Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পারমিট নিতে সক্রিয়

| প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার ব্যুরো : আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ঘটাতি পুরণের সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত লবণ আমদানীর সিদ্ধান্তে বাজারে মূল্য কমেছে লবণের, হতাশ হয়েছে চাষিরা। সরকারের লবণ আমদানির সিদ্ধান্তের সুযোগে কেবল কাগজ-কলম সর্বস্ব অস্থিত্বহীন লবণ মিলের নামে লবণ আমদানির অনুমতি পেতে ও ‘পারমিট’ নিশ্চিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে ভুয়া লবণ মিল মালিকেরা। এতে করে লবণ উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাত করণের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ৫লাখ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ২৫ লাখ মানুষ এখন শঙ্কায়।
লবণ বাংলাদেশের একটি স্বনির্ভর খাত। দেশের দক্ষিণপূর্ব অঞ্চল কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালীতেই শুধু লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময় লবণ উৎপাদনের মৌসুম। প্রতিবছর এই সময়ের মধ্যে চাষিরা হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে লাখ লাখ মেট্রিকটন লবণ উৎপাদন করে দেশকে লবণে স্বনির্ভর করে তোলে। গত কয়েক বছর লবণের বাম্পার উৎপাদনে দেশের চাহিদা মিঠিয়ে রপ্তানীর সুযোগ সৃষ্টি হলেও তা হয়নি। এতে করে চাষিরা লবণের ন্যায্যমূল না পেয়ে হতাশ হয়েছে। অনেকদিন পর গতবছর লবণের মূল্য বাড়ায় চাষিরা ভাল দাম পেয়ে খুশী হয়েছিল। সম্প্রতি অতিরিক্ত লবণ আমদানীর সিদ্ধান্তে হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রমে উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার আশঙ্কায় কক্সবাজারের লবণ চাষিরা এখন শঙ্কিত।
কক্সবাজারে পর্যাপ্ত লবণ উৎপাদন হয়ে থাকলেও কোন কোন সময় আবহাওয়া জনিত কারণে চাহিদার তুলনায় কিছুটা কম উৎপাদন হলে আমদানী কারকরা সুযোগে নিয়ে সরকারকে বিভ্রান্ত করে থাকে। গত মৌসুমে আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে চাহিদার তুলনায় ২লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন লবণ কম উৎপাদন হয় বলে কক্সবাজার বিসিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। আপদকালীন সঙ্কট উত্তরণের জন্য সংগত কারণে সরকার ভারত থেকে লবণ আমদানী করে ঘাটতি পুরণের সিদ্ধান্ত নেয়। জানা গেছে, গত ১৩ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে ভারত থেকে তিন লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানীর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আরো জানা গেছে, সরকার নীতিগত কারণে ঘাটতি পূরণের জন্য তিন লাখ মেট্রিক টন লবণ আমাদানীর সিদ্ধান্ত নিলেও একটি সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ৫লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানীর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কক্সবাজার লবণ মিল মালিক সমিতির দেয়া তথ্যে ভুয়া লবণ মিল তালিকায় রয়েছে মহেশখালীর আলিফ সল্ট, আল মোস্তফা সল্ট, সাগরিকা সল্ট, নিউ বিসমিল্লাহ সল্ট, মাহমুদা চ‚র্ণবিচ‚র্ণ কারখানা, ওয়াজেদিয়া সল্ট, নূর সল্ট, কক্সবাজার সদরের ইসলামপুরে ন্যাশনাল আয়োডাইজ সল্ট, রাইসা সল্ট, মাজেদা সল্ট, শাহ মজিদিয়া সল্ট, পপুলার সল্ট, গোমাতলীতে সাগর সল্ট, চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারায় চৌধুরী সল্ট।
সরকারি সুবিধা নিতে ইসলাম এন্ড ব্রাদার্স, কক্সবাজার সল্ট, আমানত সল্ট, এফ আলম সল্ট, গ্রামীণ সল্ট, এম এম সল্ট মাঝে মধ্যে চালু করা হলেও বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। বিসিকের এক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে আলিফ সল্টের নামে গতবারও লবণ আমদানি করা হয়েছিল।
অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার একটি সিন্ডিকেট ও কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীর এক ব্যক্তি শিল্প মন্ত্রণালয়েরর এক যুগ্মসচিব বিসিককে পাশ কাটিয়ে নিজস্ব পছন্দের ৩০-৪০ মিল নিয়ে সিন্ডিকেট করেছেন। পারমিট নিশ্চিত করতে প্রতি মিল থেকে তারা হাতিয়ে নিয়েছেন নূন্যতম দেড় লাখ টাকা। বেশ কয়েক বছর লবণ চাষিরা লবণের ন্যায্যমূল না পেয়ে চাষিরা লবণ চাষ ছেড়ে দেবার উপক্রম হয়েছিল। গত বছর ভাল উৎপাদন ও বাজার মূল্য ভাল পাওয়ায় লবণ চাষিদের মাঝে আবার প্রাণ সঞ্চার হয়। কিন্ত সম্প্রতি লবণ আমদানীর সিদ্ধান্তে ইতোমধ্যেই কক্সবাজারের মাঠে লবণের দাম কমতে শুরু করেছে। গত ১৫দিন আগেও প্রতি কেজি লবণ বিক্রি হয়েছে ৫.০৬টাকায়। আমদানী সিদ্ধান্তের পর দাম কমে প্রতি কেজি লবণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে এখন ৫.৩৮ টাকায়।
কক্সবাজার বিসিকের উপ-মহাব্যস্থাপক দিদার আহমদ চৌধুরী জানান, বিসিকের হিসেব মতে চলতি বছর লবণ মৌসুমে লবণের চাহিদা ছিল ১৫ লাখ ৭৬ হাজার মেট্রিকটন। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে উৎপাদন হয়েছে ১৩ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিকটন। এই হিসেব মতে ২ লাখ ১২ হাজার মেট্রিকটন লবণ ঘাটতি পূরণের কথা বিসিক মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।
জানা গেছে, সরকারকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে একটি সিন্ডকেট ঘাটতির চেয়েও অতিরিক্ত লবণ আমদানীর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে তারা চোরাই পথে লবণ আমদানী করে দেশের স্বনির্ভর খাত লবণের বারটা বাজিয়েছিল। চাষিরা মূল্য না পেয়ে হাজার হাজার টন লবণ নদীতে ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ করেছিল। পূবালী সল্ট, মোল্লা সল্ট, কনফিডেন্স সল্ট, এসিআই ও ফ্রেস সল্ট ইন্ডাজট্রির মালিকেরা ঘাটতির চেয়ে অতিরিক্ত লবণ আমদানীর পক্ষে প্রভাভ সৃষ্টি, পারমিট বাণিজ্য ও চোরাই পথে লবণ আমদানীর সাথে জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন কক্সবাজারের লবণ সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
বাজারে এখন চাষিরা পাঁচ টাকার লবণ সাড়ে চার টাকায় বিক্রি করলেও কমেনি প্যাকেটজাত লবণের দাম। উল্লেখিত ইন্ডাজট্রির মালিকরা কিন্তু পাঁচ টাকায় লবণ কিনে লেভেল লাগিয়ে বাজারে ৩৫ টাকায় বিক্রি করছে প্রতি কেজি লবণ। প্রতি মন লবণের মূল্য চাষিরা ২০০ টাকা পেলেও ইন্ডাজট্রির মালিকরা প্রতি মন লবণ বিক্রি করে নিচ্ছে ১২শ’ টাকা।
এ প্রসঙ্গে মহেশখালীর লবণ চাষি সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল কাদের বাবুল বলেন, যে পরিমাণ লবণ ঘাটতি পড়েছে সে পরিমাণ লবণ আমদানী করা যুক্তি সঙ্গত। এর বেশী আমদানী করা হলে বিরুপ প্রভাব পড়বে লবণ মাঠে। চাষিরা ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লবণ চাষ ছেড়ে দিতে পারে। এতে করে গোটা লবণ খাতই হয়ে পড়বে বেসামাল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ