Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সোনালি আঁশে লাভের স্বপ্ন ফিকে হচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু : রাজশাহী অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদে গেলেই এখন একরকম সোঁদাগন্ধ নাকে লাগবে। পাট জাগ দেয়ার এই গন্ধ জানান দিচ্ছে এবার পাটের ভাল ফলনের কথা। প্রথম দিকে খালবিলে পানির অভাবে জাগ সংকট দেখা গেলেও পরবর্তীতে কেটে যায়। এখন চলছে আঁশ ছাড়ানোর ভর মওসুম। বেশ কদিন আগেই হাটে বাজারে চলে এসেছে সোনালী আঁশ খ্যাত পাট। হাটবার গুলোয় ভ্যান আর ভুটভুটি বোঝাই হয়ে পাট আসছে। বেচাকেনার পর আবার সেই পাট ট্রাক বোঝাই হয়ে চলে যাচ্ছে ফড়িয়াদের আড়তে। কৃষকদের সাথে আলাপকালে তারা জানান গত ক’বছর ধরে পাটের চাহিদা বাড়ায় তারা ফের পাট আবাদ মুখি হয়েছেন। দিন দিন পাটের আবাদ বাড়ছে। এবারো আবাদ মন্দ হয়নি। আবাদ দেখে সোনালী আঁশে যে লাভের সোনালী স্বপ্ন দেখেছিল বাজারে দাম দেখে তা সে স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছে। আবাদ মওসুমের শুরু থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি আবাদের জন্য সহায়ক হয়েছে। কিন্তু চাষাবাদ, সার কীটনাশক বীজ আর যত্মআতি পাটকাটা জাগ দেয়া এরপর আঁশ ছাড়াতে শ্রমিকের খরচ বেশী পড়েছে। শ্রমিক সংকটের কারনে অতিরিক্ত মজুরীও গুনতে হয়েছে। ফলে পাটের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি পাট উৎপাদনে খরচ পড়েছে দশ হাজার টাকা। আর উৎপাদন হয়েছে ক্ষেত্রভেদে আট থেকে দশ মন। দাম পাওয়া যাচ্ছে মনপ্রতি বারোশত হতে দেড় হাজার টাকার মধ্যে। অথচ গত বছর এর দাম মিলেছে দুই হাজার টাকা। সেবার সামান্য হলেও লাভের মুখ দেখেছিল। তাছাড়া সরকার পাটজাত কিছু পন্য ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করায় পাটের ব্যবহার ও চাহিদা বেড়েছে। কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ সুত্র জানায়, তারা এবার রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, নাটোর, নবাবগঞ্জ ও নওগা জেলায় চলতি মওসুমে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল সাড়ে ছেচল্লিশ হাজার হেক্টর জমিতে কিন্তু তা বেড়ে বাস্তবে আবাদ হয় আটচল্লিশ হাজার দেড়শো হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচলাখ সাত হাজার বেল। কিন্তু আবাদের পরিমান বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবে ফলনও বেশী হবে। অথচ বছর চারেক আগে এমন অবস্থা ছিলনা। চার বছরের ব্যবধানে দশ হাজার হেক্টরের বেশী জমিতে আবাদ হচ্ছে। পাট আবাদ ফের বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যে সরকারী একটি পাটকলের পাশাপাশি আরো বেসরকারী পর্য্যায়ে পাটকল গড়ে উঠেছে। বড় ব্ড় ব্যবসায়ীদের নজরও এখন এদিকে। তারা আবাদের দিকে লক্ষ্য রাখছেন। রাজশাহীর নওহাটা ও বানেশ্বর বাজারে গিয়ে দেখা যায় বাজার ভরা পাটে। ভালদাম পাবার আশা নিয়ে পাট আনলেও কাংখিত দাম না মেলায় হতাশা ব্যাক্ত করেন। যা দাম বলা হচ্ছে তাতে উৎপাদন খরচ উঠছেনা। বরং হাটে আনার খরচটা বাড়তি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান পাটের বাজারেও মধ্যস্বত্তভোগী। অনেকেতো জমিতে গাছ থাকতেই কৃষকের আর্থিক টান পোড়নের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অগ্রীম মনপ্রতি হাজার বারোশ টাকা দিয়ে বুকিং দিয়েছে। এখন সব তাদের ঘরে যাচ্ছে। বাজারও নিয়ন্ত্রন করছে তারা। সোনালী আঁশ দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল হলেও সরকারী ভাবে ধান চালের মত পাটের দাম নির্দ্ধারন করে দেয়া হয়নি। ফলে বেপরোয়া হয়ে যায় পাট কারবারীরা। হাট বাজার হতে পাট কিনে রাজশাহী জুটমিলে পাট সরবরাহকারী হোসেন নামে একজন ক্রেতা জানালেন মানভেদে গড়ে দেড় হাজার টাকা মন দরে তিনি কিনেছেন। তবে মিল এখনো ঠিক করেনি তারা কি দরে পাট কিনবে। বেসরকারী পাটকল গুলো তৎপর রয়েছে যত কম দামে পাট কেনা যায় সে টাগর্টে নিয়ে। ধান চালের মত সরকারী রেট নির্দ্ধারন না করার ব্যাপারে একজন কৃষি কর্মকর্তা বলেন আমরা আবাদের ব্যাপারে মাঠ পয্যায় সহায়তা করতে পারি। কিন্তু দাম নির্দ্ধারন করার ক্ষমতা আমাদের নেই। বাজারে পাটের দামের বিষয়টা সরকারের বিভিন্ন মহলে অবহিত করি। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি বলেন এখন যা দাম তা হয়তো থাকবেনা। আরো বাড়বে। কৃষক নায্য দাম পাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ