Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকায় গাড়ি হাঁটে মানুষ দৌড়ায়

| প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ আবু নোমান : যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, যা প্রতিবছর অর্থনীতিতে বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করছে। এ নজিরবিহীন তথ্য বিশ্বব্যাংকের। যানজটের জন্য মাত্রাতিরিক্ত অভিবাসন অনেকটাই দায়ী। মনে হয়, ঢাকা যেন মৌচাক, আর জনতা মৌমাছি। আর সেই মধুর লোভে পারলে ১৬ কোটি মানুষই ঢাকায় সেটেল হয়ে পড়ে! দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানীতে প্রতিদিন দলে দলে মানুষ আসছে কাজের খোঁজে। ঢাকা শহরমুখী অভিবাসনকে ঠেকানো ও বিকেন্দ্রীকরণ না করলে ঢাকার যানজট কমবে না। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে ঢাকার বাইরের বাংলাদেশটাকে নিয়ে ভাবতে হবে, যাতে সেখানে থেকে মানুষ ঢাকামুখী হতে বাধ্য না হয়।
গবেষণায় এসেছে, আর কয়েক বছর পরে ঢাকায় গাড়িতে করে চলতে হবেনা। গাড়ি হাঁটবে আর মানুষ দৌড়াবে। নয়তো উড়াল গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে ঢাকাবাসীকে! প্রত্যেকে নিজ বাড়ির ছাদের উপর থেকে উড়াল দেবেন, অফিসের ছাদে ল্যান্ড করবেন! কথাটি শুধু ‘রস’ করেই বলা নয়। বরং তীব্র যানজটের সময় গাড়ির আগে হেঁটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নগরবাসীর মোটেই নতুন নয়।
দেশের বড় বড় চেয়ারওয়ালারা শুধু বড় বড় কথা বলেই খালাস। এটা করা হবে, ওটা করা হবে, করছি, করবো...। এইসব শুনতে শুনতে কারোরই আর ভালো লাগে না। যেখানে ৫ বছরেও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার সম্পন্ন হয়নি, সেখানে আবার এমআরটি, বিআরটিএ, পাতাল রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হবে কিভাবে? একটি ফ্লাইওভার তৈরি হতে কেন এত সময় লাগছে তার কোনো ব্যাখ্যা জনগণ জানে না। কেন প্রতি বছর রাস্তা কেটে উন্নয়নের কথা বলে জনগণকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে? কেন বর্ষা ঋতুতে রাস্তা মেরামত করা হয়, একই রাস্তা কেন বারংবার মেরামত করা হয়? এসবের জবাবও কারো জানা নেই।
রামপুরা-বাড্ডা ও যাত্রবাড়ী থেকে কাজলা ৫ মিনিটের পথও না; যা সর্বোচ্চ ৬ দিনের কাজ অথচ ৬ মাসেও শেষ হচ্ছে না। রাজউক, ডেসা, ওয়াসা, ডেসকো আলাদাভাবে গড়ে ওঠা ও সমন্বয়হীনভাবে কাজ করায় কোনো লাভ হচ্ছে না। গত এক দশকে যানজটে অপচয় হওয়া সময় ব্যবহৃত হলে বাংলাদেশ বহু আগেই মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতো। যানজট অনেকগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত সমস্যার সামগ্রিক ফল। ইতোপূর্বে ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক জরিপে ঢাকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা শহরের মধ্যে দ্বিতীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
যানজট নিরসনে প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ। যানজট এখন রাজধানীবাসীর কাছে এক বিড়ম্বনার নাম। দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিচ্ছে এ ভয়ঙ্কর সমস্যা। যানজটের কারণে যে সময়ক্ষেপণ ঘটছে অর্থনীতির বিচারে তার ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ। এ সমস্যা উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত ও দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে অনিশ্চিত করে তুলছে। বিদেশিরা বাংলাদেশের রাজধানীকে অস্বস্তির দৃষ্টিতে দেখে যানজটের কারণে। বলা যেতে পারে, যেসব কারণে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বিঘিœত হচ্ছে যানজট তার অন্যতম। প্রায় ২ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ঢাকা মহানগরী ইতোমধ্যে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সমস্যাবহুল নগরী হিসেবে বদনাম কুড়িয়েছে।
বর্তমানে ঢাকার যানবাহনের গড় গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৪ কিলোমিটার। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা যদি বর্তমান গতিতে বাড়তে থাকে, ২০২৫ সাল নাগাদ গড় গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটারে নেমে আসবে, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কম। অথচ মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটারের উপরে। ২০৩৫ সালে ঢাকার জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৩ কোটি ৫০ লাখ হবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এমন জনসংখ্যার একটি নগরীর উৎপাদনশীলতা বাড়ানো গেলে তা অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেন। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধান করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন