Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

যাত্রী বিড়ম্বনা বাড়ছে

হজ ফ্লাইট বিপর্যয় ঠেকাতে হুঁশিয়ারীতেও কাজ হচ্ছে না : আরো একটি ফ্লাইট বাতিল

প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১২ এএম, ১২ আগস্ট, ২০১৭

 শামসুল ইসলাম : হজ ফ্লাইট বিপর্যয়ে হজযাত্রীদের বিড়ম্বনা দিন দিন বাড়ছে। হজ ফ্লাইট স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে নানা কৌশল অবলম্বন করেও হজ এজেন্সিগুলো থেকে সাড়া মিলছে না। হজ ফ্লাইটের শেষের দিকে মদিনার বাড়ী ভাড়ার চুক্তি করায় এজেন্সিগুলোর অনেকেই এখন হজযাত্রী পাঠাতে রাজি হচ্ছে না। এতে বিমানের হজ ফ্লাইট বাতিল অব্যাহত রয়েছে। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সম্প্রতি হজ ক্যাম্পে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে হজ ফ্লাইট বাতিল প্রসঙ্গে বেসরকারী হজ এজেন্সিগুলোকে দায়ী করেছেন। ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য যে সব হজ এজেন্সি’র কারণে হজ ফ্লাইট খালি যাবে তাদের লাইসেন্স বাতিলের হুশিয়ারী দিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। যাত্রী সংকটের দরুন যাতে হজ ফ্লাইট খালি না যায় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিগুলোক দফায় দফায় ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব তাগিদ দিচ্ছে। তার পরেও বিমানের হজ ফ্লাইট খালি যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড় টায় বিমানের আরো একটি হজ ফ্লাইট (বিজি-৭০৫৭) যাত্রীর অভাবে বাতিল করা হয়েছে। বাতিলকৃত এ হজ ফ্লাইটটি আগামীকাল রোববার ভোর ৬টায় জেদ্দার উদ্দেশ্যে ঢাকাত্যাগ করবে। বিমানের নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে। এ নিয়ে বিমানের হজ ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা দাঁড়ালো ২২টিতে। এতো বিশাল সংখ্যার যাত্রীর ক্যাপাসিটি লস হওয়ায় বিমান কর্তৃপক্ষ প্রায় ৪০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দেক আহমেদ সম্প্রতি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এতথ্য জানান। বিমানের হজ ফ্লাইট স্বাভাবিক না হলে এর লোকসানের পরিমান দেড়শ’ কোটি টাকা পর্যন্ত গড়াতে পারে। গতকাল দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ভেতরে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শত শত হজযাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হন। অগ্নিকান্ডের সময়ে বিমান বন্দর থেকে হজযাত্রীদের বাইরে বের করে দেয়া হয়। বিকেল ৫টায় সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের হজ ফ্লাইটের এসব হজযাত্রী কয়েক ঘন্টা কষ্ট করার পরে রাতে তারা জেদ্দার উদ্দেশ্যে ঢাকাত্যাগ করেন। হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম তাৎক্ষণিক বিমান বন্দরে গিয়ে এসব হজযাত্রীদের খোঁজ খবর নেন। সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ৮৫ হাজার হজযাত্রীর ভিসা সরবরাহ করেছে। এখনো প্রায় ৩ হাজার হজযাত্রী’র ভিসার জন্য লজমেন্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়নি। সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ আগামী ১৭ আগষ্টের পর আরো কোনো হজ ভিসা ইস্যু করবে না। 

বিমান কর্তৃপক্ষ হজযাত্রী পরিবহন ঝুঁকির মাঝে পড়ায় অতিরিক্ত শ্লট বরাদ্দ পেতে জেদ্দাস্থ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের দারস্ত হয়। বিমান হজযাত্রী পরিবহন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে জেদ্দাস্থ আন্তর্জাতক বিমান বন্দর সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১৪টি ¯øট লাভ করেছে। কিন্ত বিমানের অর্থব কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব এবং হাতে পর্যাপ্ত ক্রু, ফ্লাইট ও অন্যান্য লজিষ্টিক সার্পোট না থাকায় উল্লেখিত শ্লট-এর মধ্যে ৭টি শ্লট ব্যবহার করতে পারবে না। হজ ফ্লাইট বিপর্যয় ঠেকাতে বিমান কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত আরো ৮টি হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য জেদ্দা সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে শ্লট বরাদ্দ চেয়েছে। উল্লেখিত ৮টি শ্লট বরাদ্দ পাওয়া গেলে হজযাত্রী পরিবহনে সংকট থাকবে না। বিমানের একজন কর্মকর্তা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অন্যথায় হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে মারাতœক সংকট দেখা দিতে পারে।
হজযাত্রী পরিবহনে বিপর্যয় ঠেকাতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে তার দপ্তরে ত্রি-পক্ষীয় এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিস্তারিত আলোচনার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ঘোষণা দিয়েছেন ১২ আগষ্ট থেকে বিমানের হজ ফ্লাইট স্বাভাবিক হয়ে আসবে। বিমান কর্তৃপক্ষ আরো নতুন ¯øট আনার উদ্যোগ নিচ্ছে। ঐ সভায় সাউদিয়া এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সে’র কান্ট্রিম্যানেজার জানিয়েছেন হজযাত্রী পরিবহনে সাউদিয়ার যথেষ্ট ফ্লাইট রয়েছে। হজযাত্রী পরিবহনে কোনো সমস্যা হবে না। বিমানের হজ ফ্লাইট বাতিল অব্যাহত থাকলে হজযাত্রী পরিবহনে মারাতœক অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। ইতিমধ্যে বিমান যে পরিমাণ হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে তাতে প্রায় ৪/৫ হাজার হজযাত্রী পরিবহন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। হাবের একজন শীর্ষ নেতা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। হজ ক্যাম্পে হজযাত্রীদের রিপ্লেসমেন্টর ফাইল ধরে রেখেও এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তারা টু-পাইস কামাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৫টায় পরিচালক হজ এর দপ্তরের শাখার কয়েক কর্মকর্তা রিপ্লেসমেন্টর কার্যক্রম ফেলে রেখেই বাড়ীতে চলে যায়। দফায় দফায় টেলিফোন করার পরেও একজন কর্মকর্তাকে হজ ক্যাম্পে আনা যায়নি। এতে সিটি নিয়ন হজ এজেন্সি’র ৯জন হজযাত্রীর রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহায় এজেন্সি’র মালিক। রিপ্লেসমেন্টের হজযাত্রীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের নামেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে হজ ভিসা কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। ফলে ভিসা না পাওয়ায় গ্রæপের অনেক হজযাত্রীর ফ্লাইট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ার পেছনে এসব কারণগুলোও অন্যতম বলে হাবের একজন নেতা জানান।
হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম রাতে ইনকিলাবকে বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত হজ ক্যাম্পে অবস্থান করে প্রত্যক্ষ করেছি আল্লাহর মেহমান হজযাত্রীগণ কি ভাবে কষ্ট করেন। হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় হজযাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ বাড়ছে বলেও হাব মহাসচিব উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, হাবের সাথে কোনো প্রকার পরামর্শ ছাড়াই বিমান একগুয়েমী করে হজ ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা করায় হজ ফ্লাইট খালি যাওয়ারও অন্যতম কারণ । যে সব হজ এজেন্সি শেষের দিকে মদিনার বাড়ী ভাড়ার চুক্তি করেছেন তারা এখন চাইলেই হজযাত্রীদের সউদী আরবে পাঠাতে পারবেন না। হজ ফ্লাইট বাতিলের জন্য শুধু হজ এজেন্সিগুলোর কাঁধে দোষ চাপালে হবে না। হজ ফ্লাইট বাতিলের জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকেও প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করে হাব মহাসচিব বুধবার বলেন, হজ এজেন্সিগুলো ১৯ ফেব্রæয়ারী থেকে ২৪ ফেব্রæয়ারী হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধনের সময়ে ৩০ হাজার ৭শ’ ৫২ টাকা মুয়াল্লেম ফি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত সোনালী ব্যাংকে জমা দিয়েছে। কিন্ত উল্লেখিত মুয়াল্লেম ফি টাকা গত ৩০ জুনের পরে হজ এজেন্সিগুলোকে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের বিলম্বর দরুন হজ এজেন্সিগুলো যথা সময়ে মক্কা-মদিনায় বাড়ী ভাড়া করতে যেতে পারেনি। এতে হজের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে দীর্ঘ দিন বিলম্ব হয়েছে। এসব কারণকে হজ ফ্লাইট বাতিলের প্রধান কারণ বলে হাব মহাসচিব উল্লেখ করেন। সমন্বিত প্রচেষ্টায় সকল হজযাত্রীগণ এবার হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন বলে হাব মহাসচিব তসলিম আশাবাদ ব্যক্ত করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ