ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মো. ওসমান গনি : প্রতিষ্ঠানকে উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে হলে প্রয়োজন দক্ষজনসম্পদ। দক্ষ জনসম্পদই পারে প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করে তুলতে। যাচাই-বাচাই করে জনবল নিয়োগ দিলে সে প্রতিষ্ঠান কখনও দেউলিয়া বা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে যেতে পারে না। দক্ষ জনসম্পদ হলো একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার প্রাণকেন্দ্র, ঐ প্রতিষ্ঠান কেমন চলবে তা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত জনশক্তির দক্ষতার ওপর। প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীরা দক্ষ হলে প্রতিষ্ঠান সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আমাদের দেশসহ পৃথিবীর যে সমস্ত বড় বড় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে তার একমাত্র কারণ অদক্ষ লোক। তাই যে কোন প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগের আগে স্বচ্ছ নিয়োগ কমিটি তৈরি করতে হবে। যেখানে থাকবে না কোন স্বজনপ্রীতি বা বন্ধুত্বের খাতির। স্বজনপ্রীতি বা বন্ধুত্বের খাতিরে অদক্ষ লোক নিয়োগ দিলে সে প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। যেসব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয় ভবিষ্যতে তার মূল্য দিতে গিয়ে ওই প্রতিষ্ঠান নজিরবিহীন দুর্গতির মুখোমুখি হয়। আর একপর্যায়ে দেউলিয়াত্বের মতো অসহায় দুরবস্থাকে বরণ করতে হয়। মেধাবী ও কর্মঠ শ্রমশক্তি নিয়োগদানে ব্যর্থতার দায়ভার নিয়োগ কমিটি কখনো এড়াতে পারে না। আর হাতের নাগালে তথা কোনো পরীক্ষা ব্যতীত চাকরি পাওয়ার ফলে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীবাহিনীর জবাবদিহিতার সৃষ্টি হয় না। তারা প্রতিষ্ঠানের নীতি-নৈতিকতাকে চরমভাবে অবহেলার পাশাপাশি নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধিতেই ব্যস্ত থাকে। পক্ষান্তরে সঠিক পন্থায় নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীবাহিনী প্রতিষ্ঠানের আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকে। এতে প্রতিষ্ঠান তার অগ্রগতিতে কখনো থমকে যায় না। যথার্থ পদ্ধতিতে নিয়োগ পরীক্ষাসহ কর্মী নির্বাচন প্রতিষ্ঠানের দূরদর্শিতারই অন্যতম ধাপ হিসেবে বিবেচিত।
‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে’ কবির এই আহ্বানের প্রতিধ্বনিতে চারপাশটা বিদীর্ণ হয়ে আছে। চাকরির সুবাদে অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত থেকে খুব কাছ থেকে ‘নীতির কেবল আনুষ্ঠানিক প্রদর্শন’ দেখেছি। আর বারবার উল্লিখিত অভিব্যক্তি আমায় উপহাস করেছে। সত্যিই তো, আজকাল কথা দিয়ে চিড়া ভিজে, কাজ হয়, পাশাপাশি পদন্নোতিসহ সুবিধাবাদী ‘সুশীল’ হওয়া যায়। কিন্তু সমাজের পরিবর্তনে, অধিকার ও অগ্রগতিতে সচেতনের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি, হোক সে সাধারণ কিংবা অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। একজন সচেতন মানুষের সক্রিয়তায় চতুর্দিকের অপশক্তি সবসময় ভীত ও সতর্ক থাকে। সততা ও আপসহীন ব্যক্তির সঠিক মূল্যায়ন ছিল, আছে ও থাকবে। তবে ক্ষণিকের স্রোতে অনেক অশুভশক্তির প্রভাব মহাকালকে গ্রাস করে ফেলে। অস্বীকারের সংস্কৃতিতে সুন্দর ও সৃজনশীলতার অবমূল্যায়ন হলেও কালের ইতিহাসে কেবল সত্যের দাপটই স্থান পায়।
কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু অফিসিয়াল নিয়ম-কানুনের আবশ্যকতা রয়েছে। আর ‘নিয়োগদান’ প্রক্রিয়াটি এসব নৈতিকতার অন্যতম ইস্যু হিসেবে বিবেচ্য। অথচ, পরিতাপের বিষয় হলো, প্রাতিষ্ঠানিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট পরিচালনা পরিষদ ও প্রভাবশালী মহলের অন্যায্য আবদার তথা অনুপ্রবেশ। বিশেষ করে স্বজনপ্রীতি ও ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার আড়ালে নিয়োগদান প্রক্রিয়ায় অসদুপায় অবলম্বন করা হয়। আর এই অকর্মের ফল দিতে হয় চরমভাবে। চারদিকের অনেক প্রতিষ্ঠানে খেয়াল করলে দেখা মিলবে এসব অনিয়মের। যেখানে কোনো ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই কর্মীদের নিয়োগদান করা হচ্ছে। ‘অমুক ভাই পাঠিয়েছে, তাকে বাদ দেয়া যাবে না’ বা, ‘অল্প পারিশ্রমিকে দিন-রাত খাটানো যাবে, নিয়ে ফেলেন’ কিংবা ‘আনুষ্ঠানিক নিয়োগদান প্রক্রিয়াটি অনেক ব্যয়বহুল ও সময়ের ব্যাপার, আমাদের মধ্য থেকেই প্রমোশন দিয়ে দেন বা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে’- এ ধরনের অনুরোধ বা আদেশবলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এতে দেশের সত্যিকার মেধাবী তরুণ-তরুণীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের কর্ম থেকে।
এমনও নজির আমাদের চারপাশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে লক্ষ করা গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে কর্তাব্যক্তি তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের অবাধ নিয়োগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত অকর্মের ফলস্বরূপ নিজের চেয়ারটিই হারাতে বাধ্য হয়েছেন। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনার সুযোগে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিতে ক্ষমতাবলে ‘আপন লোক’কে ‘গোপন’ চুক্তিতে নিয়োগ দিয়ে সরিয়ে নিয়েছেন বিশাল অঙ্কের টাকা। ধবংস করে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠান।
‘আপন গা বাঁচিয়ে অধিকারের নাম বেচা’ টাইপের লোক সমাজে বাড়ছেই। এদের চিহ্নিত করতে হবে। মুখোশপরা-মানবদের শেষ নিঃশ্বাসই শেষ সম্পদ। মৃত্যুর পর তাদের নিয়ে স্মরণসভা কিংবা স্মৃতিসৌধ হয় না। ইতিহাসে তাদের স্থান হয় ‘পথভ্রষ্টতার নিদর্শন’ হিসেবে। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তারা কেবল খ্যাতি ও ক্ষমতার পিছনে ছোটেন। এসব ভন্ড অভিনেতা কেবলই নায়কের অভিনয় করে যান, কিন্তু জীবনে প্রকৃত নায়ক হওয়ার স্বাদ অধরাই থেকে যায়। তাদের দম্ভ ও মূর্খতায় অধীনস্থরা লৌকিক হাসি প্রদর্শন করলেও প্রকৃত অর্থে তাদের জন্য ঘৃণা ও করুণা ছাড়া কিছুই থাকে না।
আমরা একটা নির্দিষ্ট সময়ের সফরে পৃথিবীতে আগমন করেছি। ওই সময়সীমা অতিক্রম করে কোনো প্রাণিই টিকে থাকতে পারেনি। তবে যারা সততা ও শ্রমকে যথার্থ অনুধাবন করেছে তারা অক্ষয় হয়েছে, কালজয়ী হয়ে অমর হয়েছে। তাই একটিবার ভাবুন, আপনার একটি অপকর্মের ফলে অগণিত সৃজনশীল কর্ম থমকে যাচ্ছে। ভাবুন, আপনার একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের ফলে সদ্য পড়াশোনা শেষ করা একজন মেধাবী চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনটা কতটা জটিল হয়ে যাচ্ছে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।