পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার আগেই ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘ঢাকা পানি সম্মেলন ২০১৭’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ৮৭ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানির আওতায় এসেছে। ২০৩০ সালের আগেই শতভাগ মানুষকে এর আওতায় আনতে কাজ করছেন তিনি। এ সময় নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়ার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি-৬ এ অন্তর্ভুক্ত পানি সংক্রান্ত বৈঠকের তিনটি অংশ একটি এই পানি সম্মেলন। গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে এই বৈঠক চলবে রোববার পর্যন্ত।
বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী ও বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে শুক্র ও শনিবার হোটেলে সোনারগাঁওয়ে চলছে ডেল্টা ওয়ার্কিং সেশন। আর পানি সম্মেলনের অংশে শনি ও রোববার নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে আলোচনা চলছে। রোববার বিকালে ‘ঢাকা পানি ঘোষণা’র মাধ্যমে এই পানি সম্মেলন শেষ হবে।
এই দুদিন জাতিসংঘের পানি সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলে বিভিন্ন দেশের সরকারি মুখপাত্রদের (শেরপা) দশম বৈঠকও হবে। এতে ১১ জন সদস্যের মধ্যে নয়জন অংশ নেবেন। জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি ২০৩০ এর ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ৬ নম্বর ‘সকলের জন্য নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ’।
তিন দিনের বৈঠকের মধ্যে ‘ঢাকা পানি সম্মেলন-২০১৭’, ডেল্টা সামিটের ওয়ার্কিং সেশন এবং শেরপা বৈঠকগুলোতে বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনা ও পয়ঃনিষ্কাশনের পথে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত হবে এবং তা মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ কর্মকৌশলও বের হয়ে আসবে বলে আশাপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর শতকরা ৯০ ভাগ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী পানি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর শতকরা ৭০ ভাগই সংঘটিত হয় বন্যা এবং অন্যান্য পানি-সংক্রান্ত দুর্যোগে। বিশ্বে শতকরা ১ ভাগেরও কম পানিসম্পদ পানের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচিত হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষের সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগর সভ্যতার ক্রমবিকাশ এবং প্রযুক্তিগত ভিন্নতায় পানি ব্যবহারের ধরনের পরিবর্তন হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সুপেয় পানির প্রাপ্যতা হুমকিতেই রয়ে গেছে। বিশ্বের প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ কমবেশি সুপেয় পানি সমস্যায় ভুগছেন। তিনি বলেন, বিশ্বের প্রায় ১০৭ কোটিরও বেশি মানুষ নদী অববাহিকায় বসবাস করেও পানির চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
মনুষ্য সৃষ্ট ৮০ শতাংশেরও বেশি অপরিশোধিত বর্জ্য পানি প্রকৃতিতে ফিরে গিয়ে বড় আকারে পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করছে বলেও শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন।
নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে তার সরকার ইতোমধ্যেই বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে ৮৪ শতাংশ মানুষের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করার লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল। ২০১৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ৮৭ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানির আওতায় এসেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধা পাচ্ছেন। এসডিজির নির্ধারিত সময়সীমা ২০৩০ সালের আগেই আমরা শত ভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধার আওতায় এসেছে। এর মধ্যে শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় এসেছে ৬১ শতাংশ মানুষ। উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগের হার গত ৮ বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়ে বর্তমানে ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ২০০৩ সালেও এই হার ছিল ৪২ শতাংশ।
এ বিষয়ে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সময়-ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানির সংরক্ষণ ও ব্যবহারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
পানি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য ১০০ বছর-মেয়াদি ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ উদ্যোগ গ্রহণ করার কথাও শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই দীর্ঘ-মেয়াদি সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আগামী ১০০ বছরে পানির প্রাপ্যতা, তার ব্যবহার এবং প্রতিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
এই পরিকল্পনায় ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও পানির বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এতে সমতল, পাহাড় ও উপকূলীয় এলাকাকে ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনার আওতায় আনা হয়েছে। উন্নয়ন সহযোগী ১২টি দেশের সহযোগিতায় ‘ডেল্টা প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণভাবে প্রতিদিনের পানির ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় আমাদের দেশে মূল সমস্যা হচ্ছে আর্সেনিক ও লবণাক্তটা, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস, ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের অপ্রতুলতা, পানির অপচয় এবং শিল্প বর্জ্যসহ নানা কারণে পানি দূষণ। এসব সমস্যা মোকাবেলা করতে আমরা স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ-মেয়াদি পরিকল্পনা কার্যকর করে যাচ্ছি।
এ সময় নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনায় সরকারের নেওয়া কার্যক্রমগুলোও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ঢাকা পানি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডেলটা কোয়ালিশনের কো-চেয়ারম্যান আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পানিসম্পদ মন্ত্রী ও ডেলটা কোয়লিশনের চেয়ারপারসন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।
শুরুতেই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। এরপর শিল্পকলা একাডেমির পরিকল্পনায় শিশুদের সমন্বিত নৃত্যের সঙ্গে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশিত হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে ‘বেঙ্গল ডেলটা’ শীর্ষক বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের ওপর দুটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
উল্লেখ্য, ‘টেকসই উন্নয়নে পানি’ সম্মেলনের এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই সোনারগাঁও হোটেলে পানি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে খাদ্য নিরাপত্তাসহ এসডিজির সাতটি অভিষ্ঠ লক্ষ্য সামনে রেখে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও ডেল্টা কোয়ালিশনভুক্ত অঞ্চলের ২৭টি দেশের মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীসহ ৮২ জন বিদেশি প্রতিনিধি অংশ নেন। সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
সম্মেলনে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, পানির গুণগতমান, ব্যবহার এবং সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার ওপর চারটি কারিগরি আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এ আলোচনা পর্বসমূহে আটটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করা হবে। সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে সুপারিশক্রমে ‘ঢাকা পানি ঘোষণাপত্র’ গৃহীত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।