Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘রাজনৈতিক কারণে বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়’

মনে হয় মাঠে বসে বিচার কাজ করতে হবে : প্রধান বিচারপতি

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে দাবি করা হলেও বিচার বিভাগের অবকাঠামো উন্নয়নে সে ছোঁয়া লাগেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা। তিনি জানান, তিনি যে চেয়ারে বসেন সামান্য বৃষ্টি হলেই সে চেয়ারে বৃষ্টির পানি পড়ে। গতকাল শনিবার দেশের প্রথম নারী বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) নাজমুন আরা সুলতানার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনে আমি যে চেয়ারে বসি, সেখানেও বৃষ্টির পানি পড়ে। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের মূল রেকর্ড রুমও এ ভবনে। সামনে মনে হয় মাঠে বসে বিচার কাজ পরিচালনা করতে হবে। বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশন। সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে মহিলা জজদের অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তানজীনা ইসমাইলের সভাপতিত্বে এ সম্মাননা অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও উপস্থিত ছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের বর্তমান বেহাল অবস্থার চালচিত্র তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ২০ তলা নতুন ভবনের প্রস্তাব একনেকেই ঘোরাঘুরি করছে। বর্তমান মূল ভবন মনে হয় আর পাঁচ-ছয় বছরের বেশি টিকবে না। এটি ধসে গেলে মনে হয় আমাদের মাঠে বসেই বিচার কাজ পরিচালনা করতে হবে। তিনি বলেন, হাইকোর্টে বিচারকের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়া না থাকায় প্রতিটি রাজনৈতিক সরকার ইচ্ছেমতো হাইকোর্টে বিচারক নিয়োগ দিয়ে থাকে। সময় আসছে হাইকোর্টে বিচারক সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়ার। বিচারকের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়া থাকলে রাজনৈতিক প্রভাব কমে যায়। এই রাজনৈতিক প্রভাব যতই কমবে, ততই বিচার বিভাগের জন্য মঙ্গল। আমাদের দেশে মামলার পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিচারক নিয়োগ দেয়া হয় না। বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশে মামলার সংখ্যানুপাতে বিচারক নিয়োগ দেয়ার বিধান আছে। ভারতের তুলনায় আমাদের এখানে অর্ধেক বিচারক। ইউএসএতে সুপ্রিম কোর্টে ৯ জন বিচারক। ইচ্ছে করে সরকার সেখানে এর বেশি বিচারক নিয়োগ দিতে পারে না। একটা কনভেনশন (রীতি) চলে আসছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারকের সংখ্যাও নির্ধারণ করে দেয়া আছে। আর আমাদের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ১১ জন বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এখন বিচারক কমে ছয়জনে দাঁড়িয়েছে। এরপর আগামী বছর এই সংখ্যা চারজনে গিয়ে দাঁড়াবে। তখন কোনো রিভিউ পিটিশন আসলে বিচারকের অভাবে সেটি শুনানি করা সম্ভব হবে না। এসব বিবেচনা করে সরকারকে বলব, বিচার বিভাগ অকেজো হওয়ার আগে এটিকে টিকিয়ে রাখতে বিচারক নিয়োগ দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।
আইনমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকার যদি মনে করে; প্রধান বিচারপতি রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছে, তাহলে আমি বলব ‘হ্যাঁ’। প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের স্বার্থেই রাজনৈতিক বক্তব্য দেবেন। বিচারকদের অবস্থা ও বিচার বিভাগের উন্নয়নের জন্য প্রধান বিচারপতি আরো বলবেন। এ ব্যাপারে আমি দ্বিধান্বিত হব না। জাতীয় বাজেটে বিচার বিভাগের বরাদ্দ কমিয়ে দেয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, গত তিন বছরে সুপ্রিম কোর্টের উন্নয়ন বরাদ্দের জন্য একটি টাকাও দেয়া হয়নি। অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলাম, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কোনো টাকা বরাদ্দ হয়নি। অথচ জাতীয় সংসদের জন্য উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ হয়েছে ১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এ ছাড়া সন্ত্রাসের কারণে দেশের সব জায়গায় নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের বাজেট থেকে এবারের বাজেটে বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এভাবে বাজেটের বরাদ্দ প্রত্যাহার করে একেবারে ‘শূন্য’ করে দেয়া হচ্ছে। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে বিচার বিভাগ চলবে কীভাবে? আইনমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, মাননীয় মন্ত্রী আপনাকে বলছি, সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবন ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। আমি যে চেয়ারে বসি, সামান্য বৃষ্টি হলে সেখানেও বৃষ্টির পানি পড়ে। নতুন একটা অ্যানেক্স ভবন না করলে মাঠে বসে বিচার কাজ করতে হবে। মাননীয় মন্ত্রী বিচার বিভাগ কীভাবে চলবে?
বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে নারী বিচারকদের পথপ্রদর্শক উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে আমাদের দেশে নারী বিচারকরা অগ্রগামী। সরকার এগিয়ে আসলে হাইকোর্টে আরো নারী বিচারক নিয়োগ দেয়া সম্ভব। আমাদের দেশে রেওয়াজ হয়ে গেছে, পলিটিক্যাল সরকার ক্ষমতায় এসে হাইকোর্ট বিভাগে ইচ্ছামতো বিচারপতি নিয়োগ দেন। হাইকোর্টের বিচারপতিদের একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকতে হবে। এ সময় সরকারের প্রতি আপিল বিভাগে আরো তিনজন বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার আবেদন জানিয়ে বিচার বিভাগ অকেজো হয়ে যাওয়ার আগে সর্বোচ্চ আদালতের বিভিন্ন শূন্যপদে বিচারক নিয়োগ এবং সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে মনোযোগী হতে সরকারের প্রতি তিনি আহŸান জানান।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা এ দেশ এবং বিচার বিভাগের ইতিহাসের অংশ। তিনি এ দেশের বিচার বিভাগের অহঙ্কার। তাকে অনুসরণ করে অনেক নারী এ পেশায় এসেছেন। আজ তাই দেশে ২৪ শতাংশ নারী বিচারক রয়েছেন। অনুষ্ঠানে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, আমি আমার বিচারিক জীবনে ন্যায়বিচার করে গেছি। কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা অবহেলায় ভুল বিচার করিনি। নারী বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রিয় নারী বিচারকরা মনে রাখবেন, বিচারকের জীবন মানেই ন্যায়বিচারের দায়িত্ব কাঁধে নেয়া। আর এ দায়িত্ব পালন করা খুব কঠিন ও পরিশ্রমের।



 

Show all comments
  • Nezam uddin ৩০ জুলাই, ২০১৭, ৩:০৩ এএম says : 0
    আমি মনে করি বিচার বিভাগ কে রাজনৈতিক থেকে আলাদা করে সম্পুর্ণ সাধীন ভাবে কাজ করার জন্য দেওয়া ভাল হবে না হয় যে সরকার আসুক নিজ ইচ্ছে মতোই লোক বসাবে বিচার বিভাগ কে প্রবাবিত করবে অন্যায় কারী পার পেয়ে যাবে এবং ভাল লোক রাজনৈতিক শিকার হবে তাই আমাদের দেশকে সভ্য দেশে আনতে হলে বিচার বিভাগ কে রাজনৈতিক থেকে আলাদা করা দরকার মনে করি
    Total Reply(0) Reply
  • Sultan Ahmed ৩০ জুলাই, ২০১৭, ৪:০৩ এএম says : 0
    It's an extremely sad news.We know that Bichar Bivag is one of the significant part of our government.It's established by our constitution.Though, this goventment is totally adverse to this fact!!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Nesar ৩০ জুলাই, ২০১৭, ১১:১৪ এএম says : 0
    The Man of principal
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিচারক

১৭ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ