Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা পুঁজি সঙ্কটে পাচারের আশঙ্কা

কোরবানির পশুর চামড়া বাজারে নানা সমস্যা

| প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : কোরবানির পশুর চামড়া বাজারের সঙ্কট ও সমস্যা কাটেনি। বরং বেড়েছে। সম্ভাবনাময় এই শিল্পটি চলছে খুড়িয়ে। বিশেষ করে পুঁজি সঙ্কট রয়েছে মাঠ থেকে যারা চামড়া সংগ্রহ করে সেইসব ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের। ট্যানারী মালিকদের কাছ থেকে ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা বকেয়া এখনো পাওনা পাননি। নেই ব্যাংক ঋণের নিশ্চ্যয়তা। ফলে আর মাত্র কয়েকদিন পরই কোরবানির ঈদ। কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনার জন্য অন্যান্যবার বেশ আগে থেকেই প্রস্ততি চলে। এবার এখনো কোন প্রস্ততি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এই চিত্র মাঠপর্যায়ের।
ক্ষুদে চামড়া ব্যবসায়ীদের কথা, ট্যানারী মালিকরা কবে আমাদের পাওনা পরিশোধ করবেন তার নিশ্চয়তা নেই। একই অবস্থা ব্যাংক ঋণের। ট্যানারী মালিকদের বক্তব্য, সাভারের হেমায়েতপুরে মোট ১শ’৫২টির ট্যানারীর মধ্যে ৬৭টি চালু হয়েছে। বাকিগুলো এখনো জায়গার লিজ ডিডের কাগজপত্র বুঝে না পাওয়ায় কাজকর্ম শুরু করতে পারছে না। পাচ্ছে না ব্যাংক ঋণও। এসব কারণে ট্যানারী মালিকরা মাঠের ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশোধের কোন উদ্যোগ নিতে পারছেন না। এসব কারণে এবার কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনায় নানামুখী সমস্যা হবে এমন ধারণা বদ্ধমূল মাঠপর্যায়ে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র জানায়, বড় বড় ব্যবসায়ী ও ট্যানারী মালিকদের দৌড়ঝাপ নেই চামড়ার মোকামগুলোতে। চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপকরণ লবন বস্তাপ্রতি ইতোমধ্যে ৬শ’টাকা বেড়ে গেছে। ৮শ’টাকার প্রতিবস্তা লবন বিক্রি হচ্ছে ১হাজার ৪শ’টাকা। ভরা মৌসুমে এর দাম দ্বিগুণের আশংকা করা হচ্ছে। নানা কারণে এবারও সীমান্তের ফাঁকফোকর দিয়ে ভারতে চামড়া পাচার হতে পারে। এই আশংকাকে উড়িয়ে দেননি ক্ষুদে চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, আমরা কিনতে না পারলে তো চোরাচালানীরা সুযোগ নেবে। তবে প্রশাসন, বিজিবি ও চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির দায়িত্বশীল সূত্র দাবি করেছেন, ওইসময় সীমান্তে রেডএ্যালার্ট জারি থাকবে ফলে পাচার হবে না।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চামড়ার বড় হাট যশোরের রাজারহাটের চামড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীন মুকুল গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, শুধুমাত্র যশোরের ব্যবসায়ীদের ট্যানারী মালিকদের কাছে প্রায় ১০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। কবেনাগাদ এই টাকা পাওয়া যাবে তা বলা যাচ্ছে না। তিনি জানান, চামড়া পাচারের আশংকা থাকে ঠিকই নানা কারণে, তবে চামড়া পাচার হবে না এবার। তিনি আরও বললেন, সারাদেশের মাঠের ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না ট্যানারী মালিকরা। তাদের সমস্যা রয়েছে ট্যানারী স্থানান্তর নিয়ে। আরো কয়েকজন ব্যবসায়ীর কথা, এখন থেকেই চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহের প্রস্ততি না নিলে মারাত্মক সমস্যা হবে। সরকারীভাবে লবনের দাম কমানো, ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থাসহ যেসব সঙ্কট ও সমস্যা রয়েছে দ্রæত পদক্ষেপ নিয়ে সমাধান করা দরকার। তাদের বক্তব্য ব্যাংক ঋণের সুবিধা পান ট্যানারী মালিকরা। মাঠপর্যায়ের বেশীরভাগ ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা এর থেকে বঞ্চিত হন। ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের কথা, আমরা চামড়া ক্রয় করতে না পারলে ভারতে পাচার হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকবে। তবে ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের ঋণের সুবিধা দেওয়া হলে এটি রোধ করা যাবে। কারণ চামড়া বেচাকেনার প্রথম ধাপে তারা কাজ করেন। তারা ক্রয় কবরে ট্যানারী মালিকদের কাছে বিক্রি করবেন। ফলে সীমান্তের দিকে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না। ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা এখন চাতক পাখির মতো চেয়ে রয়েছেন ট্যানারী মালিক, পাইকারী ব্যবসায়ী ও বেপারীদের দিকে।
সংশিষ্ট একাধিক সুত্র জানায়, বাংলাদেশের গরু ও ছাগলের চামড়া খুবই উন্নতমানের। বিশেষ করে বাছাই করা গরু ও ছাগল কোরবানি দেয়ায় ওই চামড়া খুবই ভালো। বরাবরই চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প পণ্যের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে চামড়া শিল্প। কোরবানীর পশুর চামড়া থেকেই মুলত দেশের মোট চামড়ার চাহিদা পুরণ হয়ে থাকে। অথচ চামড়ার বাজার ব্যবস্থাপনাও সেইভাবে গড়ে ওঠেনি আজো। নানা কারণে দিনে দিনে পিছিয়ে পড়ছে সম্ভাবনাময় শিল্পটি। এই মন্তব্য করেছেন সচেতন, পর্যবেক্ষক মহল ও চামড়া শিল্পের সাথে জড়িতরা।

 



 

Show all comments
  • mizantota ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১:২৩ এএম says : 0
    good report
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ