Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরিশোধিত চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

অ ণু নি ব ন্ধ

| প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এবি সিদ্দিক : গোটা বিশ^ যখন রিফাইনিং সুগার (পরিরশোধিত চিনি) বর্জন করছে, তখন বাংলাদেশের মানুষ সেই চিনির প্রতিই ঝুঁকে পড়ছে। অন্যদিকে দেশে তৈরি আখের চিনি স্বাস্থ্যকর হলেও এই চিনি কিনতে আগ্রহ দেখান না। কিন্তু দেশীয় চিনিকলে উৎপাদিত চিনি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং শিশু খাদ্য হিসেবে উপযোগী। শিল্প-কারখানা রিফাইনিং (পরিশোধিত) পদ্ধতিতে চিনি তৈরির সময় ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, এনজাইম এবং অন্যান্য উপকারি পুষ্টি উপাদান দূর হয়ে যায়। এই চিনি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই চিনিতে মিষ্টতা আনতে বাড়তি রাসায়নিক মিশ্রিত করা হয়। আর পরিশোধন প্রক্রিয়ায় চিনিতে যুক্ত হয় আরও ক্ষতিকর নানা উপাদান। পরিষ্কার বা সাদা করার জন্য ব্যবহার করা হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান সালফার, হাড়ের গুঁড়ো। খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট তাদের গবেষণায় বলেছে, আখের চিনিতে ক্যালসিয়াম প্রতি ১০০ কিলোগ্রামে ১৬০.৩২ মিলিগ্রাম আর আমদানিকৃত চিনিতে ১.৫৬ থেকে ২.৬৫ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম আখের চিনিতে ১৪২.০৯ আর আর আমদানিকৃত চিনিতে ০.৩২ থেকে ০.৩৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস আখের চিনিতে ২.০৫ থেকে ১০.৭৯ মিলিগ্রাম আর আমদানিকৃত চিনিতে ২.৩৬ থেকে ২.৩৫ মিলিগ্রাম, আয়রণ আখের চিনিতে ০.৪২ থেকে ৬ মিলিগ্রাম আর আমদানিকৃত চিনিতে ০.৪৭ থেকে ০.৮২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম আখের চিনিতে ০.১৫ থেকে ৩.৮৬ মিলিগ্রাম আর আমদানিকৃত চিনিতে ০.৬৬ থেকে ১.২১ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম আখের চিনিতে ০.০৬ থেকে ০.০৭ মিলিগ্রাম আর আমদানিকৃত চিনিতে ০.০২ থেকে ০.০৩ মিলিগ্রাম। বিশ্বের যেসব দেশে আখের চিনি উৎপাদন হয় না সেসব দেশে এখন স্টিভিয়ার ব্যবহার শুরু হয়েছে। সাদা চিনি বা রিফাইন করা চিনি যে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, সে সম্পর্কে ড. উইলিয়াম কোডা মার্টিন এক গবেষণাপত্র বের করেছিলেন অনেক আগেই। সেখানে ড. মার্টিন সাদা রিফাইন চিনিকে বর্ণনা করেন বিষের সাথে। ড. উইলিয়াম কোডা মার্টিন গবেষনাপত্রে বলেন, চিনি রিফাইন করে সাদা করার জন্য চিনির সাথে যুক্ত প্রাকৃতিক ভিটামিন ও মিনারেল সরিয়ে শুধু কার্বোহাইড্রেট রাখা হয়। কিন্তু শুধু কার্বোহাইড্রেট শরীর গ্রহণ করতে পারে না। মিনারেল ও ভিটামিনবিহীন কার্বোহাইড্রেট দেহের মধ্যে টক্সিক মেটাবোলাইট সৃষ্টি করে। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। ফলে কোষ অক্সিজেন পায় না এবং অনেক কোষ মারা যায়। ড. উইলিয়াম কোডা মার্টিন গবেষণা লব্ধ ফলাফল দিয়ে প্রমাণ করে- রিফাইন করা চিনি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, হার্ট ও কিডনি ধিরে ধিরে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং ব্রেনের উপর মারাত্মক ক্ষতিকারণ প্রভাব সৃষ্টি করে।
আরো উল্লেখ্য বিজ্ঞানীরা মরণব্যাধি ক্যান্সারের যে ১০ কারণ চিহ্নিত করেছেন তার মধ্যে একটি হচ্ছে এই রিফাইন করা চিনি। তাদের মতে বাজার থেকে কেনা এনার্জি ড্রিংকস-এ থাকে প্রচুর পরিমাণে এই চিনি। সোডা আর এই চিনি ক্যান্সার জীবাণু বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এছাড়া এই চিনি শরীর মোটা করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নষ্ট করে শরীরের শর্করা ও পুষ্টিগুণ। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে দেশীয় আখের চিনির পরিবর্তে আমদানি করা চিনিতে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে অনেক বেশি মাত্রায়। তাই আমদানি করা এই চিনিকে বিষের সাথে তুলনা করে তা নাখাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্বখ্যাত চিকিৎসকগণ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমদানিকৃত অপরিশোধিত চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিধায় এনিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতোমধ্যে তোলপার শুরু হয়েছে। এই চিনির বিকল্প তালাশ করছে পশ্চিমাবিশ্বের উন্নত দেশগুলো। যেসব দেশে আখের চিনি উৎপাদনের ব্যবস্থা নেই সে সব দেশে বিকল্প হিসেবে বেচে নিয়েছে স্টিভিয়া। বাংলাদেশে আখের চিনি (বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার অধীনস্থ চিনি কলের উৎপাদিত চিনি) থাকলেও ভোক্তা সাধারণ আমদানিকৃত চিনির প্রতি বেশি আগ্রহী। দেখতে সাদা ঝকঝকে মিহিদানার এই চিনির ক্ষতিকর বিষয়ে ভোক্তা সাধারণ জ্ঞাত নন। পুষ্টিবিদদের মতে, আমদানিকৃত চিনি যা পরিশোধিত করে বিক্রি করা হচ্ছে সেই চিনিতে মিষ্টির কোন মৌলিক উপাদান নেই। কৃত্রিম উপায়ে মিষ্টি করা হয়। আর এই চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি বিস্তর। এই চিনিতে নেই মেটাবোলাইজিং, গøুকোজ, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-বি, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি উপাদান যা আখের চিনিতে আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই চিনি ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়ায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন