Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দোকলাম বিরোধ যে সব কারণে চীন পিছু হটতে পারে না

| প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তিব্বত.সিএন : দোকলাম অঞ্চলে চীন ও ভারতের মধ্যকার সামরিক বিরোধ সৃষ্টির পর প্রায় দু’মাস হয়ে গেলেও তা অবসানের কোনো লক্ষণ চোখে পড়ছে না। চীন ইতোমধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে এ ব্যাপারে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। ভারতীয় সৈন্যদের নিঃশর্ত ও অবিলম্বে প্রত্যাহারই হচ্ছে এর একমাত্র সমাধান। তিনটি প্রধান কারণে চীন এক্ষেত্রে পিছু হটবে না, হটতে পারে না।
প্রথমত, দোকলাম হচ্ছে চীনা ভূখন্ড এবং এ নিয়ে কোনো সন্দেহ বা বিতর্ক নেই। দোকলাম বিরোধ চীন- ভারত সীমান্তে আগের সামরিক বিরোধের চেয়ে আলাদা এ কারণে যে পারস্পরিক স্বীকৃত সীমান্তে এটাই প্রথম চীনের ভূখন্ডে ভারতীয় অনুপ্রবেশের ঘটনা। দোকলাম অঞ্চল চীনের এবং বহুদিন ধরে তা চীনের শাসনাধীনে রয়েছে। চীনের তিব্বত স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল ও ভারতের সিকিম রাজ্যের মধ্যে সীমান্তের এ অংশ ১৮৯০ সালে সিকিম ও তিব্বত বিষয়ে গ্রেটব্রিটেন ও চীনের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত।
স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ভারতের প্রতিটি সরকারই এ সীমান্ত নিশ্চিত করেছে। এটা বোঝা কঠিন যে কেন ভারত এ ব্যাপারে তার আগের অবস্থান পরিত্যাগ এবং এ সময় চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি চীন একন পিছু হটে তাহলে ভারত ভবিষ্যতে আরো সমস্যা সৃষ্টি করার সাহস পাবে। বেইজিং ও নয়া দিল্লীর মধ্যে এখনো সীমান্তের অমীমাংসিত এলাকা নিয়ে বিরোধ রয়েছে, কিন্তু দোকলাম সে সবের মধ্যে পড়ে না।
দ্বিতীয়ত, চীনা ভূখন্ডে ভারতীয় সৈন্য প্রেরণ একবারেই অবৈধ, এমনকি নিরাপত্তা বা ভুটানকে রক্ষার অভিযোগেও। এটি কোনো বিরোধপূর্ণ এলাকা নয়। ভারত তার পদক্ষেপের পক্ষে কোনো বৈধ ভিত্তি প্রদর্শন করেনি। ভারত বলছে যে, কিছু সড়কের নির্মাণ মারাত্মক সামরিক প্রতিক্রিয়াসহ স্থিতাবস্থার গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটিয়েছে এবং ভুটানের সহযোগিতায় ভারতীয় সামরিক বাহিনী নির্মাণ কাজ বন্ধের চেষ্টা করেছে। ভারত ভুটানকে রক্ষার নামে তার কাজকে যৌক্তিক বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে এবং যুক্তি প্রদর্শন করছে যে দোকলাম ভুটানের ভূখন্ড। কিন্তু যদি সেটাও হয় তাহলে ভারত কিভাবে সেখানে সৈন্য পাঠাতে পারে?
ভারত ও ভুটানের মধ্যে ঐতিহ্যগত ভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভারত ভুটানকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা এ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে যে থিম্পু কখন এবং কেন তার স্বার্থ রক্ষা করার জন্য ভারতকে আমন্ত্রণ করল? এ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। স্পর্শকাতর চিকেন্স নেক বা শিলিগুড়ি করিডোরের কারণে ভারতের কাছে দোকলামের বিপুল কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে। এটি হচ্ছে উত্তর পূর্ব ভারতের সাথে বাকি অংশের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র পথ।
ভারতের নিজস্ব নিরাপত্তা উদে¦গ প্রতিবেশী দেশের ভূখন্ড দখলের কারণ হতে পারে না। তারা যদি তা করে তখন যে কোনো দেশ তার সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কারণে পাশ^বর্তী দেশে তার সামরিক বাহিনী পাঠাতে পারে।
সর্বশেষ, সীমান্ত রেখা হচ্ছে ভিত্তি রেখা। চীন ক্লান্তিহীনভাবে বলে আসছে যে সে কখনো কোনো লোক, কোনো সংগঠন বা রাজনৈতিক দলকে চীনা ভূখন্ডের কোনো অংশকে কোনো আকারে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে দেবে না। এ ব্যাপারে চীনের অবস্থান স্ফটিকস্বচ্ছ ও অপরিবর্তনীয়।
কিছু ভারতীয় কৌশলবিদ ও নীতিনির্ধারক ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে ভাবতে পারেন যে শিগরিই বা পরে চীন পিছু হটবে। তারা চীনের চলমান সংস্কারের ব্যাপারে মহল বিশেষের ভিন্ন মত উদ্ধৃত করছেন যে পিপলস লিবারেশন আর্মির সংস্কার এখনো শেষ হয়নি এবং ভারত চীনকে নিবৃত্ত করার মার্কিন পরিকল্পনায় এক প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রতিবেশীর সাথে কোনো যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার কোনো কারণ বা ইচ্ছা চীনের একেবারেই নেই। চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বর্তমান সংস্কারের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ জরুরি। কিন্তু এটা মনে করা হাস্যকর যে চীন তার সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখন্ডতার সাথে আপোস করবে। চীন বিদেশী সামরিক চাপে কখনো নতি স্বীকার করবে না এবং যে কোনো মূল্যে তার নিজ ভূখন্ড রক্ষা করবে।
সবশেষে, ভারতের জন্য একমাত্র পথ হচ্ছে চীন থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার এবং সংকটের বিস্তার রোধ করা। সকলের মৌলিক স্বার্থেই চীন-ভারত সীমান্ত এলাকায় অব্যাহত শান্তি ও সম্প্রীতি অপরিহার্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ