Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্সের শীর্ষে ভারত বাংলাদেশ ১০ম

| প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : পুরো বিশ্বে ৪ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ এখনও ক্রীতদাসের মতো জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন, যাদের মধ্যে ১৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি বলে এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষার তথ্য। গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্স বলছে, এই তালিকায় সবার উপরে আছে ভারত।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন’ চলতি বছরের যে গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্স প্রকাশ করেছে, তাতে এ ধরনের দুর্দশায় পড়া মানুষের সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দশম। যারা কারখানা, খনি বা খামারে নামমাত্র মজুরিতে দাসের মতো শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছেন, দালালের খপ্পরে পড়ে বাধ্য হচ্ছেন যৌনকর্মীর জীবনযাপনে, এ যুগেও যাদের ঋণ শোধ করতে না পেরে কাটাতে হচ্ছে দাসত্বে জীবন, অথবা বাবা-মায়ের ঋণের দায় মাথায় নিয়ে যাদের জন্ম হচ্ছে ক্রীতদাসের মতো - তাদের সংখ্যা ধরেই এ সূচক তৈরির কথা জানিয়েছে গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্স।
আধুনিক দাসত্বের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে উত্তর কোরিয়া, উজবেকিস্তান, কম্বোডিয়া, ভারত ও কাতারের কথা। বলা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়ায় এমন অনেক তথ্য পাওয়া গেছে, যা থেকে জানা যায়, বন্দিশিবিরগুলোতে জোর করে কাজ করানো হয় বন্দিদের দিয়ে, সেখানে কোনো নিয়মকানুন নেই। অন্যদিকে দেশটিতে নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে এবং চীনে যৌনদাসী হিসেবে পাঠানো হয়। উজবেকিস্তানে সেখানকার নাগরিকদের তুলা মৌসুমে মাঠে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এছাড়া ভারত, চীন, পাকিস্তান আর বাংলাদেশেও আধুনিক দাসত্বের চিত্রটা ভয়াবহ।
জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে জোরপূর্বক বিয়ের হার যদি হয় ২০ শতাংশ, সেখানে জোরপূর্বক শ্রমের হার ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ ৮০ শতাংশ মানুষকে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে হাতে-কলমে কাজ বা ম্যানুয়েল লেবার, নির্মাণ কাজ, ওষুধ শিল্প এবং কৃষিকাজ।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পোশাকখাতেও আধুনিক দাসত্বের প্রভাব রয়েছে। এছাড়া চিংড়ি চাষ এবং শুঁটকি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও এটা লক্ষ্য করা যায়। যৌনকর্ম, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রেও দাসত্বের ছাপ স্পষ্ট। জরিপে দেখা যাচ্ছে, জোরপূর্বক যৌনকর্মে বাধ্য করার ঘটনা ঘটেছে ৩ লাখ ৯০ হাজার মানুষের ক্ষেত্রে। এদের মধ্যে অনেক মেয়েরই বয়স ছিল ৯ থেকে ১০ বছর। গত বছর সবচেয়ে সুখী দেশ হয়েছিল ডেনমার্ক। এবার ৭ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট পেয়ে তিন ধাপ ওপরে উঠে প্রথম হয়েছে নরওয়ে।
ইনডেক্সে বলা হয়েছে, ভারতে বর্তমান জনসংখ্যা ১৩১ কোটি। এর মধ্যে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৫৪ হাজার মানুষ আধুনিক দাসত্বের শিকার। এখানকার ২৭ কোটি মানুষের মাথাপিছু আয় দিনে দুই ডলারেরও কম। ২০১৬ সালে গ্যালাপ দেশটির ১৫ রাজ্যের মানুষের উপর জরিপ করেছে। যা থেকে ভারতে ৮০ ভাগ মানুষের একটা সার্বিক চিত্র পাওয়া যায়। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যা ১ দশমিক ৪ ভাগ অর্থাৎ ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ আধুনিক দাসত্বের শিকার। গৃহকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, যৌনকর্মী, কৃষক, জেলে, শিল্পকর্মী এমকি ভিক্ষাবৃত্তি রয়েছে এগুলোর মধ্যে।
জরিপে আরও দেখা যাচ্ছে, আধুনিক এই দাসদের দুই তৃতীয়াংশই এশিয়ার বাসিন্দা। এদের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থা বেশ খারাপ। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথমেই ভারতের অবস্থান, তৃতীয় অবস্থানে পাকিস্তান এবং চতুর্থ অবস্থানে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন এই তালিকায় আছে দ্বিতীয় অবস্থানে।
বিভিন্ন স্থানে মানুষের বাস্তুচ্যূতি এবং বিশ্বজুড়ে দেশান্তরি হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের তুলনায় বেশি মানুষ আধুনিক দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সূত্র : গেøাবাল সেøভারি ইনডেক্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ