পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকায় পানিবদ্ধতা অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে রাজধানীর সব বক্স কালভার্ট খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব খালের ওপর ফ্লাইওভার নির্মাণ করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবতে বলেছেন তিনি। গত ৩১ জুলাই সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে তার এমন নির্দেশ পেয়ে চিন্তাভাবনা করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ সংস্থাগুলো। তবে বক্স কালভার্ট উন্মুক্ত করা হলে নানা জটিলতার পাশাপাশি অন্যান্য দুর্ভোগ ও জনসমস্যা বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা নগর পরিকল্পনাবিদ, ঢাকা ওয়াসা ও দুই সিটি কর্পোরেশনের।
গত পয়লা আগস্ট এ সংক্রান্ত এক মিটিংয়ে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেন, পানিবদ্ধতার মূল কারণ হলো- ঢাকাকে আমরা একটি বালতি বানিয়ে ফেলেছি। এর মূল কারণ, ঢাকা শহরের গ্রোথ, যার পুরোটাই অপরিকল্পিত। এখানে দুই কোটিরও বেশি মানুষ স্থায়ী ও এক কোটি মানুষ অস্থায়ী হিসেবে বসবাস করেন।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবে ভূগর্ভে পানি ঢুকতে না পেরে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এর মধ্যে যেটুকু খাল আছে, তাও দখলের কারণে প্রাকৃতিক নিঃসরণ ব্যবস্থা নষ্ট হয়েছে। ঢাকায় যে ১৫ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট করা হয়েছে, তারও ডিজাইনে ভুল ছিলো। নির্মাণের আবর্জনা ড্রেনেজ ও বক্স কালভার্ট ব্যবস্থাকে অচল করে দিচ্ছে। খালগুলো ভরে গেছে কঠিন বর্জ্য।ে স্বাভাবিকভাবেই বক্স কালভার্ট পরিষ্কার করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, ঢাকায় যেসব বক্স কালভার্ট রয়েছে সেগুলোর ওপর দিয়ে বড় বড় রাস্তা, বহুতল ভবন ও বাসাবাড়ি তৈরি হয়েছে। এসব রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে হাজার হাজার যানবাহন। বক্স কালভার্টগুলো উন্মুক্ত করে দিলে সড়কে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে জনসাধারণের চলার পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাসাবাড়ি আর দোকানপাটও ভাঙ্গা সম্ভব নয়। ভাঙতে গেলে দেখা দেবে নানান জটিলতা।
বিষয়টি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত কিন্তু চ্যালেঞ্জিং হিসেবে দেখছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবীব। তিনি বলেন, আসলে বক্স কালভার্ট ঢাকার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেসব খাল একসময় শহরের গৌরব ছিল, সেগুলো দখল করে বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সেই খাল পুনরুদ্ধারের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটি যুগান্তকারী। এখন খালগুলো পুনরুদ্ধার করে যদি সচল প্রবাহ ফিরে আনা যায় তাহলে ঢাকা বাঁচবে। তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটা বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কারণ এসব খালের ওপর আমরা অনেক উন্নয়ন কাজ করেছি। তবে সময় নিয়ে যদি সঠিক কাজটি করা হয় তাহলে সম্ভব। ঢাকায় ভবিষ্যৎ বসবাসের জন্য যা প্রয়োজন সবই করতে হবে।
তবে অকার্যকর এসব বক্স কালভার্ট মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে সচল করা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। এতে কিছু কারিগরি ও নকশাগত পরিবর্তন আনার সুযোগ দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় বক্স কালভার্ট খুলে দেয়া যায় কিনা তা ভাবছে ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, প্রকৌশলগত ভাষায় যদি বলি তাহলে এটা উন্মুক্ত করে দেওেয়া সম্ভব। আমরা তা ভাবছি। কিন্তু এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা বড়। কারণ এর ওপর দিয়ে রাস্তা চলে গেছে। অনেক জায়গায় ঘরবাড়ি উঠেছে। বক্স কালভার্ট উন্মুক্ত করে দিলে তো রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে কী করা যায় সেজন্য মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।
ডিএসসিসি’র এই অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর মতে, বক্স কালভার্ট দিয়ে নিয়মিত পানি প্রবাহ হয় না। পলিথিন আর ময়লা-আবর্জনা ভেতরে ঢুকে তা বন্ধ হয়ে গেছে। ওয়াসা সেগুলো ঠিক মতো পরিষ্কার করছে না। এখন পানি প্রবাহের পরিবর্তে উল্টো ভেতরের পানি রাস্তায় চলে আসে। এ অবস্থায় কিছু কারিগরি পরিবর্তন এনে অস্থায়ীভাবে এগুলো সচল করা যেতে পারে।
এ বর্ষায় কয়েক দফায় বৃষ্টিতে পুরান ঢাকার নিমতলি গেট এলাকায় দেখা গেছে, বক্স কালভার্টের ঢাকনাগুলো দিয়ে ভেতর থেকে ব্যাপক গতিতে বৃষ্টির পানি রাস্তায় চলে আসতে। স্থানীয় দোকানিরা বলেন, শুধু বৃষ্টির সময়ই নয়, বছরের প্রায় সবসময়ই বক্স কালভার্ট দিয়ে এভাবে পানি বের হয়।
রাজধানীর পানিবদ্ধতার পেছনে আরও অনেক কারণ চিহ্নিত করা হলেও নগর পরিকল্পনাবিদরা অপরিকল্পিতভাবে বক্স কালভার্ট নির্মাণকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন। তাদের দাবি, প্রকল্পটি রাজধানীবাসীর জন্য সর্বনাশ ডেকে এনেছে। কারণ খালগুলো ভরাট করে বক্স কালভার্ট নির্মাণ করাটা ছিল রীতিমতো বাস্তবতা বিবর্জিত। তাই বক্স কালভার্ট সরিয়ে খালের রূপ ফিরিয়ে আনা বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন তারা।
নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, সাধারণত বৃষ্টির পানি ভূ-গর্ভের মাটি তার সাধ্যমতো শোষণ করে নেয়। বাকি পানি খাল-বিল ও ড্রেন হয়ে নদীতে চলে যায়। কিন্তু ঢাকায় দুটি পথের সবই অকার্যকর। এ কারণে বৃষ্টি হলে নগরীর পানিবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে।
গত মঙ্গলবার পানিবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় বক্তব্য রাখেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বৈঠকে ওয়াসা’র এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ঢাকায় পানি ধরে রাখার জায়গা নেই। জলাধার থাকার কথা ছিল ১২ শতাংশ, কিন্তু আছে মাত্র ২ শতাংশ। বৃষ্টির পানিও মাটির নিচে যেতে পারে না। প্রাকৃতিক উপায়ে পানি নিষ্কাশনের সব পথ বন্ধ। এখন কৃত্রিম ব্যবস্থায় নিষ্কাশন হচ্ছে।
সভায় খালের ওপর করা বক্সকালভার্টগুলো উন্মুক্ত করার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মতামতের বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। তখন তিনি বিষয়টি ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে জানতে চান। ওয়াসা’র এমডি বলেন, বর্তমানে ঢাকায় ১৫ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট আছে। এগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া ভালো। তবে এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে কী করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা দিতে ওয়াসার এমডিকে নির্দেশ দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। এরপর সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসার আইনগুলোতে পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কিনা তা পর্যালোচনা করতে একটি কমিটি করে দেন তিনি। এর আহŸাআব্বায়ক করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসরিন আক্তারকে।
রাজধানী ঢাকার খালগুলোর মালিক মূলত ঢাকা জেলা প্রশাসন। কিন্তু আশির দশকে খালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পায় ঢাকা ওয়াসা। ২০০১ সালের দিকে অধিকাংশ খাল ভরাট করে তাতে বক্সকালভার্ট নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় ওয়াসা। এতে পানিবদ্ধতা কমার চেয়ে উল্টে বেড়ে যায়। প্রকল্পটি ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৬ সালের ১৫ জুন একনেকে ঢাকার খালগুলো থেকে বক্স কালভার্ট তুলে উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে। তখন খালের আগের রূপ ফিরিয়ে আনতে ঢাকা ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে ওই সিদ্ধান্তের কোনও বাস্তবায়ন হয়নি।
সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসা সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় ১৫ কিলোমিটারের মতো বক্স কালভার্ট রয়েছে। এর ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের। এর মধ্যে রয়েছে— রাসেল স্কয়ার থেকে গ্রিন রোড হয়ে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল, হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজা থেকে সোনারগাঁও হোটেল, পান্থপথ থেকে পরীবাগ, ইব্রাহিমপুর বাজার থেকে মিরপুর বাউনিয়া খাল, সেগুনবাগিচা থেকে আরামবাগ হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, খিলগাঁও থেকে তিলপাপাড়া পর্যন্তসহ আরও কয়েকটি স্থানে স্বল্পদৈর্ঘের বক্স কালভার্ট সড়ক রয়েছে। রাসেল স্কয়ার থেকে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত পান্থপথের প্রায় পুরো রাস্তাই পড়েছে বক্স কালভার্টের ওপর। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।