পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমদানি কম, কোরবানি ঈদ সামনে রেখে অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্য ও বাজারে তদারকির অভাব আগামী সপ্তাহে কমতে পারে দাম সবজি ও মাছের দাম লাগামহীন
হাসান সোহেল : লাগামহীনভাবে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। আমদানি না বাড়লে দাম আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা। এদিকে কাঁচাবাজারে বেড়েছে সব ধরনের সবজি ও মাছের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। শত টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে শিম, টমেটো ও কাঁচামরিচের কেজি। একই অবস্থা মাছের দামেও। তবে স্থিতিশীল রয়েছে মুরগি ও মাংসের দাম। এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, দেশের চাহিদা মেটাতে ব্যবসায়ীরা মিসর ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছেন।
পেঁয়াজবাহী জাহাজও চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় আছে। দ্রæত এসব পেঁয়াজ খালাসের ব্যবস্থা করতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ভারত। ভারত ও বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এতে উভয় দেশেই পেঁয়াজ উৎপাদন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারতে ক্ষতি হওয়ায় তারা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। যে কারণে আমাদের বেশি দামে আমদানি করতে হচ্ছে।’ তবে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়লেও আগামী সপ্তাহে তা কমে যাবে বলে মনে করেন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দর বাড়লে পাকিস্তান, চীনসহ কয়েকটি দেশ থেকে প্রতিবছরই পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। এবারও সেই চেষ্টা চলছে। তাছাড়া দেশের আড়ৎগুলোতে মজুদকৃত পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে পুরোদমে। এদিকে ক্রেতাদের মতে, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পেঁয়াজ আটকে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, প্রতিবছরের মতো কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে মুনাফার লোভে অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্য ও বাজারে তদারকির অভাবে সুযোগে দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
প্রতিদিনের রান্নায় অতি প্রয়োজনীয় উপাদান পেঁয়াজ। চালের পর হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ায় তাই বিপাকে ক্রেতারা। অল্প দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। আর সরকারি হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২৮ থেকে ৩৩ টাকা। অর্থাৎ দ্বিগুনেরও বেশি। রাজধানীর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। গত সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ১৫ টাকা বেশি। আর খুচরা বাজারে তা বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। ক্রেতাদের এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি কম হওয়ায় বাড়ছে দাম।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার ও কাঁঠালবাগান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫২ টাকা। সপ্তাহ দুয়েক আগেও দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
আর সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, গত এক মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম গড়ে বেড়েছে ৯৫ শতাংশ আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, এক মাস আগে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২৮ থেকে ৩২ টাকা, আর ভারতীয় পেঁয়াজ ২২ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে বৃষ্টিকে দায়ী করলেও বাজারঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভারতে বন্যায় পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া দেশেও স¤প্রতি অতি বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় ব্যবসায়ীদের মজুদকৃত পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে দাম বাড়ছে। কারণ দেশের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে প্রায় ৪ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। শ্যামবাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এ কারণে বাংলাদেশের বাজারেও প্রভাব পড়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে বছরে ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা আমদানি হয় মূলত ভারত থেকে। তবে ব্যবসায়ীদের যুক্তি মানতে নারাজ সাধারণ ক্রেতারা। শুধু বৃষ্টি নয়, দাম বাড়ার পেছনে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্য ও বাজারে তদারকির অভাব দায়ী।
ক্রেতাদের অভিযোগের সত্যতা মিলে দেশে পেঁয়াজের মাসিক চাহিদার হিসাবে। জানা গেছে, দেশে গড়ে প্রতিমাসে পেঁয়াজের চাহিদা এক লাখ ১৫ হাজার টন। এর মধ্যে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের চাহিদা একটু বেশি থাকে। তবে রমজান মাস ও কোরবানির সময় দেড় থেকে দুই লাখ টন বাড়তি পেঁয়াজের চাহিদা তৈরি হয়। এ চাহিদাকে পুঁজি করেই সক্রিয় হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট। কারণ দেশে উৎপাদন, আমদানি ও চাহিদা হিসাব করলে এখনও দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের মজুদ থাকার কথা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেট ফেডারেশনের আহŸায়ক কমিটির সদস্য সচিব শেখ শামসুল আলম বুলবুল বলেন, দেশে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় মোকাম রাজশাহীর তাহেরপুর ও বানেশ্বর, ফরিদপুরের গোয়ালন্দ। এছাড়া পাবনায়ও একটি মোকাম রয়েছে। এসব মোকামে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। কিছু দিন সমস্যা হলেও এখন বাজারে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ আসছে।
তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম কমবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি এক সপ্তাহের মধ্যে দাম কমবে। কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী দাম বাড়ালেও তা আর বেশিদিন স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বাজার তদারকরি করা দরকার মন্তব্য করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, স্মরণকালের ইতিহাসে এবছর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া চাহিদা অনুযায়ী আমাদের দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় না। ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু সেখানেও বন্যায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাংলাদেশে দামে প্রভাব পড়ছে।
ব্যবসায়ীদের হাতেও বাজার একেবারে ছেড়ে দেয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তদারকি অবশ্য করা দরকার। কারণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে আরো বৃষ্টিপাত হতে পারে। তখন যেন দাম হাতের নাগালে থাকে সেজন্য এখনই প্রস্তুত থাকা দরকার। তবে ব্যবসায়ীদের বাঁচিয়েই সবকিছু করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেগুন, বরবটি, মূলা, পেঁপে, কাঁকরোল, করলা, ঝিঙা, চিচিঙ্গাসহ বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা বা তারও বেশি দামে। এছাড়া শিম ১১০-১২০ টাকা, টমেটো ১৩০-১৪০ টাকা, কাঁচামরিচের কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজি বিক্রেতা তারেক বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কম। এ ছাড়াও বন্যায় কৃষকের ফসল নষ্ট হয়েছে। আর বর্ষা মৌসুমে সবজি কম পাওয়া যায়। এসব কারণে সবজির দাম বেড়েছে। অপরদিকে সবজির সঙ্গে মিল রেখে বেড়েছে মাছের দামও।
বাজারে গতকাল (শুক্রবার) গরুর গোস্ত প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৫১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির গোস্ত ৭৫০ টাকায়। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, এক কেজি ওজনের প্রতি পিস কক মুরগি ২৩০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৩৫০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ডিমের দাম গত সপ্তাহের মতো অপরিবর্তিত রয়েছে। ফার্মের লাল ডিম প্রতি হালি ৩০-৩২ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম ৪৪ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪০-৪৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচবাজারের এক ক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, সবজির দাম এত বেশি যে যেটা ধরি সেটাই ৬০ টাকা। মাছের দামও বেড়েছে। গত সপ্তাহে বাইলা মাছ কিনেছি ৪০০ টাকা কেজি দরে। এ সপ্তাহে দাম চাচ্ছে ৫০০ টাকা। ইলিশের দামও বেশি। ছোট মাছও ৩০০ টাকার নিচে নেই। বাজারে আসলেই হাজার টাকা নিয়ে আসি, তারপরও ব্যাগ ভরে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।