Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অগ্নিকান্ডে দেড় ঘণ্টা অচল শাহজালাল বিমানবন্দর

| প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দু’টি তদন্ত কমিটি, মূল ভবনের তৃতীয় তলায় এয়ার ইন্ডিয়ার অফিস কক্ষে আগুনের সূত্রপাত, কেউ হতাহত হয়নি
বিশেষ সংবাদদাতা : ঢাকার শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মূল ভবনে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তবে ওই দেড় ঘণ্টা সময়ে প্রধান বিদ্যুৎ লাইনের সরবরাহ এবং বহির্গমন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আন্তর্জাতিক রুটের অন্তত ৬টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। এ ঘটনায় বিমান কর্তৃপক্ষ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে বিমানবন্দরের মূল ভবনের তৃতীয় তলায় এয়ার ইন্ডিয়ার অফিস কক্ষে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। বিমান বন্দরে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হজ্বে যাওয়ার জন্য যে সব হজ যাত্রীগন বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন তাদেরসহ অন্যান্য বিমানের যাত্রীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া বিমান বন্দরের অগ্নিকান্ডের খবর জানতে ঢাকাসহ সারাদেশের সাধারন মানুষ উগ্রিব হয়ে উঠেন। উত্তরা ফায়ার ব্রিগেডের ষ্টেশন অফিসার শফিকুর ইসলাম জানান, এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে আরও সময় লাগবে। অগ্নিকান্ডের সাথে সাথেই দমকল বাহিনীর পাশাপাশি সেখানে পাঠানো হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী। পুলিশের পাশাপাশি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের কর্মীরাও যোগ দেয় সেখানে। শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে ফ্লাইট অপারেশন কার্যক্রম শুরু হয়। এর পর থেকে চেকইন চলছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিমান উড্ডয়ন ও অবতরন ফের শুরু করেছে কতৃপক্ষ। এদিকে, আগুন লাগার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ গোয়েন্দা সংস্থার সবাই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভালের জন্য তৎপর রয়েছেন।
বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাশেদা সুলতানা জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুরো বিমানবন্দরের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। ধোঁয়ায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ফ্লোরের অধিকাংশ কর্মী বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং বহির্গমনের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট বেলা ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন লাগার কারণ বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ গতকাল রাত পর্যন্ত সুনিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আরো বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার চালু করে দেয়া হয়েছে। আমাদের অ্যারাইভাল খোলাই ছিল। ডিপারচারও এখন (বেলা ৩টার পর) খুলে দেয়া হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম ফ্লাইট অপারেশনের বিঘœন নিয়ে স্পষ্ট কিছু না বললেও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরের কার্যক্রম কার্যত থমকে যায়। বিমানবন্দরের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বেলা ১টা ২৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট জেদ্দার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। এরপর বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত থাই এয়ার, চায়না ইস্টার্ন, হংকং এয়ারলাইন্স, মালডিভিয়ান এয়ারলাইন্স ও টার্কিশ এয়ারলাইন্সের আরও পাঁচটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ঢাকা ত্যাগ করার কথা ছিল। কিন্তু বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কোনোটিই যায়নি। চায়না ইস্টার্নের স্টেশন সুপারভাইজার আবু হানিফ বলেন, বেলা ২টা ৩৫ এ আমাদের একটি ফ্লাইটের কুনমিং যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় সেটা বিলম্বিত হয়েছে। সব এয়ারলাইন্সেরই এক অবস্থা। আশা করছি সন্ধ্যার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, বেলা ১টা ২৫ মিনিটে তাদের জেদ্দারগামী বিজি ৭০৫৭ ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে। অগ্নিকান্ডের কারণে অন্য কোনো ফ্লাইট বাতিল না হলেও অভ্যন্তরীণ রুটের কয়েকটি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। বিমানবন্দরে দায়িত্বরত এপিবিএন এর একজন সদস্য জানান, মূল ভবনের তৃতীয় তলায় যেখানে আগুন লেগেছে, সেখানে এয়ার ইন্ডিয়া ও সৌদিয়াসহ কয়েকটি বিমান পরিবহন সংস্থার কার্যালয় রয়েছে। ওই ফ্লোরের একটি বিমান পরিবহন সংস্থার বিপণন কর্মকর্তা জানান, বেলা দেড়টার দিকে ফায়ার অ্যালার্ম শুনে বেরিয়ে এসে তিনি দেখতে পান, তৃতীয় তলা ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে। বিমানবন্দরের অটো ফায়ার ডিটেকটরের ডিসপ্লেতে তখন লেখা দেখাচ্ছিল- ফায়ার অন এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লোর। বিমানবন্দরের ভেতরের একটি দোকানের এক কর্মচারী জানান, চারদিকে ধোঁয়ায় ছেয়ে গেলে যাত্রী আর কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। পরে নিরাপত্তা কর্মীরা সবাইকে বেরিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বাইরে অপেক্ষায় থাকা বেশ কয়েকজন যাত্রী জানান, অগ্নিকান্ডের কারণে তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর এয়ার ইন্ডিয়ার কাস্টমার সার্ভিসের কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের পুরো অফিস পুড়ে গেছে। লকার, কাগজপত্র ও টাকাপয়সা যা ছিল, সব পুড়ে গেছে। আমাদের পাশে কাতার এয়ারের একটি কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি এয়ার ইন্ডিয়ার এই কর্মকর্তা।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) শাকিল নেওয়াজ সাংবাদিকদেরকে জানান, এয়ার ইন্ডিয়ার অফিসে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আগুন লাগার সাথে ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ টিম আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। তারা অক্সিজেন নিয়ে সেখানে প্রবেশ করে এবং ৩টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে এরপরও তৃতীয় ও চতুর্থ তলার কিছু অংশ তল্লাশি করা হয়। আগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা নেই এবং এতে বিমানবন্দরে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক ইকবাল করিম বলেছেন, কোন ফ্লাইট বাতিল না হলেও পরবর্তী ফ্লাইট ছেড়ে যেতে ১ ঘণ্টা বিলম্ব হতে পারে। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনও (বিকেল ৪টা) টার্মিনালের ভেতরে ধোঁয়া রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এখনও কাজ করছেন। ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। শুরু হয়েছে সব ধরণের ফ্লাইট চলাচলের প্রক্রিয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, বিদেশ থেকে যারা আসছেন তাদের বের হতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। তারা নিচতলা দিয়ে বের হচ্ছেন।
যাত্রীদের ভোগান্তি
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মূল ভবনের তৃতীয় তলায় আগুন লাগার ঘটনায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। গতকাল দুপুরে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন হাজারো যাত্রী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হলেও তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না গন্তব্যের উদ্দেশে তারা কখনও রওয়ানা হতে পারবেন। বিমানবন্দরে অপেক্ষারত হজযাত্রী শহীদুল হক খান বলেন, আমরা চেক ইন করছিলাম, তখনই ধোঁয়া দেখতে পাই ভেতরে। আমরা ভেবেছিলাম ছোটখাট কিছু, কিন্তু সেটা চোখের সামনেই বড় হয়ে গেল। হঠাৎ করে ভেতরে ছোটছুটি হলো। চেক ইন ওই অবস্থায় রেখেই আমরা বাইরে চলে এসেছি। ফ্লাইটের কী হবে জানি না। মুহিদুল হক খান বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন দুপুর ২টা থেকে। তিনি বলেন, বাইরেই বসেছিলাম। হঠাৎ করে ছোটাছুটি আর ধোঁয়ার গন্ধে চারপাশ ভরে যায়। বিকাল ৫টায় আমার ফ্লাইট ছিলো, সেটার কী হবে, সে বিষয়ে কিছুই জানি না। কর্তৃপক্ষ এখনও (বিকেল সাড়ে ৬টা) আমাদের কিছুই জানায়নি। শওকত নামে একজন যাত্রী বলেন, সৌদি আরবে কাজ করেন গত ১০ বছর ধরে। দুই ঘণ্টা ধরে বসে রয়েছেন। এখনও বুঝতে পারছেন না তিনি যেতে পারবেন, কিনা। অথচ তার আগামীকালই কাজে যোগ দেয়ার কথা।



 

Show all comments
  • কাজল ১২ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৫৬ পিএম says : 0
    বিষয়টির সুষ্ঠ তদন্ত চাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ