ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
জালাল উদ্দিন ওমর : সবুজ গাছপালাই আমাদেরকে দান করে বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপাদান অক্সিজেন। যে অক্সিজেন ছাড়া মানুষের এক মুহুর্তও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। হরেক রকমের শাকসব্জি আর তরিতরকারি সবই তো সবুজ বৃক্ষরাজির দান। সবুজ গাছপালাই আমাদেরকে দান করছে হাজারো ধরনের সুস্বাদু ফলমূল। সবুজ যেন আমাদের জীবনেরই চালিকাশক্তি। গাছপালা থেকেই তো তৈরি করি হয় দৃষ্টিনন্দন নানা ধরনের ফার্নিচার, যা আমাদের জীবনকে করছে উন্নত। গ্রামবাংলার মানুষের শতভাগ জ¦ালানি এই বৃক্ষরাজিরই দান। অথচ এই সবুজ প্রকৃতিকে ধ্বংসের নিষ্ঠুর এক খেলায় মেতে ওঠেছি আমরা। অর্থের লোভে নির্বিচারে সবুজ গাছগুলোকে কেটে ফেলছি, গাছ কেটে সবুজ বনকে সাফ করে ফেলছি। কিন্তু এ কাজ আত্মঘাতি এবং এটা নিজ পায়ে কুড়াল মারার শামিল। তাই আসুন, আমরা সবাই বেশি বেশি গাছ লাগাই। পুরো বাংলাদেশকে একটি সবুজ বাগানে পরিণত করি। কারণ পরিবেশ সুরক্ষায় গাছ লাগানোর বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ প্রকৃতির অপার দান। এ রকম উর্বর মাটির দেশ পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর নেই। এখানে কোন মরুভূমি নেই। আবার এখানকার ভূখন্ড বরফেও ঢাকা পড়ে না। এখানকার আবহাওয়ার প্রকৃতি মানুষের বসবাসের জন্য খুবই উপযোগী। এটা গরমও বেশি নয় , আবার ঠান্ডাও বেশি নয়। এমন সুন্দর প্রকৃতির রূপ দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া কঠিন। এ দেশের মাটির যে জায়গাই আপনি গাছ লাগান না কেন, সেখানেই গাছটি বেড়ে ওঠবে। আর যে গাছই আপনি লাগান না কেন সেটি বড় হবে। সুতরাং আসুন, এ উর্বর মাটিকে কাজে লাগাই এবং প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলাই। তার জন্য বেশি করে গাছ রোপণ করতে হবে। বৃক্ষ রোপণ আন্দোলনকে একটি সামাজিক অন্দোলনে রূপ দিতে হবে। বনজ, ফলদ এবং ঔষধিসহ যে কোন ধরনের গাছ লাগান। প্রথমত আপনি যে বাড়িতে বসবাস করেন তার চারপাশে গাছ লাগান। আপনার বাড়ির চারপাশে সবুজ বৃক্ষরাজি দিয়ে একটি বেষ্টনী গড়ে তুলুন। বাড়ির আশেপাশে যে সব পতিত জমি রয়েছে সেখানে বেশি করে গাছ লাগান। শাক সব্জির চাষ করুন, লেবু, কলা গাছ লাগান। নিজের সব্জি নিজেই উৎপাদন করুন। রাস্তার দু’পাশে লাইন করে পরিকল্পিতভাবে খেজুর গাছ লাগান। খাল, নদী এবং সাগরের তীরে সারি সারি করে ঝাউ গাছ লাগান। এটা আপনার ভূমিকে ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করবে। বাংলাদেশের বিশাল বনভূমি, পাহাড়ি জনপদ যেখানে মানুষের বসতি নেই সেখানে বেশি বেশি করে গাছ লাগান। পতিত জমিতে আম, কাঁঠাল, লিচু এবং পেয়ারার চাষ করুন। সরকারের বনবিভাগকে এক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদরাসা, উপসানালয় এবং ছাত্রাবাসের চারিদিকে বেশি করে গাছ লাগান। খেলার মাঠের চারিদিকে গাছ লাগান। শিল্প কারখানার চারিপাশে গাছ লাগান। আমরা তো প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে নারিকেল এবং সুপারিও আমদানি করি। সুতরাং এ ঘাটতি পূরণে নারিকেল আর সুপারি গাছ লাগান। এসব গাছের ফল খেয়ে আপনার তৃপ্তি যেমন মিটবে, তেমনি বিক্রি করে পাবেন বাড়তি আয়। বাংলাদেশের আম তো এখন বিশ^বাজারে রপ্তানি হচ্ছে। সুতরাং আপনিও বেশি করে আম গাছ লাগান এবং পরিচর্যা করুন। দেখবেন, এটাই হবে আপনার অর্থনৈতিক অবলম্বন। সেগুন, মেহগনি, গামারি, গর্জন, ইউক্যালিপ্টাস গাছ লাগান। সময়ের ব্যবধানে এসব গাছ একদিন অনেক বড় হবে এবং অনেক টাকায় বিক্রি হবে, যা আপনার পরিবারে সচ্ছলতা আনবে। বাড়ির দরজা, জানালা, দৃষ্টিনন্দন ফার্নিচার, নৌকা, লঞ্চ ইত্যাদি তৈরিতে এসব গাছ ব্যবহৃত হয়। গাছের ডালপালা আবার জ¦ালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং গাছ মানেই আয়। পৃথিবীর অনেক দেশ বর্তমানে গাছ রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। আবার অনেক দেশ গাছ আমদানির পিছনে বছরে বিপূল অর্থ ব্যয় করে। আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমার প্রতিবছর গাছ রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। অপরদিকে আমাদের বাংলাদেশ প্রতিবছর গাছ আমদানি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে। সুতরাং আমাদের বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে।
বাংলাদেশ ষোল কোটি মানুষের দেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতির দেশ। যদি গড়ে প্রতিটি মানুষ বছরে একটি করে গাছ লাগায়, তাহলে বছরে নতুন করে ষোল কোটি গাছ লাগানো হবে। যদি এই ষোল কোটি গাছের অর্ধেকও টিকে থাকে তাহলে বছরে আট কোটি গাছ বৃদ্ধি পাবে। আর যদি প্রতি দুই জনে একটি করে গাছ লাগায়, তাহলে বছরে নতুন করে আট কোটি গাছ লাগানো হবে। আর যদি এই আট কোটি গাছের অর্ধেকও টিকে থাকে, তাহলে বছরে চার কোটি গাছ বৃদ্ধি পাবে। আপনার পরিবারে আজকে যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করেছে, তার ভবিষ্যতের জন্য আজকেই একটি গাছ লাগান। আপনার ভবিষ্যতের জন্য এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য গাছ লাগান। যে গাছের ফল আমরা খাই, যে গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি করি প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র আর যে গাছের ছায়ায় বসে আমরা ক্লান্তি দূর করি, সেসব গাছ নিশ্চয়ই আমি রোপণ করিনি। আমাদের পূর্বপুরুষরা এসব গাছ রোপণ করেছিল এবং পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করেছিল বলেই তার ফল এখন আমরা ভোগ করছি। সুতরাং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমাদেরকে গাছ লাগাতে হবে এবং যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে সেগুলোকে বড় করে তুলতে হবে। এই গাছ লাগাতে হবে গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্রই। শহরে নির্মিত অট্টালিকা, দালান কোটা, অফিস আদালত এবং বিপনি বিতানের চারিপাশে গাছ লাগান। তার জন্য আপনার জায়গার কিছু অংশ খালি রাখুন। যে জমিতে বাসভবন, অফিস-আদালত কিংবা বিপনি বিতান নির্মাণ করবেন সেই জায়গার কমপক্ষে ২৫ শতাংশ জায়গা খালি রাখুন। এই খালি জায়গায় পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগান। বিল্ডিং এর বেলকনিতে ছোট ছোট টবে গাছ লাগান। বাড়ির ছাদে ড্রাম ভর্তি মাটিতে ফলের গাছ লাগান, আলু, মরিচ, টমেটো গাছ লাগান এবং শাক সব্জির চাষ করুন। এতে আপনি তরতজা শাক সব্জি খেতে পারবেন। আর আপনার অবসর সময়টাও কাজে লাগবে। দেখবেন পুরো ভবনটিই এক টুকরো সবুজ পৃথিবী হয়ে উঠবে, যা আপনার ভবনকে শীতল করবে আর মনকে করবে প্রশান্ত। আপনার বসবাস হবে আরামপ্রদ। আর এটাই তো কাম্য।
বাংলাদেশের আবহাওয়া ছয়টি ঋতুতে বিভক্ত। গ্রীস্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীষ ও বসন্ত। এখন বর্ষাকাল। গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। সবাই মিলে গাছ লাগান। যে যেখানে পারেন গাছ লাগান। যে গাছের চারা আপনার হাতের নাগালে আছে, আগে সেই গাছের চারা রোপণ করুন। গরু, ছাগল যেন লাগানো গাছের চারাগুলো খেয়ে না ফেলে সেদিকে একটু খেয়াল রাখুন। বর্ষার শুরুতেই গাছের চারা রোপণ করুন। তাহলে বর্ষা শেষ হতে হতে এই গাছের গোড়া শক্ত হয়ে যাবে, গাছ বড় হবে এবং গরু-ছাগলের নাগালের বাইরে চলে যাবে। তখন এই গাছ সময়ের সাথে সাথে বড় হতে থাকবে। আর বর্ষা শেষ হয়ে গেলে শুষ্ক মৌসুমে গাছের গোড়ার নিয়মিত পানি দিন এবং গোবর দিন। দেখবেন, সময়ের ব্যবধানে এই ছোট্ট গাছটি একদিন বিশাল গাছে পরিণত হবে, যা আপনার সম্পদ এবং পরিবারে আনবে বাড়তি আয়। পর্যাপ্ত গাছ না লাগানো এবং ব্যাপক হারে গাছ কাটার কারণে পৃথিবীতে গাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ফলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। অপরদিকে মানুষের নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কলকারখানা থেকে নির্গত কার্বনের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে আবহাওয়া উত্তপ্ত হচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, খরা, অতিবৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং ঘুর্ণিঝড় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে হিমালয় পর্বত এবং অ্যান্ট্যারটিকা মহাদেশের বরফ গলে যাচ্ছে, ফলে সাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টির পানি ঠিকমত সাগরে নামতে পারছে না। নগরসমূহে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পেছনে এটিও অন্যতম কারণ। এতে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে এবং পরিণতিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পৃথিবী দিন দিন মানুষের বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে ওঠছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে অধিক হারে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। মানুষ যাতে প্রয়োজনীয় গাছের চারা সহজে যোগাড় করতে পারে তার জন্য সরকারি এবং বেসরকারিীউদ্যোগে শহর-গ্রামের সর্বত্র ব্যাপক হারে নার্সারি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিভিন্ন ফলমূল এবং শাকসব্জির উন্নত মানের বীজ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি উদ্যোগে সহজ লভ্য নয় এমন গাছের বীজ ও চারার সহজ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করুন। সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তার কর্মকতা কর্মচারীদের মাধ্যমে ব্যাপক হারে গাছ লাগানো এবং পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ লাগানো হতে হবে কর্পোরেট স্যোশাল রেসপনসসিবিলিটির অংশ। প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতিরা অন্যান্য শিল্পকারখানার পাশাপাশি নার্সারি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
পৃথিবী ছেড়ে বসবাসের অন্যকোন জায়গা মানবজাতির কাছে নেই। বিজ্ঞানীরা যতই চেষ্টা করুক না কেন মঙ্গল গ্রহ এবং অন্যকোন গ্রহে মানুষের বসতি গড়া কখনো সম্ভব হবে না। আপনাকে এই পৃথিবীতেই বসবাস করতে হবে। আর এটাই বাস্তবতা। সুতরাং আমদের অস্তি¡ত্বের স্বার্থেই এই পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী রাখতে হবে। তার জন্য জলবায়ু এবং পরিবেশ রক্ষায় বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে। সুতরাং আসুন, নিরাপদ পৃথিবীর জন্য গাছ লাগাই। সবুজে থাকুন, সবুজে বাচুঁন- এই আন্দোলনে শামিল হয়ে আমরা গড়ে তুলি আরো সুন্দর বসবাসের জন্য একটি সবুজ পৃথিবী।
লেখক : প্রকৌশলী ও উন্নয়ন গবেষক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।