স্টাফ রিপোর্টার : সারাদেশে ভোটারের তালিকা হালনাগাদের কাজ অন্তহীন অভিযোগ মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সমানে রেখে ভোটার তালিকা হালনাগাদে ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩১ জনের তথ্য সংগ্রহ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।১৩ লাখ ৩৩ হাজার ২ জনের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এসব ভোটার মারা গেছেন। আর ভোটার স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছেন ৬০ হাজার ৮৭৬ জন। গতকাল আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
সচিব বলেন, কেউ বাড়ি বাড়ি না গিয়েই ভোটার তালিকা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের কাজে ইসি ভাগ সফল হয়েছে। কোনো তথ্যসংগ্রহকারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। হালনাগাদে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ লাখ। সে হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার ৭০ ভাগ পূরণ হয়েছে। হালনাগাদে যে পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এতে আমরা সন্তুষ্ট, উই আর হ্যাপি। ভোটার তালিকার হালনাগাদের সময় আরো বাড়ানো হবে না। তবে ভোটার তালিকা অন্তর্ভুক্ত হওয়া যায় সব সময়। যেকেউ উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে ভোটার হতে পারবেন।
ইসি জানিয়েছে, তথ্য সংগ্রহ শেষে ২০ আগস্ট নিবন্ধন কেন্দ্রে কম্পিউটার ডাটা এন্ট্রি কাজ ৩ ধাপে শুরু হবে। প্রথম ধাপে ১৮৩টি উপজেলায় ২২ দিনে, দ্বিতীয় ধাপে ২১৬ টি উপজেলায় ২৮ দিনে, তৃতীয় ধাপে ১১৮টি উপজেলায় ২১ দিনে, মোট ৫১৭টি উপজেলায় তথ্য সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এটি শেষ হবে ৫ নভেম্বর। ২৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলা থানা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে ভোটার এলাকা স্থানান্তরের আবেদন গ্রহণ, মৃত ভোটারের নাম কর্তন করা যাবে। এরপর ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকা হালনাগাদকৃত খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি। ২৫ জুলাই থেকে দেশজুড়ে নতুন ভোটার অন্তর্ভূক্তি, মৃতদের বাদ ও ভোটারের ঠিকানা স্থানান্তরের মাধ্যমে হালনাগাদ শুরু হয়। শেষ হয় ৯ অগস্ট। হালনাগাদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে- ঢাকা অঞ্চলেই নতুন ভোটার হয়েছে বেশি। উল্টোচিত্র কুমিল্লা অঞ্চলে যেখানে নতুনদের অন্তর্ভূক্তি যেমন কম, তেমনি মৃত ভোটারও কম রয়েছে। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হচ্ছে তাদের ভোটার করা হয়েছে এ হালনাগাদে। বর্তমানে ১০ কোটি ১৮ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছে তালিকায়। হালনাগাদ শুরুর প্রাক্কালে এবার প্রায় ৩৫ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত হবে বলে ধারণা করে ইসি। নতুন ভোটার হতে নিবন্ধন ফরম-২ পূরণ করেছে ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩১ জন এরমধ্যে ঢাকা অঞ্চলে সবেচেয়ে বেশি ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫৫১ জন। আর সব ওেথকে কম তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে কুমিল্লায় অঞ্চলে ১ লাখ ১৮হাজার ২৭৭ জন নাগরিকের।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৭ জন, রাজশাহীতে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮৭০ জন, খুলনায় ২ লাখ ৫০ হাজার ১৩৪ জন, সিলেটে ২ লাখ ২৪ হাজার ৮২০ জন, রংপুরে ২ লাখ৬৩ হাজার ২২৪ জন, ময়মনসিংহে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭৫৪ জন, ফরিদপুরে ১ লাখ৫৬ হাজার ২৮০ জন এবং বরিশাল অঞ্চলে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৬২ জন নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া ঠিকানা স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছেন মোট ৬০ হাজার ৮৭৪ জন নাগরিক। বাদ যাবে ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ২ জন ভোটার :মৃত ভোটার সবচেয়ে বেশি রাজশাহী অঞ্চলে লাখ ১৬ হাজার ৫১৫ জন, আর সবচেয়ে কম কুমিল্লা অঞ্চলে ৬২ হাজার ৪৫৫ জন। মৃত হওয়ায় এসব ভোটরকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিবে ইসি। প্রতি ভোটারে খরচ ১৪৪ টাকা\ এবারের ভোটার তালিকা হলনাগাদে ভোটারপ্রতি প্রায় ১৪৪ টাকা খরচ করবে ইসি। ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে খরচ হবে ৫০ কোটি ৪৪ লাখ ৩৭ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। উল্লেখ দেশব্যাপী ২০০৭/২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটারদের তালিকা প্রণয়নের পর ২০০৯, ২০১২, ২০১৪, ২০১৫ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। ১০ কোটি ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬৭ জন ভোটার নিয়ে চলতি বছরের (২০১৭) ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়।
জানা গেছে, অধিকাংশ বাড়িতে না গিয়েই শেষ হল নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহের কাজ। ১৬ দিন ধরে তথ্য সংগ্রহের সময় মাঠকর্মীরা ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় নতুন ভোটারের খোঁজে বাড়ি বাড়ি যাননি। প্রচার ছাড়াই তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মীরা স্থানীয় কোনো একটি স্কুলে বসেছেন। নির্দিষ্ট ওই স্থানে যারা নিজ আগ্রহে এসেছেন তাদের তথ্যই নেয়া হয়েছে। ফরম সংকট ছিল তীব্র। বরাদ্দ থাকার পরও ব্যাপকভাবে প্রচার চালানো হয়নি। কাজের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের অনভিজ্ঞতার বিষয় উঠে এসেছে। ইসির কেন্দ্র ও মাঠ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা দায়সারা মনোভাব দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে ১৮ বছর হয়েছে এমন বিপুলসংখ্যক নতুন প্রজম্মের তরুণ-তরুণী ভোটার হতে পারেনি।