Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিরাপত্তা নিয়ে কিছু অপ্রিয় কথা

| প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহিউদ্দিন খান মোহন : নিরাপত্তা শব্দটি এখন বাংলাদেশে এক বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশি অতিথিদের কথা আপাতত না হয় বাদই দিলাম। দেশের মানুষের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রæর কতোটা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছে আমাদের পুলিশ এবং অন্যান্য সংস্থা; যারা এ গুরুদায়িত্বে নিয়োজিত? এক কথায় বলা যায়, কোথাও কোনো নিরাপত্তা নেই। সমাজে এখন অপরাধী দুর্বৃত্ত-দুষ্কৃতকারীদের দোর্দÐ প্রতাপ। প্রতিদিন গণমাধ্যমে উঠে আসছে সন্ত্রাসীদের প্রবল পরাক্রমে অপরাধ সংঘটনের খবর। ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি তো আছেই, ইদানীং ধর্ষণের মাত্রা এতোটাই বেড়েছে যে, এ সমাজকে এখন মনুষ্যসমাজ ভাবাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, অপরাধীরা নিজেদেরকে অপরাধী না ভেবে প্রতাপশালী ভাবতে শুরু করেছে। তারা যেন ধরেই নিয়েছে যে, বাংলাদেশ মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে এবং তারা সে মুল্লুকের রাজাধিরাজ। ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় ধর্ষণকারীরা যখন নির্যাতিতা মা-মেয়েকে ন্যাড়া করে দেয়, তখন বুঝতে কষ্ট হয় না, সমাজ কোন অতল গহŸরের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
সবচেয়ে লজ্জার বিষয় হলো, ধর্ষণসহ এসব অপরাধের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি। কেউ হয়তো যুক্তি দেখাতে পারেন, সরকার বা সরকারি দল তো ওদেরকে এসব অপকর্ম করার নির্দেশ বা অনুমতি দেয়নি। না, তা যে দেয়নি, সেটা ঠিক। কিন্তু অপরাধ করে তো ওরা সরকারি দলের ছাতার নিচেই অশ্রয় নেয়। আবার এটাও কেউ বলতে পারেন যে, অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ সাথে সাথে ব্যবস্থা নিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বগুড়ার মা-মেয়ের কথা বলতে পারেন। এটা ঠিক, বগুড়ার বর্বরোচিত ঘটনার পর ধর্ষক এবং মা-মেয়েকে নির্যাতনকারীদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পাশাপাশি শ’ শ’ ঘটনার উদাহরণও তো দেয়া যাবে, যেসব ঘটনায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি!
বগুড়ার মা-মেয়ের নির্যাতনকারীদের পরিচয় এখন আর কারো অজানা নেই। মূল হোতা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন শ্রমিক লীগের বগুড়া শহর শাখার আহŸায়ক তুফান সরকার। আর নির্যাতনের বিচার চাইতে গিয়ে মা-মেয়ে যার বাসায় যার সহযোগিতায় দ্বিতীয়বার নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সে বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর মর্জিনা হাসান রুমকি। পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, তুফান সরকারকে শ্রমিক লীগের বগুড়া শহর শাখার আহŸায়কের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বগুড়ার ঘটনায় পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের ত্বরিত ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ অবশ্যই প্রসংশনীয়। নির্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্যাতিতা মা-মেয়ের চিকিৎসাও চলছে প্রশাসনের তত্ত¡াবধানে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মা-মেয়ে এই যে মানবরূপী দানব কর্তৃক ইজ্জত-সম্ভ্রম হারালো, তা কি আর ফিরে পাবে? শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার এমন বর্বরোচিত নির্যাতন চালানোর দুঃসাহস কোথা থেকে পেলো? পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, মাত্র আঠাশ বছর বয়সী তুফান সরকার কোটি কোটি টাকার মালিক! এ টাকা সে বৈধ পথে উপার্জন করেনি। চাঁদাবাজী, তদবির আর সন্ত্রাসের মাধ্যমেই সে এ বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছে। আর এ অবৈধ সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে তার প্রধান অবলম্বন ছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সাইনবোর্ড। তার যেসব অপকর্মের খবর পত্রিকায় বেরিয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ নেতারা তা জানতো না এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বলা যায়, তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই তুফান বেড়ে উঠেছে এবং বর্তমান টর্নেডোর রূপ পরিগ্রহ করেছে। কেউ কেউ মনে করেন যে, মা-মেয়ের ঘটনা ধামাচাপা দেয়া সম্ভব হয়নি বলেই প্রশাসন তৎপর হতে বাধ্য হয়েছে। পত্রিকায় এমন খবরও বেরিয়েছে, ধর্ষক তুফানের সঙ্গে নির্যাতিতা মেয়েটির বিয়ে দিয়ে ঘটনার মীমাংসা করতে চেয়েছিল একটি মহল। মা-মেয়ে তাতে রাজী না হওয়ায় তাদের ওপর দ্বিতীয় দফা নির্যাতন (প্রহার ও মাথা ন্যাড়া করা) নেমে এসেছে। এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে কাউন্সিলর রুমকি, যার বাসায় তুফান ও তার সহযোগীরা ওই পৈশাচিক ঘটনা ঘটিয়েছে।
বগুড়ার ঘটনায় পালন করা ভূমিকা নিয়ে পুলিশ কিংবা প্রশাসনের আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। কেননা, এটা একটা ব্যতিক্রম। সচরাচর এ ধরনের ঘটনায় পুলিশকে হয় হাত গুটিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়, অথবা দেখেও না দেখার ভান করতে দেখা যায়। বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের ঘটনাবলীর দিকে তাকালে এর অসংখ্য নজির পাওয়া যাবে। শাসক দলের যে কোনো পর্যায়ের একটি জার্সি গায়ে থাকলেই কেল্লা ফতে। পুলিশের সাধ্যি কি ওই জার্সিওয়ালার গায়ে স্পর্শ করে!
এটা স্বীকার না করে কেউ পারবে না যে, বর্তমান বাংলাদেশে জননিরাপত্তা সর্বকালের সর্বনি¤েœ রয়েছে। জনগণের জান-মালের নিরাপত্ত বিধানে পুলিশ তথা সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ- একথা বলা বোধ করি অসঙ্গত হবে না। এর কারণ হিসেবে অনেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহারকে দায়ী করেন। তাদের বক্তব্য হলো, বিরোধী দলকে দমনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যতি-ব্যস্ত রাখায় অপরাধীরা অপরাধ সংঘটনে অবারিত সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ‘ক্ষমতা আমাদের হাতে, যা খুশি তাই করব’- এই ভাবনা থেকে বর্তমান শাসক দলের এক শ্রেণরি কর্মী নানা রকম অপরাধ করে চলেছে। তাদের হাত থেকে পুলিশ জনগণকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না এট এখন অবিতর্কিত সত্য।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন