Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় শেষ হলো ডিএসসিসি’র প্রথম দফার হাট ইজারা প্রক্রিয়া

| প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 সায়ীদ আবদুল মালিক

নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে খোলা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের টেন্ডারবাক্স। অনেকটা গোপনিয়তা রক্ষা করে সাংবাদিকদের না জানিয়েই সম্পন্ন কারা হয়েছে প্রথম দফার এই টেন্ডার প্রক্রিয়া। খোঁজ নিয়ে দুয়েকজন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য নগরভবনে গেলেও তাদেরকে অডিটরিয়ামে বসতে দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। ডিএসসিসি’র ১৩টি অস্থায়ী হাটের টেন্ডারবক্স গত বুধবার দুপুরে খোলা হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার বিকার সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোন তথ্যই দিতে পারেনি সম্পত্তি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা বা বর্মচারি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, ওই বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারিদের কেউ-ই কোন কথা বলেননি। প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলামের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন প্রকার তথ্য দেয়া বা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে তাদেরকে বারন করে দেয়া হয়েছে বলে তারা জানান। গতকাল দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সম্পত্তি বিভাগরে নানা দফতরে চেষ্টা করেও এ বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলামের সাথে এ কিষয়ে কথা বলার জন্য তার সাথে দেখা করার জন্য তার দফতরের সামনে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও তিনি দেখা দেননি। সম্পত্তি কর্মকর্তার কড়া নির্দেশে কোন সাংবাদিক তার কক্ষে প্রবশ করতে না পারলেও দিনভর তার দফতর ছিল লোকেলোকারণ্য। অস্থায়ী হাট ইজারাদারদের তদবির ও বিভিন্ন ঠিকাদারদের খোশগল্প আর কাউন্সিলরদের দফায় দফায় তার কক্ষে আসা যাওয়া। এবং দফায় দফায় পোলাও, বিরিয়ানির উৎসবে তার দফতর ছিল উৎসবমুখর।
কোরবানির হাট ইজারার প্রথম দফার টেন্ডারবক্স খোলা ও এ নিয়ে কেন এত গোপনিয়তা, এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম দফতরে উপস্থিত থেকেও কথা বলেননি। পরে কয়েক দফায় তার ব্যবহৃত ০১৯১৬৬৬৪৪৪৪ এ নাম্বারে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা নির্ভিঘেœ পছন্দের প্রার্থীকে ও নিজেদেও মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে কোরবানির অস্থায়ী হাট ইজারার কাজ সম্পন্ন করাই হল এই গোপনিয়তার মূল কারণ। এ বছরও ক্ষমতাশীল দলের সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৩টি কোরবানির পশুরহাট। আর এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও। অভিযোগ উঠেছে, এ সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, বিভিন্ন যুক্তিক কারণে পুরান ঢাকার আরমানিটোলা হাট গত দুই বছর বন্ধ থাকলেও এবছর টেন্ডার আহŸান করা হয়েছে। এ হাটটির কারণে কোরবানির ঈদের সময় পুরান ঢাকা যানজটে কার্যত অচল হয়ে পড়ে। আর এ যানজটের প্রভাব পড়ে সারা ঢাকা শহরজুড়ে।
স্থানীয়দের আন্দোলন ও পত্র পত্রিকায় অনেক লেখালেখির পর গত দুই বছর ধরে আরমানিটোলা হাট হজারা দেয়া বন্ধ রয়েছে। এই একটি হাটের পরিবর্তে ওই এলাকার আশেপাশে গত দুই বছরধরে নতুন দুইটি হাট ইজারা দেয়া হচ্ছে। এখানে হাট বসানো হলে পুরান ঢাকাসহ সারা শহর ঈদের সময় যানজটে অচল হয়ে পড়ে। তারপরও কেন এখানে হাট ইজারা দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন কলেন ইনকিলাবকে, সবে মাত্র প্রথম দফার টেন্ডারবক্স খোলা হয়েছে। আরমানিটোলা হাট নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এ হাট ইজারা দিলে নগরবাসীর সমস্য হলে তা আমরা বিবেচনা করবো। তিনি বলেন, নগরবাসীল সমস্যা হয় এমন কোন কাজ আমরা করবো না।
অভিযোগ উঠেছে, সিন্ডিকেটের বাইরে কারও পক্ষে সিডিউল সংগ্রহ ও জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। ডিএসসিসি’র অস্থায়ী গরুর হাটগুলোর ইজারা ক্ষমতাসীনদের আয়ত্বে রাখতে নেয়া হয়েছে নানা কৌশল। এর মধ্যে একই ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন নামে-বেনামে নাম মাত্র মূল্য দিয়ে দরপত্র জমা দেয়। যে কারণে নিজেদের কাঙ্খিত দামে ইজারা পেতে সহজ হয়ে যায়। এতে সিটি কর্পোরেশন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে যাচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী হাটগুলোর সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে একই ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে একাধিক হাট। দরদাতাদের সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
গত বুধবার বিকেলে নগর ভবনের অডিটোরিয়ামে দরদাতাদের উপস্থিতিতে প্রথম দফার দরপত্র উন্মুক্ত করেন ডিএসসিসি’র প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। ডিএসসিসি’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ বছর ডিএসসিসি’র আওতাধীন ১৩টি কোরবানী পশুরহাটে বিপরীতে কতটি সিডিউল বিক্রি হয়েছে। কতটি জমা পড়েছে তার কোন তথ্যই জানা জায়নি।
এ বছর ঢাকা দক্ষিণের জন্য যে ১৩ হাটের অনুকুলে টেন্ডার আহŸান করা হয়েছে সেগুলো হলো: রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ লালবাগ। মেরাদিয়া বাজার খিলগাঁও। সাদেক হোসেন খোকা মাঠ। উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রীসংগের মাঠ। ধুপখোলার ইস্ট এন্ড ক্লাব মাঠ। গোপীবাগ ও কমলাপুর ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ। কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশে পাশের খালি জায়গা, রাস্তার পুর্ব পাশ। আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও আশে পাশের খালি যাগা (গুলিস্তান মাওয়া মহাসড়ক ও গুলিস্তান সদরঘাট সড়ক ব্যতীত)। পোস্তোগোলা শশ্মান ঘাট। কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যান বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ ঘেসে। ঝিগাতলা হাজারীবাগ ও দনিয়া কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গা, যাত্রাবাড়ি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ