Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বরিশালে পুলিশের নৈতিক স্খলন ও অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে

| প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদাদাতা : বরিশাল জেলা ও মহানগর পুলিশের নৈতিক স্খলন তলানীতে ঠেকা এ বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কিছু কিছু ঘটনা জনসমক্ষে চলে আসার পরে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও তাও অনেক ক্ষেত্রেই ‘গুরু পাপে লঘু দন্ড’ বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। গত একমাসে বরিশাল জেলার ও মহানগর পুলিশের কনেষ্টবল থেকে এএসপি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনৈতিক কর্মকান্ডে কয়েকজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও এধরনের আরো বহু ঘটনা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওয়াকিবাহল মহলের অভিযোগ, গত কয়েক বছর যাবত পুলিশ অতিমাত্রায় রাজনৈতিক কাজে ব্যবহ্রত হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে অপরাধ দমনের চেয়ে নিজেরাই অপরাধ প্রবনতায় জড়িয়ে পরার প্রবনতা বাড়ছে এ বাহিনীতে ।
বরিশাল মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানার সহকারী কমিশিনারের কম্পিউটার অপারেটর কনেষ্টবল মেহেদি হাসানওকে গত ৭জুলাই ইয়াবা বিক্রির সময় স্থানীয় জনতা বানারীপাড়া থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। পরে তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বরিশালেরই গৌরনদী সাকের্লের এএসপি রেজাউল করিমকে সম্প্রতি মাদক বিক্রেতার ব্যবসাকে লালনের অভিযোগে গোয়েন্দা বিভাগের তদন্তের পরে আর্মড পুলিশে বদলী করা হয়েছে। গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর প্রেক্ষিতে গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে থাকা এক প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করতে গিয়ে এএসপি রেজাউল করিমের রোষানলে পরে থানার এক এসআই। এএসপি রেজাউল মোবাইল ফোনে রাসেল প্যাদা নামের ওই মাদক বিক্রেতাকে হয়রানী না করার জন্য থানার এসআই’কে শাসিয়ে তা আবার সেল ফোনের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীকে শোনান। রাসেল তার ব্যবসা চাঙ্গা রাখতে এএসপি কর্তৃক দারোগাকে শাসানো ও তার সাথে ফোনালাপের পুরো ঘটনা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে সহযোগীদের কাছে ছড়িয়ে দেয়। পুরো রেকডিংটি কয়েকদিনের মধ্যে পুরো এলাকায় ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি তদন্ত করে এএসপিকে এপিবিএন-এ বদলী করা হয়।
এদিকে মাদক ব্যবসায় মদত দেয়া থেকে শুরু করে ইয়াবা সহ মাদক ব্যবসায় নিরিহ মানুষকে জড়ানো এবং ইয়াবা পকেটে ঢুকিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে গৌরনদী থানার ওসিকে বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্স-এ ক্লোজ করা হয়েছে। এমনকি উল্লেখিত ইনেসপেক্টর নিজেকে ডিআইজি’র ছোটভাই এবং প্রধানমন্ত্রী তাকে বিশেষ এসাইনমেন্ট দিয়ে গৌরনদীতে পাঠিয়েছেন বলে প্রচার করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে উল্লেখিত পুলিশ কর্মকর্তা এসব অভিযোগ অস্বিকার করেছেন। সদ্য বিদায়ী এসপি বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতেই গৌরনদীর ওসিকে পুলিশ লাইন্স-এ ক্লোজ করার কথা বললেও অভিযূক্ত ওসি তা অস্বিকার করেছেন।
এদিকে বরিশাল বিমান বন্দর থানার সাব-ইনেসপেক্টর মাইনুল ইসলামকে নগরীর কোতয়ালী থানা এলাকার মুসলিম গোরস্থান রেডের একটি বাড়ীতে এক পরস্ত্রীর সাথে পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় হাতেনাতে ধরা পড়ার পরে বুধবার পুলিশ লাইন্সে কোøজ করা হয়েছে। বরিশাল মহানগর, জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে কনেষ্টবল থেকে এএসপি পর্যন্ত পুলিশ কর্মীদের নানা অনৈতিক ঘটনা সমাজিক সমস্যার সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। তবে তাদের মতে, যেসব ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে আসছে, অপ্রকাশ্যে তার সংখ্যা অনেক বেশী। এসব ঘটনা পুলিশ বিভাগকে ক্রমশ বিতশ্রদ্ধ করছে জনমনে।
তবে পুলিশের দায়িত্বশীল মহলের মতে, পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষনিক নজর রাখা হচ্ছে। কোন অপরাধের জন্য কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। নি¤œ থেকে উচ্চ পর্যায়ে যেকেন অপরাধের জন্য শাস্তি পেতে হচ্ছে। কোন ছাড় দেয়ার প্রশ্নই ওঠেনা বলে জানিয়েছেন বরিশাল মহানগর,জেলা ও রেঞ্জ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ