Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অন্তহীন অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের নামে বাণিজ্য

উত্তরা গার্লস হাই স্কুল এন্ড কলেজের দুর্নীতি তদন্তে দুদক

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : অন্তহীন অনিয়ম দুর্নীতি আর অবস্থাপনার অভিযোগ ওঠেছে উত্তরা গার্লস হাই স্কুল এন্ড কলেজ কমিটি ও প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনের বিরুদ্ধে। সরকারী সকল নিয়ম নীতি লংঘন করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রদান, অর্থ আত্মসাত এর অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রণালয় ও দুদক থেকে শুরু হয়েছে তদন্ত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন না থাকার পরেও অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম নামের ওই ব্যক্তিকে কলেজ শাখায় প্রভাষক পদে নিয়াগ দেয়া হযেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ওই কলেজে অফিস সহকারী পদে চাকুরী করার সময় দুর্নীর মাধ্যমে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেন। পরে দুর্নীতির দায় স্বীকার করে আংশিক অর্থ ফেরৎ দেন প্রতিষ্টানকে।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে, সাইফুল ইসলাম বলেন, কলেজের বর্তমান কমিটি তাকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রভাষক পদে। তিনি দাবী করেন, তার যোগ্যতাবলেই এ পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তবে নিয়োগের সময় তার শিক্ষক নিবন্দনের সনদ ছিলনা বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
ওই প্রতিষ্টানে অর্ধনরত এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও দুদক বরাবর অভিযোগ করার পর তদন্ত করার নিদের্শ দেয়া হযেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দুদক কার্যালয় থেকে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাত, নিয়োগ বাণিজ্য এবং সভাপতি মাহমুদা ইদ্রিছ ৮ বছরে প্রায় ৩ কোটি আত্মসাত করেছে । উত্তরা কমার্শিয়াল ব্যাংকেই তার ১ কোটি টাকার বেশি গচ্ছিত রয়েছে বলেও অভিযোগের আবেদনে বলা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়,চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিধান না থাকা সত্তে¡ও জনৈক আবদুল বারী সাহেবকে মাসিক ৫০ হাজার (পঞ্চাশ হাজার) টাকা বেতনে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের অবস্থার বিচারে বড় অঙ্কের বেতন, অবৈধ নিয়োগ এবং তার কর্মহীন অফিসে বসে বসে বেতন গ্রহণ করায় শিক্ষক/কর্মচারী, অভিভাবক সবাই ক্ষুব্ধ। এ বিশাল অংকের বেতন হতে সভাপতিকে প্রতি মাসে ২০হাজার টাকা দিতে হয় বলে জানা যায়। এ বছর এসএসসিতে ১১২ জন্য মধ্যে ৭ জন ফেল, মাত্র ১২ জন এ প্লাস। এমন নি¤œমানের ফলাফল বিগত ১০ বছরে ও হয়নি।
সভাপতি তার ছেলের বন্ধু আতিকুল ইসলামকে, তার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক চাচাত ভাই বদরুজ্জামানকে এবং রওশন বেগম নামে একজনকে শুধু রেজুলেশন করে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রদান করেছেন। তাদের প্রত্যেককে প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতির পরোয়া না করে অতিরিক্ত বেতন ও প্রদান করেছেন। পূর্বের হেড মাস্টার হজরত আলী তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তার সাথে বিরোধ লেগেই ছিল। আর নির্বিঘেœ ও অবাধ দুর্নীতি করতে আগের প্রধান শিক্ষক হযরত আলীকে বেআইনী ভাবে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ,মো: সাইফুল ইসলাম অফিস সহকারী থাকাকালে প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাত করে, আংশিক টাকা ফেরত ও দেয় । তার স্কুল ও কলেজ কোন শাখায়ই নিবন্ধন নাই। তারপরও এ অর্থ আত্মসাতকারী সাইফুল ইসলামকে চাকরি থেকে বহিষ্কার না করে তাকে অন্যায়ভাবে প্রথমে স্কুলে এবং পরে কলেজে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে পুরস্কৃত করেন। এ জুনিয়র শিক্ষককেই পরপর তিনটি কমিটিতে শিক্ষক প্রতিনিধি করা হয়েছে। নিবন্ধন না থাকায় তার কলেজে বর্তমান নিয়োগ বাতিলযোগ্য। টাকা আত্মসাত করে তার দোষ স্বীকার করে অর্থ জমা দেয়ার পর কি করে তার শাস্তি না হয়ে প্রমোশন হয়? এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। অভিযোগ রয়েছে, সভাপতিকে এ নিয়োগ বাবদ ৫ লাখ (পাঁচ লক্ষ) টাকা দিয়েছে বলে সাইফুল ইসলাম নিজেই অনেককে বলেছেন।
প্রাথমিক শাখা সংযুক্ত এবং মাধ্যমিক শাখা এমপিওভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানে ¯œাতক কোর্স চালু করা প্রবিধান না থাকা এবং প্রতিষ্ঠানের সে রকম বাস্তব প্রেক্ষাপট না থাকা সত্তে¡ও নিয়োগ বাণিজ্যের অসৎ উদ্দেশ্যে ১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। কিন্ত ২২/১০/২০১৫ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণায় গভর্নিং বডির নিয়োগের ক্ষমতা রহিত করেন। তারপরেও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ২৩ ও ২৪ অক্টোবর/১৫ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করায় একদিনের জন্য নিষেধাজ্ঞায় হয়ে যায়। নিয়োগ বাণিজ্যের লোভে পরে ‘দৈনিক সংবাদ মোহনা’ নাক ভুয়া বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। তবে পরবর্তীতে কমিটিন অন্রান্য সদস্যদের সাথে সভাপতির টাকা ভাগাভাগি দ্ব›েদ্ব তা এখন বন্ধ আছ। এ দ্ব›দ্ব থেকেই সভাপতি তার প্রিয়ভাজন হা¯œা হেনা পারভীনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে উচ্চ বেতনে একজন উদ্যমহীন, পদের অযোগ্য লোককে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। এ নিয়োগ বাণিজ্যে প্রায় ১ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে।
সাবেক প্রধান শিক্ষক হজরত আলীকে ছল চাতুরী করে এবং ভুয়া রেজুলেশন ও কাগজপত্র বানিয়ে চাকরি হতে বের করেন। সভপতির ধারাবাহিক অন্যায় কাজ কর্মের কারণে বর্তমান কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ এ কে এম মোকছেদুর মান এখন আর মিটিংয়ে আসেন না। কমিঠিন সদ¯্রদের মতে,সভাপতি অনিয়ম জালিযাত ও দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটির ধ্বংসের পথে ধাবিত হচ্ছে।
এছাড়া,প্রতিষ্ঠানের উত্তর পার্শ্বের গাছের বাগানে পরিপক্ব মেহগনি গাছসহ প্রায় ৫০টি গাছেল বাগান যথাযথ কর্র্তৃপক্ষর অনুমতি ছাড়া কাটা হয় এবং ৩/৪ লাখ টাকার গাছ মাত্র ১৫ হাজার টাকা বিক্রি দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমা প্রদান করা হয়। বাকী টাকা আত্মসাত হয়।
বিদ্যালয়ের টিনশেড ভবনের সর্বনি¤œ মূল্য ৫ পাঁচ লক্ষ টাকা হলেও নিয়ম নীতির পরোয়া না করে নামমাত্র মূল্যে প্রায় ১৩০ ফুট দৈর্ঘের টিনশেড ভবনটি বিক্রি করা হয়।
প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক/কর্মচারীকে দোকান বা অর্থকরী কোন বিশেষ সুবিধা প্রদান অবৈধ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীমালা সভাপতির নির্দেশে নিজ খরচে প্রতিষ্ঠানের উত্তর পাশের্ব বাউন্ডারী ওয়াল ভেঙ্গে দোকান করে। এ বাবাদ সভাপতি তার কাছ থেকে ১ লাখ ৫০হাজার টাকা নিয়ে তাকে এ সুবিধা দিয়েছেন।
এছাড়া ২০১৪ সাল হতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আয় ব্যয়ের কোন হিসাব নাই। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়Ñ এ তিন বছরে বিল ভাউচার ছাড়া এবং ভুয়া ভাউচার দিয়ে প্রায় ৫০ লাখ (পঞ্চাশ লক্ষ) টাকা আত্মসাত হয়েছে। হা¯œা হেনা পারভীনকে চাপ সৃষ্টি করে বিভিন্ন অজুহাতে সভাপতি টাকা তুলে নেয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্ব›দ্ব হলে ওই শিক্ষিকাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
এছাড়া সাবেক হেড মাস্টারকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া, তাকে অসম্মানিত করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া, আপিল আর্বিট্রেশন ও বিভিন্ন তদন্ত কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার নাম করেই সভাপতি ৮/৯ লক্ষ টাকা তুলেছেন। অক্টোবর/১৪ সালে ১ লক্ষ টাকা পুলিশকে দেয়ার জন্য এবং ২৭ জুলাই ব্যাংক থেকে তুলে ৫০হাজার টাকাসহ ১ লাখ টাকা আফিল আর্বিট্রেশনে ঢাকা বোর্ডে ঘুষ দেয়ার কথা বলে সভাপতি টাকা তুলে নেয়।
এছাড়া বর্তমানে বাধ্যতামূলকভাবে ৫ম, ৮ম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীদের কোচিং করতে হয়। কোচিং না করলেও ৬/৭শত টাকা দিতে হয়। এই টাকার সিংহভাগ সভাপতি গ্রহণ করেন বলে জানা যায়। এ বাবদ সে লক্ষাধিক টাকা প্রতি মাসে সে হাতিয়ে নেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি মাহমুদা ইদ্রিস কোন খতা বলতে রাজি হননি।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের যুগ্স সচিব সালমা জাহান স্বক্ষরিত এক পত্রে (৮/৭/১৭ তারিখে) এ ব্যপারে তদন্তের জন্য শিক্ষা বোর্ড, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থাকে অবহিত করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ