পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজধানী ঢাকায় নতুন খাল খনন, পুরনো খাল সংস্কার, জলাধার সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একই সঙ্গে সরকার ২০২১ সাল নাগাদ ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে বিভাগীয় সদরগুলোতে ভূ-উপরিস্থিত নিরাপদ পানি সরবরাহের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে তিন দিনব্যাপী ‘ওয়াটার সামিট-২০১৭’ এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এসডিজি’র নির্ধারিত সময়সীমা ২০৩০ সালের আগেই আমরা শতভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে চাই। ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ২০২১ সালের মধ্যেই সকলের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে পারব। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য- স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
জাতিসংঘের পানি এবং স্যানিটেশন বিষয়ক বিশেষ প্যানেলের সদস্য শেখ হাসিনা বলেন, শিল্পাঞ্চল, বসতি স্থাপনসহ সকল এলাকার জলাধার সৃষ্টি, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং বর্জ্য ও দূষিত পানি নিষ্কাষণ করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নাব্যতা হ্রাস প্রতিরোধে দেশে নদ-নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লবণাক্ত পানিপ্রধান এলাকায় পুকুরের পানি ফিল্টার করে লবণাক্ততা মুক্ত করা হয়েছে, ৭ হাজার পুকুর এবং গভীর কূপ খনন করা হয়েছে ৩২ হাজার ৬শ’ টি। বর্ষার পানি সংরক্ষণে ৪ হাজার ৭শ’ জলাধার তৈরি করা হয়েছে এবং ২০২১ সালের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাসহ সকল বিভাগীয় শহরের নিরাপদ পানি ভূ-উপরিস্থ পানি থেকে নিশ্চিত করার কার্যক্রম চলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন ছিল সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বের তাগিদ থেকে নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব পরিস্থিতির দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, গোটা বিশ্বে এই মুহুর্তে ২৪০ কোটি লোক স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া নিরাপদ পানির অভাবে পৃথিবীতে বছরে ১০ লাখ লোক মারা যায়, যাদের অধিকাংশই শিশু। প্রতিদিন গড়ে বিশ্বে এক হাজার শিশু বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রাণ হারায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি- তিন দিনব্যাপী ‘ঢাকা পানি সম্মেলন-২০১৭’, ডেল্টা সামিটের ওয়ার্কিং সেশন এবং শেরপা বৈঠকগুলোতে বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনা ও পয়ঃ নিষ্কাশনের পথে বাঁধাসমূহ চিহ্নিত হবে এবং এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ কর্মকৌশলও বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, পৃথিবীর শতকরা ৯০ শতাংশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী পানি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর শতকরা ৭০ ভাগই বন্যা এবং অন্যান্য পানিবাহিত দুর্যোগে হয়। বিশুদ্ধ খাবার পানি শুধু আমাদের বেঁচে থাকার জন্যই নয়, সমগ্র প্রাণিকূলেরও বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বে শতকরা ১ ভাগেরও কম পানিসম্পদ পানের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়। ফলে এখনও পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১শ কোটি মানুষেরই সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগর সভ্যতার ক্রমবিকাশ এবং প্রযুক্তিগত ভিন্নতায় পানি ব্যবহারের ধরন বদলেছে। তবে সুপেয় পানি প্রাপ্যতার প্রতি হুমকি রয়েই গেছে। বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ কমবেশি সুপেয় পানি সমস্যায় ভুগছেন।
বিশ্বের প্রায় একশ’ সাত কোটিরও বেশি মানুষ নদী অববাহিকায় বসবাস করেও পানির চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ব্যবহৃত শতকরা ৮০ শতাংশের বেশি অপরিশোধিত বর্জ্য-পানি প্রকৃতিতে ফিরে গিয়ে আরও বড় আকারে পরিবেশের দূষণ সৃষ্টি করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার জনগণের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই বিশেষ সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। এমডিজির লক্ষ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে ৮৪ শতাংশ লোকের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করার লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল। ২০১৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ৮৭ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পেয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে ৯৮ ভাগ মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছেন।
সরকার ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানির সংরক্ষণ ও ব্যবহার উপযোগী করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজি-৬ এর নির্দেশনার আগেই আমরা বিশেষ শ্রেণির জনগোষ্ঠী যেমন শিশুদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা বিশেষ এলাকা যেমন লবণাক্ততা বা আর্সেনিকযুক্ত এলাকা, দুর্গম পাহাড়ী এলাকার জন্য বহুমুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে তৃণমূলের প্রান্তিক জনগণের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
সরকার প্রধান বলেন, শতবর্ষের পরিবর্তনের গতিধারা মাথায় রেখে পানি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য আমার সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ হচ্ছে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান’। আমরা ‘হান্ড্রেড ইয়ার বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান (বিডিপি)-২১০০’ হাতে নিয়েছি। এটা একটি দীর্ঘ মেয়াদী সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা।
পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাস মাহমুদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এলজিআরডি এবং সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।