Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিরাপদ স্বর্গে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা

| প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তার পরিবেশ। এ অবস্থায় নিজেদের অর্থলগ্নির নিরাপদ ক্ষেত্র অনুসন্ধান করছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের এ আগ্রহের কারণে জাপানের ইয়েন, সুইস ফ্রাঁ, স্বর্ণ ও সরকারি বন্ডে উল্লম্ফন দেখা গেছে। তবে পিয়ংইয়ং ইস্যুর সূত্র ধরে গত বৃহস্পতিবার এশীয় শেয়ারবাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। গত বুধবার ছিল বিশ্বে আর্থিক মন্দা শুরুর দশম বছর পূর্তি। এর ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়া যদি হুমকি দেয়া অব্যাহত রাখেÍ তা হলে দেশটিকে চরম মূল্য দিতে হবে। ভূরাজনীতিতে বিদ্যমান এ অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থলগ্নির জন্য নিরাপদ ক্ষেত্র খুঁজছেনÑ যার প্রভাব পড়েছে স্বর্ণ, ইউরো, সুইস ফ্রাঁ ও সরকারি বন্ডে। গত বুধবার স্বর্ণের দাম দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চে উঠে যায়। এছাড়া ডলারের বিপরীতে সুইস ফ্রাঁর মূল্য ১ শতাংশের বেইশি ঊর্ধ্বমুখী হয়। শুধু তাই নয়, বিনিয়োগের নিরাপদ স্বর্গ হিসেবে খ্যাত সুইজারল্যান্ডের এ মুদ্রাটির মান ইউরোর বিপরীতে বিগত আড়াই বছরের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার স্থানীয় মুদ্রা ওনের মান ডলারের বিপরীতে দশমিক ৯ শতাংশ কমে যায়। সিটি ইনডেক্স ডিরেক্টের গবেষণা-বিষয়ক পরিচালক ক্যাথলিন ব্রুকস বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্কে যে টানাপড়েন চলছে, তাতে করে বিনিয়োগকারীরা অর্থলগ্নির সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় তারা সুইস ফ্রাঁর মতো নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, নিরাপদ বিনিয়োগে সুইস ফ্রাঁর পর অবস্থান নিয়েছে জাপানের ইয়েন। মূলত জাপান ভৌগোলিকভাবে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু পিয়ংইয়ংয়ের নিকটে অবস্থান করায় দেশটির মুদ্রা বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষণে সমর্থ্য হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ঝুঁকি এড়াতে বিনিয়োগকারীরা সরকারি বন্ডেও অর্থলগ্নি করছেন। যার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ইল্ড বা সুদের হার কমে ২ দশমিক ২৪ শতাংশে পৌঁছেছে। জার্মানির ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের ইল্ড দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৩ শতাংশ। এছাড়া প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বুধবার দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২৬৮ ডলারে বিক্রি হয়েছে। গতকাল প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম আরো বেড়ে হয় ১ হাজার ২৭৮ ডলার। এক্সিট্রেডারের বিশ্লেষক গ্রেগ ম্যাককেনা এ প্রসঙ্গে বলেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ক্রমে বাড়ছে। বাজারে তারই প্রভাব পড়ছে। এছাড়া প্রতি আউন্স প্লাটিনামের দামও দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার এক আউন্স প্লাটিনাম ৯৭২ ডলার ৯৫ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। এ সময় রুপার দামেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। প্রতি আউন্স রুপা বিক্রি হয়েছে ১৬ ডলার ৭০ সেন্টে। স্যাক্সো ব্যাংকের কমোডিটি স্ট্র্যাটেজি বিভাগের প্রধান ওলে হ্যানসেন বলেন, বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তা পছন্দ করেন না। কিন্তু বর্তমান বাজারজুড়ে অনিশ্চয়তাই বিরাজ করছে। এদিকে পিয়ংইয়ংকে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম থেকে নিরস্ত করতে কয়েক দিন আগে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়। ধারণা করা হয়েছিল, এবার হয়তো প্রায় একঘরে হয়ে থাকা দেশটিকে পরমাণুু কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা যাবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এতে বিন্দুমাত্র দমে যায়নি দেশটি। বরং মার্কিন প্রেসিডেন্টের কড়া কথার পাল্টা জবাব দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটি বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ গুয়ামে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালাবে। উত্তর কোরিয়াকে ঘিরে এ উত্তরোত্তর উত্তেজনা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এশিয়ার শেয়ারবাজারেও। নিক্কেইয়ের শেয়ারসূচকে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া গতকাল মধ্যদিনের লেনদেনে হংকংয়ের শেয়ারদরে ১ শতাংশের বেইশি পতন লক্ষ করা যায়। এছাড়া বুধবার সিউলের শেয়ার সূচকে পতনের কারণে বৃহস্পতিবার সেখানে কোনো ধরনের লেনদেন হয়নি। দিনের শুরুতে ইউরোপের শেয়ারবাজারেও নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল। গার্ডিয়ান, এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ