Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাড়িভাড়া হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 


মো: শামসুল আলম খান ও এস.এম.হুমায়ুন কবির
ক্যাম্পাসে বিশাল বাঙলো থাকা সত্তে¡ও ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড.মোহিত উল আলম থাকেন রাজধানীর ধানমন্ডির বাসায়। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে মাস প্রতি ৫০ হাজার টাকা নিচ্ছেন ভাড়া বাবদ। যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া বাবদই অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন কমপক্ষে ২৩ লাখ টাকা।
এ ঘটনাকে আর্থিক দুর্নীতি ও নিয়ম বহির্ভূত বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা। এ সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক)। সুষ্ঠু তদন্ত হলেই ঘটনার সত্যতা মিলবে বলেও দাবি করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভিসির বাসভবনের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সুদৃশ্য ডুপ্লেক্স ভবন। সেখানে রয়েছে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা। পরিবার নিয়ে এ বাড়িতেই উঠেন ভিসি। আর প্রজ্ঞাপনের শর্ত অনুযায়ী সার্বক্ষণিক এখানেই থাকার কথা তার। এমনকি সরকারি নিয়ম মোতাবেক বাড়ি ভাড়া প্রাপ্য না হলেও শর্ত লঙ্ঘন করে রাজধানী ঢাকাতে মাসিক ৫০ হাজার টাকা ভাড়ায় বাড়ি নিয়েছেন ভিসি। বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে নিয়ম বহির্ভূতভাবে এ খাতে বিশাল টাকায় ব্যয়ভার বহন করছে। এ নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন উঠেছে।
সরেজমিনে গেলে ভিসির বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙলোর নিরাপত্তাকর্মী কায়কোবাদ জানান, ‘দুই বাড়ি মিলিয়েই ভিসি থাকেন।’ শোনা যায়, ঢাকা ধানমন্ডিতে ভিসি ড.মোহিত উল আলম যে বাসা ভাড়া নিয়েছেন সেটা তার নিজের ফ্ল্যাট। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে ২৫ লাখ টাকার আসবাবপত্র ও ইলেকট্টনিক্স সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসায়। একই সঙ্গে প্রতি মাসে স্টেশনারী, ডিশ বিল, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন খাতে মাসে ১৫ হাজার গ্রহণ করছেন। তার মেয়াদকালে এ খাতে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। অবশ্য এসব খাতে এমন খরচা করতে অর্থ কমিটি ও সিন্ডিকেটের অনুমোদনের তোয়াক্কা করেননি ভিসি অধ্যাপক ড.মোহিত উল আলম। নিজেই অনুমোদন করে মাসের পর মাস হাতিয়ে নিয়েছেন এ টাকা।
এ সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ হিসাবের ফাইল নোটের তালিকা মারফত জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার লিখেছেন, ‘ইতোপূর্বে ধার্যকৃত সুযোগ-সুবিধাগুলো এফসি’র (অর্থ কমিটি) মাধ্যমে অনুমোদিত ছিল। সেজন্য কমিটির মাধ্যমে প্রাপ্ত তালিকা এফসি কর্তৃক অনুমোদন প্রয়োজন কিনা মতামতের জন্য পরবর্তী ও ব্যবস্থা গ্রহণার্থে নথিতে প্রেরণ করা হলো’। কিন্তু ২০১৪ সালের ১৮ মে ভিসি কলমের এক খোঁচাতেই অর্থ কমিটিতে এ বিষয়টি যাবার কোন প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তার নির্দেশ অনুসরণ করতেও আদেশ দেন।
জানা গেছে, মোবাইলের বিল গ্রহণের ক্ষেত্রেও সরকারি নিয়ম নীতিকে রীতিমতো বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন করিৎকর্মা এ ভিসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকার স্থানীয় চাতক টেলিকম থেকে বিভিন্ন নম্বরে মোবাইল রিচার্জ বাবদ প্রতি মাসে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা করে হাতিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কারণে সমালোচিত ও বিতর্কিত সেকশন অফিসার জাকিবুল হাসান রনি বিল ভাউচারে এ টাকার অনুমোদন দিয়েছেন।
সূত্রমতে, বাড়ি ভাড়া কেলেঙ্কারী নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকার পরেও আবার অবৈধভাবে ঢাকায় ভ্রমণের জন্য ট্রাভেলিং অ্যালাউন্স (টিএ) বাবদ প্রতি মাসে কম করে হলেও ১০ হাজার টাকা করে গ্রহণ করেছেন তিনি। ভ্রমণ ভাতা বিল ফরম পূরণ করে এ খাতে আবার টাকার অনুমোদন দিয়েছেন ভিসি নিজেই। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের দাবি, যোগদানের পর থেকে এখন অবধি টিএ/ডিএ বাবদ অবৈধভাবে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা গ্রহণ করেছেন ভিসি অধ্যাপক ড.মোহিত উল আলম। অভিযোগকারী সূত্রের দাবি, এসবই নিয়ম বহির্ভূত।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার ড.হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ভিসি এসব ক্ষেত্রে নিজের স্বপক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন। এ প্রেক্ষিতেই কর্তৃপক্ষ সেগুলো অনুমোদন দিয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ভিসির বাসা ভাড়া আইন বহির্ভূত। আর এ বাসার জন্য যা কিছু কেনা হয়েছে সেগুলোও সম্পূর্ণ অনৈতিক। বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে তার জন্য স্পেশাল গাড়ি বরাদ্দ দিয়েছে সেখানে টিএ নেয়াটার কোন যৌক্তিকতা নেই। একই ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক এ.এ.এম.শামসুর রহমান বলেন, ‘ভিসি নিয়মমতো এ বাড়ি ভাড়া নিতেন পারে না। এগুলোর অডিট আপত্তি হবে। তখন নিয়মমতো টাকা ফেরত দিতে হবে। তবে অফিসিয়াল আদেশে ট্যুরে গেলে তিনি হয়তো ডিএ নিতে পারেন। সিন্ডিকেটের অনুমোদনের বাইরে ভিসি কোন খাতে টাকা নিতে পারেন না। এসব বিষয় নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
এসব বিষয়ে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড.মোহিত উল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকসহ বেশ কয়েকটি দৈনিকের সাংবাদিককে সাক্ষাত দেননি। তবে মোবাইলে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে অ্যাপয়নমেন্ট নিয়ে দেখা করতে আসতে হবে। আর কী কী বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে সেগুলো জনসংযোগ কর্মকর্তার মাধ্যমে আগে জানাতে হবে।

 

 



 

Show all comments
  • Abdullah Al Mahmood ২৮ জুলাই, ২০১৭, ৯:৫৮ পিএম says : 0
    Where is justice? Activities of all VC's, ex VC's of all Universities need to justify by UGC/MoE
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ