি সবেমাত্র গতিতে চলতে শুরু করেছে। এর মধ্যেই দুরে কিছু মানুষকে লাল কাপড় উড়াতে দেখা যায়। কোনো বিপদ আঁচ করতে পেরেই চালক (এলএম) সোহরাওয়ার্দী ঝুঁকি নিয়ে ব্রেক কষেন। ট্রেনটি ওই সেতুর প্রায় ৫০ গজ দুরে দাঁড়িয়ে যায়। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু পূর্ব সেতু থেকে স্টেশন মাস্টার একটা ‘সাবধানতা ¯িøপ’ দিয়েছিল। সেখানে যে স্থানে সতর্কভাবে চলতে হবে তার দূরত্ব লেখা ছিল ২১১/১২ কি.মি.। প্রকৃতপক্ষে এটা হবে ৩১১/১২ কি.মি.। তিনি বলেন, যে ¯িøপ আমাদেরকে দেয়া হয়েছিল সেই সেতু আরও সামনে। সেটার নম্বর ৯৮ নয়। রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, নীল সাগর ট্রেনটি ওই স্থানে আসার আগে লালমনি এক্সপ্রেস ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি সেতুটি অতিক্রম করে যায়। তখনই হয়তো রেললাইনের নীচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছিলো। এটা জানার পর হয়তো সাবধানতা ¯িøপ দেয়া হতে পারে। তবে স্টেশন মাস্টার কেনো সেটার নম্বর ভুল করেছেন তা তদন্ত করে দেখা হবে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি বিকল হওয়ার পর এপাড়ে ঢাকা থেকে রাজশাহীগমী ধুমকেতু এক্সপ্রেস এবং ওপাড়ে নীলসাগর এক্সপ্রেস আটকা পড়ে। পরে ধুমকেতুর যাত্রীদেরকে নীলসাগরে এবং নীলসাগরের যাত্রীদেরকে ধুমকেতুতে তুলে দেয়া হয়। নীলসাগর ছেড়ে যায় রাজশাহীর উদ্দেশ্যে আর ধুমকেতু ফিরে আসে ঢাকায়। বঙ্গবন্ধু পূর্ব সেতুর স্টেশন মাস্টার জানান, ধুমকেতুতে শুধু নীলসাগর নয়, রংপুর এক্সপ্রেস, দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী একতা এক্সপ্রেসের যাত্রীদেরকেও তুলে দেয়া হয়েছে। অনেক যাত্রী সড়কপথে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় চলে যায়। ঘটনার পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাকশী ও ঢাকা থেকে রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামত শুরু করে। দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রবল স্রোতের কারণে আমাদের বাঁধটি ভেঙে গেছে। যাতে আমাদের ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। আমরা যাতে অতিদ্রুত ট্রেন চালাতে পারি সেজন্য আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়েছি। এ সময় রেলমন্ত্রীর সাথে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোফাজ্জেল হোসেন, রেলওয়ে মহাপরিচালক মোঃ আমজাদ হোসেন, টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক খান মোহাম্মদ নুরুল আমিন, পুলিশ সুপার মাহবুব আলমসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন। গতরাতে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রেল ভবনের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সারারাত কাজ চলবে। ইতোমধ্যে ধসে পড়া স্থানটি মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। স্রোত যাতে ওই স্থানে আর আঘাত হানতে না পারে সেজন্য শক্ত বাঁধ দেয়ার কাজ চলছে। তিনি বলেন, সোমবার সকাল থেকেই হয়তো ট্রেন চালানো সম্ভব হবে বলে আশা করছি। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনার পর গতকাল ঢাকা থেকে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলগামী সকল ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া গতকাল রোববার ও আজ সোমবারের কলকাতা থেকে আসা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনও বাতিল করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।