ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মো. বশিরুল ইসলাম : রাজধানী ঢাকায় জলাবদ্ধতা নতুন কোন বিষয় নয়। ঘণ্টাখানেকের ভারি বৃষ্টিতেই পরিণত হয় পানির নগরীতে। রাস্তায় গাড়িগুলোকে দেখা যায় রীতিমতো সাঁতরাতে। সেই সঙ্গে যানজট মিলে মানুষের দুর্ভোগের যেন কোনো সীমা-পরিসীমা থাকে না। আর এ জলাবদ্ধতার জন্য আমরা সরকার, মেয়র তথা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়ী করে থাকি। আমরা যতই তাদের দায়ী করি না কেন- আমরাও কম দায়ী নই। আমরা প্রতিদিনের ময়লা, প্লাস্টিক, পলিথিন ডাস্টবিনে না ফেলে ফেলছি রাস্তায়। এ ময়লা, প্লাস্টিক, পলিথিন বৃষ্টির পানির সাথে ড্রেনে পড়ে আবর্জনায় পূর্ণ হচ্ছে। ফলে পানি যাওয়ার রাস্তায় বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এ কারণে নগরীর জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করছে। এছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার কারণে জলাবদ্ধতা নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা অনিবার্য হয়ে ওঠে। অতীতে দুই-তিনদিন একনাগাড়ে বৃষ্টি হলেও ঢাকা শহরে পানি জমতো না। এখন এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। শুধু সেবা সংস্থাগুলোই নয়, নাগরিক হিসেবে প্রতিটি মানুষের কিছু দায়িত্ববোধ রয়েছে। আমরা ময়লা-আবর্জনাগুলো নিজ দায়িত্বে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে পারি।
অনেকেই বলে, সবাই ফেলে আমি একা এতটা সচেতন হয়ে কি হবে! কিছু হবে? অবশ্যই হবে। পরিবর্তন এবং অভ্যাসটা একজন একজন করেই করতে হয়। পলিথিন, খাবারের প্যাকেট ও প্লাস্টিকের বোতলগুলো আমরা কোথায় ফেলছি? গৃহস্থালি বর্জ্য আমরা কোথায় ফেলছি? এ ব্যাপারে আমাদের ভাবতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টা মাথায় নিয়ে এখন পরিকল্পনা করতে হবে। কেননা এখন ঘন ঘন বৃষ্টি হচ্ছে, অসময়ে বৃষ্টি হচ্ছে, আবার একটানা অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। এসব মাথায় নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ঢাকার চারপাশে নদী রয়েছে, এটা আমাদের ভাগ্যের ব্যাপার। বিশ্বের অনেক দেশের রাজধানী ঘিরে কোনো নদীই নেই। কিন্তু আমরা ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে নষ্ট করে ফেলেছি। ঢাকা শহরের মাঝেও অতীতে খাল, বিল-ঝিল, দীঘি, পুকুর ও জলাভূমি ছিল। বৃষ্টির পানি ওই সব খাল দিয়ে নিষ্কাষিত হয়ে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদী ও অন্যান্য জলাভূমিতে জমা হতো। মানুষ অপরিকল্পিত দালানকোঠা ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করে সেগুলোর নামনিশানা মুছে ফেলেছে।
আমাদের হিসাব করে দেখা দরকার, জলাবদ্ধতার কারণে সরকারী বা ব্যক্তিপর্যায়ে যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তা কি কোনভাবেই জলাভূমি ভরাট করে নগরায়নকে সমর্থন করে? তাহলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কেন রক্ষা করতে পারছে না খাল আর জলাধার? এখানেই প্রশ্নবিদ্ধ হয় আমাদের আইন ব্যবস্থা এবং আইন প্রয়োগে সদিচ্ছা। সভা সেমিনারে সহজেই দায়ী করা যায় কিছু ব্যক্তিকে। অবশ্যই জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরবাসীর কাছে তাদের দায়বদ্ধতা আছে। তবে নগরবাসী বুঝতে পারে সমস্যার মূল, শাখা-প্রশাখা অনেক গভীরে। যতদিন পর্যন্ত নগরায়নে অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট প্রাধান্য পাবে, ততদিন কতিপয় গোষ্ঠীর অর্থলিপ্সার কাছে উপেক্ষিত হবে মানুষ, সামাজিক মূল্যবোধ ও পরিবেশ; প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগে আমরা বার বার বিপর্যস্ত হব।
ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে গণসচেতনা সৃষ্টি করতে হবে। এ সমস্যা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। তাই রাতারাতি নিরসন করাও যাবে না। তবে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ এখনই হাতে নেয়া দরকার। ড্রেনেজ সিস্টেম পরিষ্কার করতে হবে, যাতে নদী পর্যন্ত পুরো লাইন পরিষ্কার থাকে। সব খাল-বিল, ড্রেন, বক্স কালভার্ট, জলাধার পরিষ্কার করে ঢাকার রাস্তাগুলোর সাথে সংযোগ লাইনগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। যাতে পানি সরল রেখায় প্রবাহিত হতে পারে। নদী পর্যন্ত এগুলো সচল রাখার সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত কর্মদ্যোগ এবং তার বাস্তবায়ন। এটা করতে না পারলে রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব হবে না।
লেখক : জনসংযোগ কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত), শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।